স্টাফ রিপোর্টার:
পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে শেরপুরের সদর আসনের এমপি ছানোয়ার হোসেন (ছানু) ও তৎকালীন আওয়ামীপন্থী পুলিশের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রভাব খাঁটিয়ে সাধারণ মানুষের উপর চাপ প্রয়োগ করে জমি দখল ও বিভিন্ন তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে বনে গিয়েছেন শত কোটি টাকাসহ এবং প্রচুর সম্পদের মালিক অবৈধ ধনকুবের আল-আমিন। যার বেশির ভাগ সম্পদ ও অর্থের ভাগ বা মাসোহারা পেতেন তখনকার আমলের মন্ত্রী, এমপি ও পুলিশের কয়েকজন ডিআইজি, এসপি, এএসপি ও ওসি। জুলাই-আগস্ট এর গণঅভ্যুথানের সময় শেরপুরের ছাত্র হত্যা ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে সরাসরি ভূমিকা পালনকারী, শেরপুরের আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অস্ত্র যোগানদাতা বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে এই চতুর ও দূরদর্শী দালাল আল-আমিনের বিরুদ্ধে। পটপরিবর্তন পরবর্তী বিএনপি সরকার গঠন হওয়ার সম্ভাবনার সুযোগে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দের ছত্রছায়ায় আসার জন্য এখন পাঁয়তারা শুরু করেছে। শুধু তাই নয় দৌড়ঝাপ শুরু করছে তার বিএনপিপন্থী নিকটতম আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে।
প্রকৃতপক্ষে মাতৃসূত্রে শেরপুর শহরের নারায়ণপুর এলাকায় ছিলো জরাজীর্ণ বাড়ি। আর এখন সেখানে গড়ে তুলেছেন আলীশান বিশাল দুটো অট্টালিকা। যেখানে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে শেরপুরে দায়িত্বরত কয়েকজন এএসপি থাকতেন নামে মাত্র ভাড়াটিয়া হিসেবে। আর সে তাদের কাছ থেকে কোন ভাড়া নিতেন না। আর ভাড়া না নেওয়ার দরুণ সে কৌশলে ওইসকল কর্মকর্তার আস্থাভাজন হয়ে উঠেন এবং সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের উপর পুলিশী ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করেন। তাছাড়া পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দামী উপটোকন দিয়ে ও ঈদের সময় কোরবানির গরু উপহার দিতেন। যার কারণে প্রশাসনের সকলের আস্থাভাজন বনে যান এবং সেই সুযোগে তার অপকর্মের সকল হামলা মামলা ছিলো ধরাছোঁয়ার বাহিরে। বাড়ীর পাশেই সদর হাসপাতাল রোডে অবৈধ টাকায় গড়ে তোলা আটতলা বিশিষ্ট শেরপুরের স্বনামধন্য আবেদীন হাসপাতাল। এছাড়াও সে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাবর এন্ড কোং এর মালিক আবুল হাশেম সাহেবের বাড়ী অবৈধভাবে দখল করে নেয় এমপি ছানুর সহায়তায়। ঢাকা, শেরপুর ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সাম্রাজ্য।
অভিযোগ আছে, এই আল-আমিন পতিত স্বৈরাচারের আমলের মতো এখনও বড় বড় ব্যবসায়ীদেরকে টার্গেট করে প্রশাসনের বিভিন্ন লোককে কাজে লাগিয়ে হুমকি, ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে অনেকের কষ্টার্জিত টাকা-মূল্যবান সম্পদ। মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করিয়ে সর্বশান্ত করে দেয়া ছিল তার কাজ। তার এই অপতৎপরতা তিনি এখনও চালু রেখেছেন। পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে সম্পর্ক তৈরি করে তাদের ব্যবহার করে তিনি হয়ে ওঠেন পুলিশের ঘুষের টাকা আদায়ের ক্যাশিয়ার।
গত নির্বাচনে জয়লাভ করা এমপি ছানোয়ার হোসেন ছানুর সাথেও তার সখ্য গড়ে ওঠে। ছানুর আস্থাভাজন হিসেবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অর্থ উপার্জন করতে করতে একটা সময় নিজেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও পতন হয়নি সুবিধাবাদী আল-আমিনদের। আজ পর্যন্ত তার নামে কোনো মামলাও হয়নি। জানা যায়, তার বিএনপিপন্থী নিকট আত্মীয়দের মাধ্যমে শেরপুরের সাধারণ মানুষদের হয়রানি ও ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন আবার শুরু করেছে।
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের পট পরিবর্তন হলেও এ ধরনের প্রতারক ও দুর্নীতিবাজের হাত থেকে বাঁচতে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ ও তাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী। এমনকি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী দেখিয়েছেন কিভাবে একবছর আগে তার বিরুদ্ধে বিএনপির দালাল বলে মামলা করেছেন আর এক বছর পরে পটপরিবর্তনের পর তারই বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে মামলা করেছেন।