ফারুক মিয়া দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
দোয়ারাবাজারে উর্বর দুই-তিন ফসলি জমির টপ সয়েল (জমির উপরিভাগের মাটি) কাটার ধুম পড়েছে।আর্থিকভাবে সাময়িকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় অনেক কৃষক তাদের জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন, উৎসাহ দিচ্ছে একপ্রকার দালাল শ্রেণির মানুষ। ফসলি জমির পাশাপাশি রাস্তা ঘাট ভেঙে মানুষ ও যান চলাচল বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়কৃষি বিভাগ উপজেলা কৃষি অফিসার ও স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ভুজনা, বাংলাবাজার ইউপি, লক্ষিপুর ইউপি, মান্নারগাঁও ইউপি ও সদর অঞ্চলের অধিকাংশ জমিই উর্বর পলি মাটি সমৃদ্ধ।
এসব জমিতে বছরে দু’টি মৌসুমে বোরো,আমন ধান, সরিষা, রসুন ও শীতকালীন সবজি ব্যাপকভাবে উৎপাদন হয়।কিন্তু কিছু অসাধু মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এসব জমির টপ সয়েল কিনে নিচ্ছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর ইউপি, মান্নারগাও ইউপি, পান্ডারগাও ইউপি ও লক্ষিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দুই বা তিন ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রির হিড়িক পড়েছে। বড় বড় ট্রলিও ট্রাকে এসব মাটি পরিবহনেরসময় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটও।নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে এসবরাস্তায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ি মাটির ব্যবসা করেন। তারা কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে জমির এক থেকে দেড় ফুটমাটি কিনে নিয়ে চড়া দামে ইটভাটা সহ বাড়িঘরে বিক্রি করেন।এছাড়া বাড়ি তৈরিতে মাটি ভরাট প্রয়োজন হলেও অনেকে এসব মাটি ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হন। অল্প সময়েই মাটি ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
হক ওয়ান ইঁট ভাটার কর্মরত ম্যানেজার কাজল চন্দ্র দাস জানান, কার্তিক মাসে মাটি সংগ্রহের মাধ্যমে ইটভাটার কার্যক্রম শুরু হয়।ইট তৈরির জন্য বিভিন্ন এলাকার উঁচু জমি থেকে মাটি সংগ্রহ করা হয়।আমাদের এলাকার বেশির ভাগ ইটভাটা উঁচু চিমনি ব্যবহার করায় পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ মহসিন বলেন, টপ সয়েল জমির প্রাণ।জমির উপরের আট থেকে ১০ ইঞ্চিই হলো টপ সয়েল আর ওই অংশেই থাকে মূল জৈবশক্তি।কৃষকরা জমির টপ সয়েল বিক্রি করে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছেন।মাটি বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে তারা জমির উর্বরা শক্তিই বিক্রি করে দিচ্ছেন।জমির এ ক্ষতি ১০ বছরেও পূরণ হবে না।তিনি আরও বলেন, যেভাবে মাটি বিক্রি হচ্ছে তাতে করে ফসল উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেতে পারে।
এ বিষয়ে কথা হয় জমির মালিক উপজেলার মান্নারগাও ইউনিয়নের আছদ্দর আলী,ফারুক, শহীদুলসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে।তারা জানান, জমির উপরের অংশথেকে দু-এক ফুট পরিমাণ মাটি তারা বিক্রি করছেন।এতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। জমির মাটি কেটে নিলে ফসল আরও ভালো হবে বলেও মনে করেন কৃষকেরা।
মান্নারগাও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইজ্জত আলী তালুকদার বলেন, জমির মাটি কে বা কারা বিক্রি করেন তা আমাদের জানা নেই। তবে স্থানীয় প্রশাসন মাটি কাটার বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।
জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু জানান, মাটি কাটার বিষয় আমার জানা নেই, গোপনে মাটি বিক্রি করছেন কৃষকেরা। এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবাদি জমির মাটি বিক্রিতে সচেতন হতে হবে কৃষকদের।