শিরোনাম
চুনারুঘাটে অপহরণ নাটকের রহস্য ফাঁস: পুলিশ তদন্তে চমকপ্রদ তথ্য উদঘাটন কানাইঘাট থানা পুলিশ কর্তৃক ওয়ারেন্টভূক্ত ০৪ জন ও নিয়মিত মামলায় ০৩ জন সহ মোট ০৭  গ্রেফতার  দিরাইয়ে ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহনে কবিতা আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা সম্পন্ন   ঝিনাইগাতী আশ্রয়প্রকল্পের বাসিন্দাদের নিয়ে গ্লোবাল টেলিভিশনের ৩য় বর্ষপূর্তি উদযাপন সুনামগঞ্জে ঝাঁক ঝমকপূর্ণভাবে গ্লোবাল টেলিভিশনের ৩য় বর্ষপূতি উদযাপন জগন্নাথপুর উপজেলা ও পৌর শাখার পুজা উদযাপনের কমিটি অনুমোদন প্রদান সুনামগঞ্জের শাল্লায় পুকুরের পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি মোটর চালক দল সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লা উপজেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের বাগানবাড়ি এলাকায় বিজিবি”র অভিযানে ২ মানব পাচারকারীসহ ৬ জন আটক কাশিমপুরে পারিবারিক কবরস্থান দখলে মানববন্ধন ভুক্তভোগী পরিবারের। 
শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ১২:২১ অপরাহ্ন

চুনারুঘাটে অপহরণ নাটকের রহস্য ফাঁস: পুলিশ তদন্তে চমকপ্রদ তথ্য উদঘাটন

স্টাফ রিপোর্টার / ৩৬ Time View
Update : শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫

মোঃ জসিম মিয়া চুনারুঘাট প্রতিনিধি:

জমি বিরোধের জের ধরে সাজানো অপহরণ নাটকের খেলায় মাঠে নামেছিল একটি পরিবার। অভিযোগ, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গোপনে পরিকল্পনা করা হয়েছিল এই নাটক। তবে পুলিশের তদন্তে ধরা পড়ে যায় পুরো ষড়যন্ত্রের চিত্র।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার আলোনিয়া এলাকার আব্দুল মন্নান চৌধুরীকে গত ১৩ জুন রাতে অপহরণ করা হয়েছে বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁর মেয়ে শাহিনা আক্তার। মামলায় ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। শাহিনা দাবি করেন, জমি বিরোধের প্রতিপক্ষ জিতু গংয়ের লোকজন তাঁর বাবাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়।

ঘটনাকে আরও নাটকীয় করতে ২৪ জুন চুনারুঘাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শাহিনা। সেখানে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবাকে ফেরত চান বলে আবেগী বক্তব্য দেন। তাঁর কথায় ও অভিনয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হন, এমনকি স্থানীয় সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও প্রথমে বিষয়টিকে সত্য বলে মনে করেছিলেন।

মামলাটি পুলিশের সন্দেহ বাড়ায়। তদন্তে নামে চুনারুঘাট থানা পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা আব্দুল মন্নান চৌধুরীর অবস্থান খুঁজে বের করে। জানা যায়, তিনি কোনো অপহরণের শিকার হননি, বরং স্বেচ্ছায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাহ উপজেলার বক্তাবলি ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের একটি মসজিদে তাবলিগ জামাতের কাজে ৪০ দিনের জন্য আত্মগোপনে ছিলেন।

পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানে চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলম ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মৃদুল কুমার ভৌমিকের নেতৃত্বে একটি দল ফতুল্লাহতে গিয়ে ২৭ জুন মন্নান চৌধুরীকে উদ্ধার করে। পরদিন তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়।

তদন্তে উঠে আসে, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা। জমি বিরোধের প্রতিপক্ষ জিতু মিয়া চৌধুরী ও তাঁর পরিবারকে ফাঁসানোর জন্যই এই নাটক সাজানো হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মাস আগে জিতু মিয়ার বড় ভাই মফিল মিয়াকে হত্যার ঘটনায় মন্নান চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। মামলা থেকে রক্ষা পেতেই এই অপহরণ নাটকের আয়োজন করা হয় বলে দাবি করা হচ্ছে।

জিতু মিয়া চৌধুরী বলেন, *”আমরা সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছি। আদালতের মাধ্যমে এর ন্যায়বিচার চাই।”*

পুলিশ ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে শাহিনা আক্তার যখন তাবলিগ জামাতের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হন, তখন তিনি এড়িয়ে যান এবং জিতু গংয়ের বিরুদ্ধে অপহরণের দাবি করেন। তবে তাঁর কথার সঙ্গে পুলিশের তদন্তের ফলাফলের কোনো মিল নেই।

চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলম বলেন, *”তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এটি একটি সাজানো নাটক। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”*

স্থানীয়রা এ ধরনের মিথ্যা মামলাকে আইনের অপব্যবহার বলে মনে করছেন। একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি বলেন, *”এমন ঘটনা প্রকৃত অপরাধীদের তদন্তে বাধা সৃষ্টি করে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।”*

পুলিশ এখন মিথ্যা মামলা ও জনগণকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে শাহিনা আক্তার ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।

এই ঘটনা চুনারুঘাটে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, এটি একটি নজিরবিহীন প্রতারণা, যা সমাজে আইনের শাসনকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

পুলিশের দ্রুত তদন্ত ও সঠিক তথ্য উদঘাটন এই সাজানো নাটকের ফাঁসফোঁড় করতে সক্ষম হয়েছে। তবে এমন ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে, সে জন্য কঠোর নজরদারি ও সচেতনতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

 


এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ