স্টাফ রিপোর্টার :
পাহাড়–টিলা কাটা রোধে প্রশাসন সার্বক্ষণিক তদারকির নির্দেশ প্রদান করা হলেও থেমে নেই কার্যক্রম। নির্দেশনার পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও থেমে থেমে শুরু হয়েছে পাহাড়-টিলা কাটার হিড়িক। এসব পাহাড়-টিলা কাটার নির্দেশনায় রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। দিনে-দুপুরে পাহাড়-টিলা কাটা হলেও দেখার যেন কেউ নেই।
সিলেট নগরীর শাহপরান রহঃ থানাধীন সিসিক ৩৬ নং ওয়ার্ড বালুচর এলাকায় সেলিনা মেম্বারনির বাড়ির উত্তরের টিলা, মাখন মিয়ার বাড়ির পশ্চিমে। মাটির টিকাদার আলিম উদ্দিন, নঈম উদ্দিন- পিতা মৃত আছিল উদ্দিন। নাহিদুল মিয়া, লিমন মিয়া, সহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জন। রাতে ১২ টার দিকে ১০থেকে ১২ জন শ্রমিক টিলা কাটে। সমতল ভুমিতে ফেলে পরবর্তীতে ঠেলা বুঝাই করে অন্যস্থানে চুক্তির মাধ্যমে মাটি বিক্রি করে।
অনুসন্ধানে জানা যায় ৮ লক্ষ্য টাকা চুক্তিতে এই পাহাড় কাটা হচ্ছে। ২৪ এপ্রিল রাত ১২ টার পর থেকে পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে বালুচর আল্ ইসলাহ্ এলাকায়।
এদিকে ইউসুফ স্কুলের সংলগ্ন রাস্তায় রেজাউল করিমের টিলায় জোনাকি এলাকায় রাতভর রিপন মিয়া, রাহেল মিয়া, কেম্মান মিয়া, পিতা মৃত আক্কাস মিয়া, সিডিআই বাবুল মিয়া, ১৫ লক্ষ্য টাকা চুক্তিতে পাহাড় কাটছে বলে জানা যায়। শুক্রবার বিকাল ৩ ঘটিকায় সরেজমিনে নগরীর বালুচর, এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এসব স্থানে যে টিলা রয়েছে বেশিরভাগ টিলার অর্ধেক কেটে নেওয়া হয়েছে। এসব টিলা কেটে নিচেই নির্মাণ করা হচ্ছে ঘর।
এসময় কোন শ্রমিক বা মালিক দাবি করা কাউকে না পেলেও মাটিখেকোদের সমর্থনকারী অনেকেই উপস্থিত ছিলেন, পাহাড় কাটার ভিডিও চিত্র দারণ করার সময় রাহেল মিয়া, ও অজ্ঞাত ২ জন ব্যক্তি ভিডিও করতে আপত্তি জানায় এবং ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে আসে। আশপাশে বসবাসকারী কেউ মাটিখেকোদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করেনা।
সিলেট বিভাগের চার জেলায় বর্তমানে ১ হাজার ৮৭৫টি টিলা আছে। এসব টিলার আয়তন ৪ হাজার ৮১১ একর। চলতি বছর ও গত তিন বছরে ২৫টি মোবাইল কোর্ট ও ৮১টি এনফোর্সমেন্টের মাধ্যমে ৩ কোটি ১৯ লাখ ৬৮ হাজার ৩১৩ টাকা অর্থদণ্ড ও ক্ষতিপূরণ আরোপ করা হয়েছে। এসব অভিযানে ২১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এসব কিছুর পরও থামছে না টিলা কাটা বিগত বছরগুলোতে বেশিরভাগ টিলা কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। অর্ধেকেরও বেশি টিলা এখন অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে।
জোনাকী সামাজিক সংস্থার সভাপতি মোঃ জালালুদ্দিন জানান মদচ্ছির মিয়া লন্ডন প্রবাসীর পাহাড়ে
জাহাঙ্গীর মিয়া, সাজাঙীর মিয়া, আলমগীর মিয়া, হাসিম মিয়া, অজ্ঞাত ১০/১২ জন জোনাকী এলাকার পাহাড় কাটছে রাতের অন্ধকারে। আল ইসলাহ এলাকয় বালুচর তেমুখী দক্ষিণ পাশের টিলা কাটা হচ্ছে মুমিন মিয়া নামক জনৈক ব্যক্তির নেতৃত্বে।
আশপাশের মানুষের সঙ্গে কথা হলেও তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি। এরমধ্যে অনেকে জানান, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই এই কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রতিনিয়ত টিলা কেটে যাচ্ছেন। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে তারাও এসব কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন বলে তারা জানান।
এদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫৬ সালে ভূমির মাঠ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের ছয়টি উপজেলায় ১ হাজার ২৫টি টিলার অস্তিত্ব রয়েছে। এর বাইরে বেশ কিছু টিলা রয়েছে। এসবের মধ্যে শতাধিক টিলা পুরোপুরি বা আংশিক সাবাড় হয়ে গেছে।
সিলেটের পাহাড়-টিলা রক্ষায় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। দায়িত্বশীলদের অনেকেই পাহাড়-টিলা রক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করেন না। তাই কোনোভাবেই টিলা কাটা থামানো যাচ্ছে না।
টিলা কাটার ফলে মাটির উপরের স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, মাটির উপরের স্তরটি সাধারণত পুষ্টি সমৃদ্ধ হয়, যা কৃষি জমির উর্বরতা কমিয়ে দেয় এবং ফসল উৎপাদন কমে যায়। টিলা কাটা বনাঞ্চল ধ্বংস করে, যা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ায়। বনাঞ্চল কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন উৎপন্ন করে, যা জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। টিলা কাটার ফলে এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ায়। টিলা কাটা জলাধার ও নদীর প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, যা জল সংকটের কারণ হতে পারে। টিলা কাটার ফলে সৃষ্ট মাটি ও পাথরের ধ্বংসাবশেষ জলাধারে জমা হয়, যা জলাধারের ধারণক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং নদী খালবিল ড্রেনে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে স্থানীয় জনগণের জন্য জল সংকট দেখা দেয়, মানুষ চলাচলের রাস্তা ধ্বংসের মুখে পড়ে । টিলা কাটার ফলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে, কারণ অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদ তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল হারায়।
এলাকার সচেতন মহলের লোকেরা জানান,
টিলা কাটা বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে এবং যারা আইন লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণের মধ্যে টিলা কাটার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। স্কুল, কলেজ এবং বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালানো যেতে পারে । টিলা কাটা রোধে নিয়মিত তদারকি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
এব্যপারে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় মোঃ ফেরদৌস আনোয়ার পরিচালক এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,
৫ই আগস্ট ২০২৪ ইংরেজি পর থেকে কয়েকদিন পুলিশের কার্যক্রম বন্ধ ছিল, সে সুযোগ নিয়ে টিলা কাটা চক্র তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। আরেকটি বিষয় যারা এই পাহাড় কাটার কাজ করে তারা রাতের আধারে কাজ করে থাকে। আমরা যখন অভিযান পরিচালনা করি তখন তারা আগে থেকেই খবর পেয়ে সতর্ক হয়ে যায়, ফলে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের পাওয়া যায় না। কয়েকদিন ধরে পাহাড় কাটা নিয়ে সংবাদ পাচ্ছি এবং আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করে আসছি,পাহাড় টিলা কে বা কারা কাটছে টিলা কাটার যে চক্র রয়েছে সেই চক্রকে আমরা চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। টিলা কাটা রোধে আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত থাকবে!