অধ্যাপক আব্দুর রাজজাক (রাজু)গবেষক ও লেখক :
আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ছিলেন মধ্যযুগের বাংলার স্বাধীন সুলতান। হাফসি সুলতান সামসুদ্দিন মোজাফফর শাহ নিহত হওয়ার পর তার প্রধান উজির আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সুলতান হন।তিনি সফলতার সঙ্গে দীর্ঘ সময় বাংলার মশনদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার সময় বাংলায় সর্বোচ্চ মুসলিম স্থাপনা নির্মিত হয়।আলাউদ্দিন হোসেন সাহের আসল নাম ছিল সাইদ হোসেন। তিনি তিরমিজের বাসিন্দা ছিলেন।মক্কা শরীফের উচ্চ বংশীয় সাঈদ আশরাফুল হুসাইন আল ফাতেমী আল মাক্কির পুত্র ছিলেন।তিনি ভারতবর্ষের মুর্শিদাবাদ জেলার চাঁদপাড়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। ১৪৯৪ সনে হোসেন শাহ কর্তৃক স্থাপিত খেরুয়া মসজিদ ও একটি বৃহৎ জলাশয় শেখের দিঘী এই চাঁদপাড়া গ্রামে অবস্থিত।
(গোলাম হোসেন সলিম, রিয়াজ উস সালেতিন) তার পুত্র নাসির উদ্দিন নুসরত শাহ ১৫১৯- ১৫৩৩খ্রীঃ নাতি আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ ১৫৩৩-১৫৩৩ খ্রিষ্টাঃতার পুত্র গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহ ১৫৩৩-১৫৩৮খ্রী প্রর্যন্ত বাংলার মসনদে সুনামের সঙ্গে অধিষ্ঠিত ছিলেন।আলাউদ্দিন হোসেন সাহেব শাসন আমল কে বাংলার স্বর্ণযুগ বলে অভিহিত করা হয়।সূত্র মোহাম্মদ কাসেম হিন্দু শাহ।তার বংশের চারজন রাজা তার দেখানো পথে ৪৫ বৎসর প্রজন্ত বাংলার মসনদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তারা সকলে হোসেন শাহ কর্তৃক অনুসৃত নীতি অনুসরণ করেন।(সুখময় মুখোপাধ্যায়)
প্রাক- মুঘল যুগে হোসেন শাহী আমল বাংলাদেশের স্বর্ণযুগ। আলাউদ্দিন হোসেন শাহ একজন অসাধারণ প্রতিভা সম্পূর্ণ লোক ছিলেন। তার সময় বাংলার সীমানা চতুর্দিকে বিস্তৃত হয়।তার সময়ের অনেক ঐতিহাসিক কীর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে।(প্রফেসর আব্দুল করিম)তার মোট স্থাপনা নির্মাণঃ
সুলতান হোসেন শাহের আমলে উৎকির্ণ শিলা লিপি থেকে জানা যায় যে তিনি রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে মসজিদ, মাদ্রাসা, ফটক, খানকা, জলাশয়, দুর্গ, প্রভৃতি নির্মাণ করেছিলেন।তার আমলে মোট স্থাপনাঃ বর্তমান পর্যন্ত মোট ৫৪ টি শিলালিপির পাঠ উদ্ধার করা হয়। তন্মধ্যে ৩৭টি মসজিদ,দুইটি সমাধি,একটি পুল, দুটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান, একটি মাদ্রাসা,তিনটি জলাশয়, ও ছয়টি ফটোক, নির্মাণ করেন।যায়গা নির্দেশনাঃ মসজিদ গুলি নির্মাণ করা হয়,পুরাতন মালদা (ফুটি) মুর্শিদাবাদে ফেরাউল (উমারগ্রামে) নওগাঁ জেলার মান্দা থানার কুসুম্বাতে, ঢাকার সরাইল, সোনার গায়ের গোয়ালদি, ধামরাইয়ে, বিহার রাজ্যের ভাগলপুরে, দিনাজপুরের দেবকোটে শাহ আতার দরগা,(গৌড়ের) চাঁপাই নবাবগঞ্জের ছোট সোনা মসজিদ,প্রভৃতি। উল্লেখযোগ্য।ঐতিহাসিক শামসুদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন কুসুম্বা মসজিদ নির্মাণ।আলাউদ্দিন হোসেন সাহেব আমলে তিনি যে ৩৭টি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম কুসুম্বা মসজিদ এই মসজিদটি তা রাজকর্মচারী ও সেনাদক্ষ মোঃ সবুর খান বা সোলাইমান খান কুসুম্বা মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদে দৈর্ঘ্য ৫৮ ফুট (১৮মিটার)।প্রস্থ ৪২ ফুট (১৩ মিটার)।মাহমুদুল হাসান,বাংলার ইতিহাস দৃষ্টব্য বাংলা সাহিত্যের তার পৃষ্ঠপোষকতা বিদ্যানুরাগ ও মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বকালে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির এক নবযুগের সূচনা হয়। এবং হিন্দু ও মুসলমানের মিলনের যোগসূত্র তৈরি হয়।তার উৎসাহে মালাধর বসু “ভগবত গীতা” ও কৃত্তিবাস “রামায়ণের” সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন।কোবিন্দ পরমেশ্বর “পাণ্ডব বিজয়” রচনা করেন ও “মহাভারত” সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন।
কবি শ্রীকর নন্দী মহাভারতের” কয়েকটি সংস্করণ বাংলায় রচনা করেন।কবি বিজয় গুপ্ত “মনসামঙ্গল,পদ্ম পুরাণ, মনসা বিজয়” রচনা করেন। যশোরাজ খাঁন বৈষ্ণব পদাবলী রচনা করেন। ভিন্ন ধর্মমতের এই সকল সাহিত্যের উদার পৃষ্ঠপোষকতা আলাউদ্দিন হোসেন শাহ কে সমাজের উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করে।
হোসেন শাহের সমাধি
কৃর্তীমান পুরুষ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ১৫৩০ সনে ইন্তেকাল করেন। গৌড়ে আলাউদ্দিন হোসেন সাহেব নিজের কবরে একটি অনিন্দ্য সুন্দর টালি দ্বারা নির্মিত স্হাপনা ছিল।পরে ১৯৭১ সনে দূরাত্মা ক্যাপ্টেন আদম সমাধিটি ধ্বংস করেন।দুই বাংলা সহ আসাম ও বিহারের মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, এতিমখানা, সরায় খানা, পথিকের দৃষ্টিকাড়ে দানবীর আলাউদ্দিন হোসেন শাহের কথা মনে করিয়ে দেয়।