বিশেষ প্রতিনিধি :
কালিহাতীতে ভাইয়ের অসুস্থতায় পাঁচ ভাই একত্রিত, পারিবারিক ঐক্যের নজির স্থাপন। শুক্রবার (১৮ জুলাই )রাত পৌনে আটটায় কালিহাতি উপজেলা দিন বাগড়া গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ শফিকুল ইসলামের বাসভবনে পাঁচ ভাইয়ের এই মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
সৈয়দ মহসীন হাবীব সবুজ (৫৬), একজন পেশাদার সাংবাদিক। সম্প্রতি তিনি ঋতু পরিবর্তনের ফলে ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হন। তবে শারীরিক এই সাময়িক অসুস্থতা থেকে তৈরি হয় এক চিরন্তন পারিবারিক মিলনের অনন্য মুহূর্ত। পাঁচ ভাই ও চার বোন মিলে পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং পারস্পরিক ভালোবাসার এক অঙ্গীকারে মিলিত হন – যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তারা একসাথে পথ চলার অঙ্গীকার করেন।
পরিবারটির মা ফেব্রুয়ারি মাসে এবং বাবা জুন মাসে ইন্তেকাল করেন। একইসঙ্গে পরিবারের মেঝ ভাবীও জুন মাসে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। তাছাড়া এ পরিবারের বড় জামাতাও তার দু’ছেলে ও এক মেয়েকে MBBS অর্থাৎ তিন ছেলে মেয়েকেই ডাক্তার বানানোর পর দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। এসব শোকের মধ্যেও পরিবারটি তাদের প্রিয়জনদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি ও জুন মাসে স্মরণসভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ উপলক্ষে সকল ভাই-বোন ও আত্মীয়দের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা দেয়া হয়। পরিবারের এ মিলনমেলায় আলোচনা হয়, ভবিষ্যতে যেকোনো বিপদ-আপদ কিংবা অসুস্থতায় সকলে যেন মিলেমিশে পাশে থাকেন। কোরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।” (সূরা হুজরাত, আয়াত ১০) এ আয়াতের আলোকে ভাই-বোনরা একমত হন যে, শুধু রক্তের সম্পর্ক নয়, পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধই পারিবারিক বন্ধনকে আরও মজবুত করে।
অনুষ্ঠানে পরিবারের চার বোন ও চার জামাতার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। বিশেষ করে বোনদের আন্তরিকতা, পরিবারিক বন্ধনে অবদান ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখে তাঁদের জন্য ‘ভিআইপি আপ্যায়ন’-এর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এটি একধরনের সম্মাননা, যা পারিবারিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“তোমরা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করো না। যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”(সহীহ মুসলিম) এই হাদিসকে সামনে রেখেই সৈয়দ মহসীন হাবীব সবুজ ও তাঁর পরিবার এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হন, যাতে পারিবারিক বন্ধন শুধু রক্তের সম্পর্ক নয়, বরং তা হয়ে ওঠে ঈমান, মূল্যবোধ ও মানবিকতার বন্ধনে দৃঢ়তর। এ মিলনমেলা শুধু একটি পারিবারিক পুনর্মিলনী নয়, বরং একটি অনুপ্রেরণামূলক সামাজিক বার্তা — যেখানে ধর্মীয় শিক্ষা, মানবতা ও পারস্পরিক ভালোবাসার অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটেছে।