সুনির্মল সেন :
বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ রয়েছে— তারা অপরাধী গ্রেফতারের নামে অনেক সময় নীরিহ নাগরিকদের হয়রানি করে থাকেন। সোর্স নির্ভরতাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দুর্নামগ্রস্থ করে। এমন অভিযোগ যে— অমুলক নয় তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। প্রশ্ন হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন এমন ভাবে কাজ করে!
অনুসন্ধানে দেখা যায়, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে আইন প্রয়োগে বা অপরাধীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সংবাদদাতা (তথাকথিত সোর্স) বা ইনফর্মারের উপর নির্ভর করতে হয়।
এক জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই সোর্সরা থাকে দাগী অপরাধী চক্রের সদস্য, মাদকাসক্ত বা চরম দারিদ্র্য—পীড়িত। কোথাও অপরাধী চক্রের ভয়ে, কখনও মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে বা দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বিভ্রান্ত করে, ভুল তথ্য দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে এরা গ্রেফতার করায়, হয়রানী করায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে নিজ স্বার্থে মাদকদ্রব্য বা অস্ত্র দিয়ে নিজ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন কাজকে ভদ্র, মার্জিত ভাষায় অনেকে ফিটিং কেইস বলে অভিহিত করে থাকেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রকৃত অপরাধীর পরিবর্তে নিরপরাধ মানুষকে গ্রেফতার ও হয়রানীর কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জনগণের বন্ধুর স্থলে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। আর এদিকে প্রকৃত অপরাধী আইনের আওতায় না আসায় অপরাধের মাত্রা সমাজ, রাষ্ট্রে বাড়তে থাকে।
সমাজ বিশ্লেষক বা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ গুলো যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালন করলে— অপরাধীদের গতিবিধি লক্ষ্য করলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলোকে সোর্স নামক বস্তুর উপর নির্ভর করতে হতো না এবং দেশের নিরপরাধ মানুষজন হয়রানির শিকার হয়ে নিঃস্ব হতে হতোনা। তাদের মতে, এ প্রক্রিয়ায় এখন জনগণ যেভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে প্রতিপক্ষ ভাবে সে দৃশ্যপট পাল্টে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো জনগণের বন্ধু হয়ে উঠত। আর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও জনগণের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সমাজে অপরাধ নির্মূলে এক যুগান্তকারী অবদান রাখতো।
জনগণ আশা করেন— আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সোর্স নামক দানবের উপর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলোর নির্ভরশীলতা দূর করতে বাস্তবতার আলোকে কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।