সুনামগঞ্জে সুরমা ইউপির আসবাবপত্র হস্তান্তরের ঘটনায় ইউপি সদস্যা ও পুলিশের উপর হামলা
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জে সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের আসবাবপত্র হস্তান্তরের ঘটনায় ইউপি সদস্যা ও পুলিশের উপর হামলা করেছে বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যানের ভাতিজাসহ গ্রাম্য সন্ত্রাসীরা। সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেল ২টায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইব্রাহিমপুর গ্রামস্থিত অস্থায়ী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যেক্ষদর্শীরা জানান,সুনামগঞ্জ সদর থানায় একাধিক মামলায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা ও বরখাস্তকৃত ইউপি চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজার ব্যক্তিগত হেফাজতে থাকা পরিষদের আসবাবপত্র বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খুরশিদ মিয়ার কাছে হস্তান্তরের জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা জেরীন নির্দেশ দেন। কিন্তু বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা অফিসের আসবাবপত্র দেই দিচ্ছি করে সময় ক্ষেপন করার একপর্যায়ে বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে লন্ডনে পালিয়ে যান। ঘটনার দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্বাহী আদেশে এসআই রাশেদ এর নেতৃত্বে সদর মডেল থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানান্তরকৃত আসবাবপত্রের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন। এসময় পলাতক চেয়ারম্যানের পক্ষ নিয়ে তার ভাতিজা তাজুয়ার আফজাল শিহাব একদল সন্ত্রাসী নিয়ে পুলিশ দল এবং সংরক্ষিত ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যা মোছাঃ তানজিনা বেগমের উপর হামলা চালায় এবং ইউপি সদস্যার স্মার্টফোন কেড়ে নিয়ে ভাংচুর করে। এ ঘটনায় পুলিশ দল সন্ত্রাসী শিহাবকে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে চাইলে বিদেশে থেকে মোবাইল ফোনে আমির হোসেন রেজা পুলিশ দলের উপর হামলা করার জন্য তার গোত্রীয় লোকজনকে নির্দেশ দেন। পরিস্থিতির অবনতির সংবাদ পেয়ে সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আরিফ উল্লাহ,এসআই মাহমুদুল ও এসআই অভিজিৎসহ আরেকদল পুলিশ ঘটনাস্থলে দ্রæত ছুটে যান। এসময় সন্ত্রাসী শিহাব আমার বোনজামাই এএসপি,আমি র্যাবকে মেরে আহত করেছি,পুলিশ আমার কিছুই করতে পারবেনা বলে ইব্রাহিমপুর জামে মসজিদের সামনে গোত্রীয় লোকজনকে ঝড়ো করতে থাকে। পরবর্তীতে পুলিশ সদস্যরা তাকে গ্রেফতারের জন্য তার বাড়ীতে অভিযান চালালে সে পালিয়ে যায়। এসময় বাড়ীতে থাকা শিহাবের বোন (এএসপির স্ত্রী) স্বামীর দাপট প্রভাব খাটিয়ে সন্ত্রাসী ভ্রাতা শিহাবকে পুলিশের ধরপাকড় থেকে আড়াল করে দেয় এবং এএসপির সাথে মোবাইল ফোনে ওসি (তদন্ত)র সাথে আলাপ করায়।
পরিষদের সদস্যরা জানান,পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় সাবেক চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত হেফাজতে থাকা,১টি আলমারী,২টা সোকেস,১টা ক্যাবিনেট,৩টা ফ্যান,প্রিন্টার ১টি,মনিটর ২টি,সিপিইউ ১টা,চেয়ার কালো হাতল ৪টি,চেয়ারম্যানে চেয়ার ১টি,টেবিল ৫টি,প্লাষ্টিকের টেবিল ২টি,নোটিশ বোর্ড ১টি,অনার বোর্ড ১টি,পর্দা ৪টি,পতাকা ১টি,পতাকার স্ট্যান্ড ১টি,সিলিং ৫টি, সিলিং থাই,২ থাক বই,প্লাষ্টিকের মোড়া ২টি,ঝুড়ি ২টি,বালতি ও মগ ২টি,রেক ১টি,পলাষ্টিক চেয়ার ১০টি,কলস সিলভার ১টি,চালের ড্রাম ১টি,হাতাওয়ালা চেয়ার ৯টি,ষ্টেবিলাইজার ১টি,মাউস ২টিসহ পরিষদের আসবাবপত্র উদ্ধার করে আমরা হালুয়ারঘাট বাজারস্থ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়েছি। আরো অনেক মূল্যবান মালামাল বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যানের হেফাজতে রয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন,চেয়ারম্যানের ভাতিজা একবার বা দুবার নয় একাধিকবার আমরা পরিষদের সদস্য সদস্যাদের উপর বর্বরোচিত হামলা করেছে। কিন্তু প্রভাবশালী এএসপির শ্যালক হওয়ায় আমরা পুলিশের কাছে কোন ন্যায়বিচার পাচ্ছিনা সন্ত্রাসী শিহাবের বিরুদ্ধে।
সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ খুরশিদ মিয়া বলেন,বরাখাস্তকৃত চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করে সরকারী খাস খতিয়ানের জায়গার মাটি রাতের আধারে চুরি করে অন্যত্রে বিক্রি করত: সরকারের সম্পত্তির অপূরনীয় ক্ষতিসাধনের ঘটনায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা মোঃ নুর আলী বাদী হয়ে জিআর মামলা নং ৪৭/২০২৪ইং (সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার মামলা নং ২০ তাং ১৫/০২/২০২৪ইং) দায়ের করেছেন। সদর কোর্টের উক্ত মামলায় সদর মডেল থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রিয়াজ উদ্দিন কর্তৃক দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নং ৮৭ তাং ৩১/০৩/২০২৪ইং ধারা ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ইং এর ১২ ও ১৩ ধারা,বিজ্ঞ আদালত গ্রহন করে ঐ মামলাটিকে বিচারের জন্য বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে প্রেরণ করেন। গত ৫ মার্চ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশে তাকে সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ হতে তাকে সাসপেন্ড করা হয়। অন্যদিকে চেয়ারম্যানের ভাতিজা শিহাবকে ভারতীয় মালামালসহ গ্রেফতার করে র্যাব-৯ সুনামগঞ্জ-৩ এর টহলদল। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খুরশিদ মিয়ার উপর হামলা ও লুটতরাজের মামলাসহ বর্তমানে একাধিক মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে সন্ত্রাসী শিহাব।
ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর থানার ওসি মোঃ আবুল কালাম বলেন,পরিষদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হলে সন্ত্রাসী যেই হউকনা কেন তার বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
##