সেলিম মাহবুব,ছাতকঃ
সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায় সুরমার বাঁকে, নাইন্দা হাওড়ে ঘেরা উঁচু নিচু টিলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেষ্টিত, দূর্বিন শাহের স্মৃতি বিজড়িত, গীতিকার রমিজ আলীর স্মৃতিধন্য নোয়ারাই ইউনিয়ন। ইউনিয়নের উত্তর পশ্চিমে মানিকপুর গ্রাম।ছাতক শহর হইতে নিকটবর্তী হইলেও ভৌগোলিক কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিল না। বিগত ২ দশক ধরে যোগাযোগ ব্যবস্থার মোটামুটি উন্নতি সাধিত হলেও অনেক কম প্রয়োজনের তুলনায়। ব্রিটিশ আমলে এলাকাটি ছিল দোয়ারা স্টেটের অধীনে। জমিদারের নায়েব শ্রী হরিপদ রায় ও শ্রী শান্তিপদ রায় খাজনা আদায়ের জন্য হাতির উপরে চড়ে মানিকপুর এলাকায় আসতেন। সবুজে ঘেরা বন লতাপাতায় বেষ্টিত জঙ্গলে পরিপূর্ণ, মানিক পুর গ্রামের তখনকার নাম ছিল বনগাঁও। জমিদার নায়েবদের আকৃষ্টতায় ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ হইতে লিচুর চারা আনে, নিজ হাতে মানিকপুর গ্রামের একটি টিলার উপর (বর্তমানে ওই টিলায় মানিকপুর গ্রামের মসজিদ) কয়েকটি লিচুর চারা রোপন করেন। বন লতা পাতা জঙ্গল কেটে লিচু গাছ সহ ফলফলাদির চারা রোপন করলে কালের প্রবাহে বনগাঁও নাম মুছে গ্রামটির নামকরণ হয় মানিকপুর। বর্তমানে সমগ্র এলাকাটি মানিকপুর নামে পরিচিত। বিগত ২৬.০৫.১৪ ইংরেজি তৎকালীন ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইনুর আক্তার পান্নার সভাপতিত্বে উপজেলা কৃষি বিভাগের সকল কর্মকর্তাদের নিয়ে ছাতকে কৃষির ব্যাপক উন্নয়নের স্বার্থে এক মত বিনিময় সভা হয়। উক্ত মত বিনিময় সভায় ছাতকের কৃষি উন্নয়নের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ছাতক উপজেলার একমাত্র লিচু উৎপাদন এলাকা মানিকপুরের লিচু চাষ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। তৎকালীন সময়ে নোয়ারাই ইউনিয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ মানিকপুর এলাকায় লিচু চাষীদের কে উন্নত জাতের লিচু চারা বিনামূল্যে সরবরাহ করার প্রস্তাব করলে প্রস্তাবটি সভায় সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয় এবং এক সপ্তাহের মধ্যে উন্নত লিচুর চারা বিতরণ করা হয়। ওই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে নোয়ারাই ইউনিয়নে দায়িত্বে আসার পর মানিকপুর এলাকায় লিচু চাষের উপর এবং আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ এর উপর নজর দেন। লিচু চাষকে আরো উন্নত করার স্বার্থে এলাকার মাটি পরীক্ষা করে সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার, পোকামাকড়, রোগবালাই দমনে উপজেলা কৃষি অফিস হইতে বিভিন্ন সময় চাষীদের কে প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং লিচু বাগানে গিয়ে চাষীদের কে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে লিচু চাষের ফলন দিন-দিন বৃদ্ধি ও লিচু চাষের পরিধি আরো বৃদ্ধি হতে থাকে। মানিকপুর লিচু বাগানের ফলন বৃদ্ধি বাগান সম্প্রসারণ বাজারজাত করণ ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করায় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বিষয়টি প্রচার করা হয়। ১৭.০৫.১২ ইং দৈনিক দেশপ্রান্ত ও সবুজ সিলেট, দৈনিক যুগভেরী, ১৯.০৫.১২ ইং দৈনিক ডেসটিনি, ০২.০৬.১২ ইং দৈনিক সংলাপ, ০৫.০৬.১২ ইং দৈনিক নবরাজ, ১০.০৬.১২ ইং দৈনিক আমার দেশ, ২৬.০৫. ১২ ইং দৈনিক ইত্তেফাক, ১৪.০৩.১৩ ইং দৈনিক সবুজ সিলেট ও দৈনিক ইত্তেফাক ১৬.০৫.১৩ ইং দৈনিক স্বাধীনমত, ১৭. ০৩.১৩ দৈনিক ইত্তেফাক, ২৩-০৩-১৩ ইং দৈনিক জালালাবাদ, ১৮-৫-১৩ইং দৈনিক সিলেটের ডাক, ১৯-৫-১৩ ইং দৈনিক আমাদের সময়, ২০-০৫-১৩ ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশের আলো, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ, ২২-৫-১৩ ইং দৈনিক শ্যামল সিলেট,২৬-৫-১৩ ইং দৈনিক সিলেট সংলাপ, ২১-৫-১৩ ইংরেজি দৈনিক স্বাধীনমত, দৈনিক স্বাধীন বাংলা, ১৯-৫-১৪ ইংরেজি দৈনিক সবুজ সিলেট, দৈনিক সিলেট বাণী, ২০.৫.১৪ ইং দৈনিক কাজীর বাজার ও দৈনিক বর্তমান, ২৪.৫.১৪ ইং দৈনিক সিলেটের ডাক, ২২-৫-১৪ ইং দৈনিক নবরাজ সহ অসংখ্য পত্রিকায় মানিকপুর লিচু চাষ বিষয়ের বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়। সরেজমিন পরিদর্শন ও সাক্ষাৎকার নিয়ে গত ১৬-৫-১২ ইং তারিখে চ্যানেল আই সহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে মানিকপুর এলাকার লিচু চাষ সম্বন্ধে প্রচার করা হয়। সাক্ষাৎ গ্রহণ করে ২৮-৫-১৪ইং তারিখে বিটিভিতে মানিকপুর লিচু চাষ সম্পর্কে প্রচার করা হয়। মোহনা টিভি, একুশে টিভি, সময় টিভি, ইটিভি, যমুনা টিভি, নিউজ ২৪ সহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মানিকপুর এলাকার লিচু বাগানের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। চাষীদের সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়েছে। দৈনিক গাজীপুর, দৈনিক ইনাতগঞ্জ বার্তা সহ বেশ কয়েকটি অনলাইনে মানিকপুর, গোদাবাড়ি, বড়গল্লা, রাজারগাও, চানপুর ও লামা সানিয়া গ্রামের নাম, লিচু বাগানের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে লিচু বাগান ও গ্রাম গুলোর ব্যাপক পরিচিতি লাভ হয়। ২০১৪ ইংরেজি থেকে তৎকালীন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ ও এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার প্রসার হওয়ায় বর্তমানে মানিকপুর এলাকায় লিচু বাজারজাতকরণে কোন অসুবিধা নাই। প্রতিদিন সকালে ছাতক ও সিলেটের লিচু ব্যবসায়ীরা স্থানীয় চৌমুহনী বাজারে এসে লিচু ক্রয় করে নিয়ে বিভিন্ন বাজারে লিচু বিক্রয় করেন। প্রতি বছর সমগ্র এলাকায় প্রায় কোটি টাকার লিচু বিক্রয় হয়। লিচু চাষের এই ব্যাপক প্রচার-প্রসার এবং লিচু ব্যবসায় ব্যাপক লাভবান হওয়ায় এলাকাবাসী অনেকটাই আনন্দিত। তৎকালীন উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার হিসেবে অবসর প্রাপ্ত আব্দুল হামিদ এলাকাবাসীর এই আনন্দ ও সফলতায় গর্বিত। সাবেক এ কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ এলাকাবাসীর পক্ষে স্থানীয় চৌমুহনী বাজার, ছাতক উপজেলা সদরের যোগাযোগের রাস্তার ভগ্নদশায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সল্প সময়ের মধ্যে চৌমুহনী বাজারের সাথে উপজেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন।