ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
ঝালকাঠির ‘নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসে একটি ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেনজেটিভ নিয়মিত রোগী দেখে ব্যাবস্থাপত্র দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি হাসপাতালে বসে এভাবে রোগী দেখতে তাকে নিষেধ করায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ কর্মচারীদের হুমকি প্রদান করেন শরীফ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড নামের ওষুধ কোম্পানির ওই প্রতিনিধি। এমনকি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান নির্বাহীর হাত পা ভেঙে দেওয়াসহ প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় বুধবার (১৮ই জুন) শরীফ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেনজেটিভ মোহাম্মদ মহসিনের নামে নলছিটি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান নির্বাহী মো. মিজানুর রহমান।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদ মহসিন নামে ওষুধ কোম্পানির ওই প্রতিনিধি প্রতিদিন নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্øেক্সে গিয়ে চিকিৎসক ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের নানাভাবে বিরক্ত করে আসছেন। তিনি জরুরী বিভাগে এবং সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসারদের (স্যাকমো) কক্ষে গিয়ে প্রভাব বিস্তার করে নিজেই রোগী দেখেন। বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শিউলী পারভীনের নজরে এলে তিনি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি মোহাম্মদ মহসিনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসে রোগী দেখতে নিষেধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন মোহাম্মদ মহসিন। কর্তৃপক্ষের নিষেধ আমান্য করেও তিনি নিয়মিত রোগী দেখে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত ১৭ জুন তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে প্রধান নির্বাহী মো. মিজানুর রহমানের কক্ষে প্রবেশ করেন। এসময তিনি আউট সোর্সেসিংয়ে জনবল নিয়োগের কাগজপত্র দেখতে চান। কাগজপত্র সিভিল সার্জন অফিসে রয়েছে জানালে প্রধান নির্বাহীকে মহসিন হাত পা ভেঙে ফেলাসহ প্রাণ নাশের হুমকি দেন মহসিন। এখানে চাকরি করতে হলে তাকে সবকিছু জানাতে হবে বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি। তাঁর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিসের ক্ষমতাবলে তিনি এসব করে যাচ্ছেন এমন প্রশ্ন তুলেছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান নির্বাহী মো. মিজানুর রহমান অভিযোগ করে জানান,“মোহাম্মদ মহসিন নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন এবং সাংবাদিকতার ভয় দেখিয়ে অনেক দিন ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন। স্বাস্থ্য কর্মপ্লেক্স সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন সময় মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। সর্বশেষ আমার কক্ষে ঢুকে হাত পা ভেঙে ফেলাসহ জীবননাশের হুমকি দিয়েছে। আমি এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি।”
নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শিউলী পারভীন জানান, মহসিন নামে ওষুধ কোম্পানির ওই প্রতিনিধি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে অবৈধভাবে রোগী দেখেন। এটা নিষেধ করায় তিনি ফেসবুকে উল্টাপাল্টা লিখে যাচ্ছেন। আমার অফিস স্টাফদের হুমকি দিচ্ছেন। অফিসে এসে কাগজপত্র এলোমেলো করেন। তাকে কেউ কিছু বললেও তিনি শুনছেন না। তাঁর যন্ত্রণায় আমরা সকলে অতিষ্ঠ। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। পুলিশই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে আমি আশা করি।
এ ব্যাপারে শরীফ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড নামের ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি মোহাম্মদ মহসিন বলেন,“আমি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে আউট সোর্সসিংয়ের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ও অন্যান্ন কাগজপত্র দেখতে চেয়েছি। আমাকে মিজান তা দেখায়নি। মিজান বলে সিভিল সার্জন অফিসে আছে, সেখান থেকে দেখে নিন। আমি তাকে কোন হুমকি দেইনি। আমি হাসপাতালে রোগীও দেখি না। এসব মিথ্যা।
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস ছালাম বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।