কুমিল্লা প্রতিনিধি :
কুমিল্লা মুরাদনগর কোম্পানীগঞ্জ বাস টার্মিনাল’র আধিপত্য ও চাঁদা দাবীকে কেন্দ্র করে দেবীদ্বার ও মুরাদনগরের দু’পক্ষের মধ্যে দিনভর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ৩টি বাস কাউন্টার ও ২০ টি দোকান ভাংচুর ওলুটপাটের ঘটনা ঘটে। এসময় অন্ততঃ ১০-১২ জন আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি ঘটে (১৮ জুলাই) শুক্রবার জুম্মার নামাজ চলাকালে। সংবাদ পেয়ে দেবীদ্বার ও মুরাদনগর থানা পুলিশ এবং সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। রাত ৮ টায় এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত উভয় ঘটনাস্থলে থমথমে বিরাজ করছে বলে জানা যায়।
স্থানীয়রা জানান, কুমিল্লা- সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাস টার্মিনালের ‘ফারজানা কাউন্টার’র পরিচালক ভিংলাবাড়ি গ্রামের ( মো: আল আমিন(৪০)এর নিকট মুরাদনগর উপজেলার বাখরনগর গ্রামের কিছু সশস্ত্র সন্ত্রাসী, বাস কাউন্টার চালাতে হলে তাদের মাসে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দেয়ার দাবী জানান। আল আমিন চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে, শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় বাখরনগর গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী বিভিন্ন মরনাস্ত্র নিয়ে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় এক রনক্ষেত্র তৈরী হয় এবং সড়কের উভয় পাশে যান ও মাল পরিহনের দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে দু’পক্ষ ভাগ হয়ে, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ গোমতী নদীর ব্রীজের দক্ষিণপাড়ে দেবীদ্বার উপজেলার ভিংলাবাড়ি গ্রামের লোকজন এবং গোমতী ব্রীজের উত্তরপাড়ে মুরাদনগর উপজেলার বাখরনগর গ্রামের লোকজন অবস্থান নেয়।
এসময় বাখরনগরের সশস্ত্র হামলাকারীরা কোম্পানীগঞ্জ বাস টার্মিনাল ও বাজার নিয়ন্ত্রনে নিয়ে বাস কাউন্টার ও বাজারের দোকানপাঠে হামলা, ভাংচুর ও গণলুটপাট চালায়। হামলাকারীরা ফারজানা বাস কাউন্টার” ফারহানা বাস কাউন্টার” হানিফ বাস কাউন্টার” সহ বেশ কয়েকটি বাস কাউন্টার ভাংচুর এবং কোম্পানীগঞ্জ বাজারের পৈয়াপাথর গ্রামের আব্দুল আলীমের দোকানসহ অন্তত ২০টি দোকান লুটপাট, ভাংচুর ও কুপিয়ে পিটিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করে সন্ত্রাসীরা
‘ফারজানা কাউন্টারের পরিচালক ” আল আমিন(৪০)জানান, আমাদের ‘ফারজানা বাস কাউন্টারের অধিনে প্রায় ৯৩৮ জন শ্রমিক রয়েছেন। আমি তা নিয়ন্ত্রণ করি। গত কাল বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাত সোয়া ৯টায় বাখরনগর গ্রামের ২০/২৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাস কাউন্টারে এসে আমাকে হুমকী দিয়ে বলেন, বাস কাউন্টার চালাতে হলে, তাদের মাসে ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হবে। না হয় কাউন্টার চালাতে পারবনা বলে জানায়। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে বেধরক মারধর করে, আমাকে বাঁচাতে আসা কয়েকজন শ্রমিকও তাদের মারধরের শিকার হন। আমি দৌড়ে পালিয়ে জীবন বাঁচাই। ওই ঘটনায় আজ (১৮ জুলাই) শুক্রবার সকালে মুরাদনগর থানায় বাখরনগর গ্রামের মো. সোহেল ৩০) নাঈম(২৫) উজ্জল(৩০), রাজামিয়া(২৬) ও শ্যাম্পু(২৮)সহ ১১ জনকে এজহার নামীয় ও অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে অভিযুক্ত করে একটি অভিযোগপত্র থানায় জমা দেই। ওই ঘটনায় আজ জুম্মার নামাজের সময় প্রায় ২/৩ শত সশস্ত্র সন্ত্রাসী এ অতর্কীত হামালা ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। আমার কাউন্টারে রক্ষিত ৩০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
কোম্পানীগঞ্জ ‘সাফল্য বহুমূখী সমবায় সমিতি’র সাধারন সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, বাখরনগর গ্রামের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ‘সাফল্য বহুমূখী সমবায় সমিতি’র কার্যালয় ভেঙ্গে নগদ ৫ লক্ষ টাকা লুট ও গুরুত্বপূর্ণ ফাইল কাগজ পত্রাদী নিয়ে যায়। কোম্পানীগঞ্জ বাস টার্মিনালের বিভিন্ন পরিবহনের অধিকাংশ গাড়ির মালিক দেবীদ্বার ভিংলা বাড়ি গ্রামের। এছাড়াও ঐতিহ্যবাহী কোম্পানীগঞ্জ বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ি দেবীদ্বারের। তাই বাখরনগরের সশস্ত্র হামলাকারীরা বাস কাউন্টার, বাজারের দোকানপাঠ ভাংচুরসহ লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।
এ ব্যপারে দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুদ্দীন মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, বাস টার্মিনালের আধিপত্য ও চাঁদাবাজী নিয়ে দেবীদ্বারের ভিংলাবাড়ি ও মুরাদনগরের বাখরনগরের লোকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান জানান, সিম্পল ঘটনা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। আগামীকাল (১৯ জুলাই) উভয় পক্ষকে ডেকে এনে সৃষ্ঠ সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে ”