চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশী ইউনিয়নের বহুল আলোচিত শাহীন নার্সারী। উপজেলার দু’চারটি নার্সারীর মধ্যে অন্যতম এই পুরাতন নার্সারীটি। চুনারুঘাট পৌর শহরের খোয়াই নদীর পূর্ব দিকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ পেরোলেই হরিহরপুর গ্রামের পড়াঝার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে এই নার্সারির অবস্থান। প্রায় ৩শত বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা নিয়ে প্রকৃতি প্রেমী ও বৃক্ষরোপণ উৎসাহীদের জন্য এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। এখানে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, মাল্টা, কমলা সহ বিভিন্ন পরিচিত ফলের গাছ তো রয়েছেই, পাশাপাশি রয়েছে নানান ধরনের বনজ ও ঔষধি গাছের চারা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই সবুজ বিপ্লব আসলেই দৃষ্টি নন্দন।
শাহীন নার্সারির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এখানে পাওয়া যায় উন্নত মানের বিভিন্ন কলমের চারা। ফলনশীল ও রোগমুক্ত চারাগাছের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে এটি স্থানীয়দের কাছে সুপরিচিত। এই সবুজ বাগানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আব্দুর শাহীন এর বাবা প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক। ১৯৯২ সালে সরকারি চাকরির পাশাপাশি তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে এই নার্সারি গড়ে তোলেন। ২০১৭ সালে অবসর নেওয়ার পর এই নার্সারিকে আরও বড় পরিসরে বিস্তৃত করার সুযোগ পান। ২০২০ সালে হঠাৎ স্টোক জনিত কারণে তিনি মারা যান। পিতার রেখে যাওয়া এই সবুজ স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন তার বড় ছেলে শাহীন আলম। পিতার হাতে লাগানো প্রতিটি চারা গাছকে তিনি পরম মমতায় পরিচর্যা করছেন এবং নার্সারিটিকে আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। চুনারুঘাট উপজেলায় সর্বপ্রথম নার্সারি স্থাপনের পথিকৃৎ ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। তার এই সাহসী উদ্যোগ স্থানীয় কৃষি এবং পরিবেশের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। উন্নত মানের চারা উৎপাদনের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি চুনারুঘাট বৃক্ষ মেলা ও কৃষি মেলাতে বহুবার প্রথম স্থান অধিকার করেছেন, যা শাহীন নার্সারির সুনামকে আরও সুদৃঢ় করেছে। নার্সারির বর্তমান কর্ণধার শাহীন আলম তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, “আমার বাবার হাতে গড়া এই নার্সারি আমার কাছে শুধু ব্যবসা নয়, এটা আমাদের পরিবারের ঐতিহ্যের একটা অংশ। আমি চেষ্টা করছি বাবার স্বপ্নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে। যেখানে মানুষ এসে গাছের পরিচর্যা ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবে। নার্সারী নিয়ে স্হানীয় সংবাদকর্মী মোঃ মিজানুর রহমান বলেন এই নার্সারীটি আসলেই মান সম্মত।আমাদের এলাকায় এত সুন্দর ও সমৃদ্ধ একটি নার্সারি থাকাটা একটা গর্বের বিষয় ও বটে। তিনি বলেন,আমি প্রথমে প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের কাছ থেকে প্রথমে লিজুর চারা নিতে এসে এই নার্সারীর সাথে পরিচিত হই। এর থেকে আমি ও আমার স্বজনদের যত ধরনের চারার প্রয়োজন এই নার্সারী থেকে সংগ্রহ করার পরামর্শ দেই। চুনারুঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহিদুল ইসলাম জানান চুনারুঘাট উপজেলায় ৯টি নার্সারী রয়েছে তার মধ্যে শাহীন নার্সারীর গুনগত মান প্রশংসনীয়। চুনারুঘাট কৃষি কাজ করে লাভবান হওয়ার মতো প্রচুর সুযোগ রয়েছে। শাহীন নার্সারী থেকে চারা সংগ্রহ করে অনেকের বাড়ীর আঙ্গিনা বিভিন্ন টিলা জাতীয় জমিতে ফলের বাগান করে লাভবান হতে পারবেন। তিনি বলেন হবিগঞ্জ কিংবা সিলেট থেকে যাতায়াতের খরচ বাচিয়ে শাহীন নার্সারী থেকে চারা সংগ্রহ করার পরামর্শ প্রদান করেন।