শিরোনাম
ছাতকে পুলিশের এক অভিযানে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার ৪  মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সাংসদ- ইঞ্জিনিয়ার মঈনুল ইসলাম খান শান্তর নির্বাচনী প্রচারণা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ছাত্রদলের সাথে মতবিনিময় সভা।  মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সাংসদ- ইঞ্জিনিয়ার মঈনুল ইসলাম খান শান্তর নির্বাচনী প্রচারণা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ছাত্রদলের সাথে মতবিনিময় সভা। বিএনপির ৩১ দফা রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের দাবীতে বিশাল মিশিল, পথসভা ও লিফলেট বিতরণ ছাতকের খুরমায় যৌথবাহিনীর অভিযানে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার  হরিরামপুরে জাতীয় পার্টি সহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে -জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। গোয়াইনঘাটের ডালারপাড় নদীর বালুবাহী নৌকা থেকে ফারুক মেম্বারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর অভিযোগ! ফের গোয়াইনঘাটে বালু লুটের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে নেপথ্যে প্রভাবশালী মহল ৫ দফা দাবীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম সুনামগঞ্জ জেলা শাখার বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ সিলেট জেলা তাঁতীদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হানিফ ও কামরুলকে ফুলেল শুভেচ্ছা
সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪১ অপরাহ্ন

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায় ডিএনসিসির হঠাৎ উচ্ছেদ অভিযান:

স্টাফ রিপোর্টার / ৭৫ Time View
Update : শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫

সিলেট বুলেটিন ডেস্ক:

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায় ডিএনসিসির হঠাৎ উচ্ছেদ অভিযান: বরাদ্দপ্রাপ্ত ২৫০ দোকান গুঁড়িয়ে দিল সিটি কর্পোরেশন, ব্যবসায়ীরা বলছেন ‘আমাদের নিঃস্ব করা হয়েছে’

রাজধানীর মোহাম্মদপুর ২৯ নং ওয়ার্ড কৃষি মার্কেট এলাকায় আজ সকাল থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃক পরিচালিত এক বিশাল উচ্ছেদ অভিযানে দগ্ধ হয়েছে শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বরাদ্দপ্রাপ্ত দোকান মালিক। কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা বা নোটিশ ছাড়াই প্রায় ২৫০ টি দোকান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, যার অধিকাংশই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক পূর্বে বরাদ্দ দেওয়া বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। সকাল ৮টার দিকে হঠাৎ করেই সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। সঙ্গে ছিল ভারী যন্ত্রপাতি—হায়দ্রুলিক লোডার, বুলডোজার ও ট্রাক।

অভিযানে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বহু বছর ধরে গড়ে ওঠা দোকানপাট, কাঠামো, মালামাল সবকিছু ধ্বংস করে ফেলা হয়। এলাকাজুড়ে তখন কান্না, হতাশা আর ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে অসংখ্য দোকানির কণ্ঠ। দোকানদাররা তাদের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার সময়টুকুও পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, এই মার্কেটটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল সাবেক কাউন্সিলর আসিফ -এর সময়, যিনি আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক-এর ঘনিষ্ঠ। সেই সময় কিছু ব্যবসায়ী রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে ডিএনসিসির বরাদ্দ নিয়ে দোকান নির্মাণ শুরু করেন। দুই তলা ফাউন্ডেশনসহ অনেক দোকান এখনো নির্মাণাধীন অবস্থায় ছিল।

অভিযোগ রয়েছে, এই বরাদ্দ ও নির্মাণ কাজের পেছনে একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তি ও গোষ্ঠী জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ী সমাজে নানা আলোচনা চলছিল। যদিও প্রকৃত অর্থে কোন বরাদ্দ বৈধ আর কোনটি অবৈধ—তা নিয়ে আজ পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পরিষ্কার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

উচ্ছেদ অভিযানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। অনেকেই দাবি করছেন, তারা বৈধভাবে বরাদ্দ পাওয়া দোকান বুঝিয়ে দেওয়া আগ পর্যন্ত তারা ফুটপাতে ব্যবসা করছিলেন এবং চলমান নির্মাণের জন্য লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

দোকানদার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমরা আমাদের বরাদ্দকৃত দোকান বুঝিয়ে পাওয়ার আশায় বসে আছি, পরিবারের পেট চালানোর জন্য বরাদ্দকৃত দোকানের যায়গায় সামনে ফুটপাতে দোকান করছি। কিন্তু আজ তারা আমার পরিবারের দু-বেলা রোজকার করে খাওয়ার যায়গায়টাও কেড়ে নিল, এখন আমরা কোথায় যাব। কিভাবে চলবে আমাদের সংসার।

আমার দোকান সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দ অনুযায়ী পেয়েছি। নির্মাণের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। হঠাৎ একদিন এসে বলে দোকান অবৈধ, তাই ভেঙে ফেলবে? আমাদের না শুনেই সব গুঁড়িয়ে দিল!”

এক নারী ব্যবসায়ী রাবেয়া খাতুন বলেন,এই দোকান দিয়েই আমার ছেলের পড়ালেখার খরচ, সংসার চালাই। এখন দোকান নেই, পুঁজি নেই, আমরা কোথায় যাবো?”তিনি বলেন ২৯ নং ওয়ার্ডের জামাতে নেতা মোহাম্মদ মুস্তাক তার নেতৃত্বেই আমাদের নিঃস্ব করে দেয়া হয়েছে।

নোটিশ ছাড়া অভিযান’, প্রশ্নের মুখে সিটি কর্পোরেশন:এলাকাবাসী ও আইন বিশ্লেষকদের মতে, একটি প্রতিষ্ঠিত বাজারে এতগুলো স্থাপনা ধ্বংস করার আগে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় প্রশ্ন উঠেছে সিটি কর্পোরেশনের এই অভিযানকে ঘিরে।স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মামুন পাটুয়ারী জানান,

“আমরা সিটি কর্পোরেশনের কাছে বারবার আবেদন করেছি—যাদের বরাদ্দপত্র রয়েছে, তাদের যাচাই করে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু কোনো আলোচনা ছাড়াই আজকের মতো হঠাৎ অভিযান চালিয়ে মানুষকে পথে বসানো হল।”

একজন আইনজীবী বলেন,“যদি কেউ অবৈধ দখল করে থাকে, তবে সেটার প্রমাণ ও নোটিশ দেওয়াই হলো আইনি দায়িত্ব। না জানিয়ে ভাঙচুর করা আত্মরক্ষার সুযোগ কেড়ে নেয়।” বিএনপি নেতার অভিযোগ: ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ এই অভিযানের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় বিএনপির ২৯ নং ওয়ার্ডের সভাপতি মো: আমির হোসেন। তিনি বলেন,“আমরা সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করছিলাম যেন বরাদ্দপ্রাপ্তদের দোকান বুঝিয়ে দেওয়া হয়। হঠাৎ আজ সবাইকে নিঃস্ব করে দিয়ে গেল। এখানে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং ও ব্যবসায়ী রাজনীতি জড়িত।

”তিনি আরও বলেন, “দুইতলা মার্কেট গড়ে তোলার পেছনে আওয়ামী লীগের ধূসর গ্রুপ ও জামায়াতপন্থী প্রভাবশালীরা দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিল। এখন তাদের স্বার্থে আঘাত লাগায়, পুরো মার্কেটটাই ধ্বংস করে দেওয়া হলো।”

এই বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- যেসব স্থাপনাগুলোর বৈধতা নেই, সেগুলো উচ্ছেদ করাই ছিল আজকের অভিযানের উদ্দেশ্য। কোনো দল বা গোষ্ঠী নয়, জনগণের চলাচল ও নগর শৃঙ্খলা বজায় রাখাই মূল লক্ষ্য।”

তবে নোটিশ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। অভিযানের চলাকালিন সময়ে কৃষি মার্কেট এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শত শত ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মালপত্র সরাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য ও সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়।

‘আইন নাকি রাজনৈতিক বলি? এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে, রাজধানীতে সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানের পেছনে আসল উদ্দেশ্য কী? জনস্বার্থ না রাজনৈতিক প্রতিশোধ? যাদের নামে বৈধ বরাদ্দ ছিল, তাদের যদি অবৈধ ঘোষণা করা হয়—তবে সেই বরাদ্দ কীভাবে দেওয়া হয়েছিল? কেন এতদিন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?

এখন সময় এসেছে, উচ্ছেদ নীতির স্বচ্ছতা ও মানবিক দিক বিবেচনায় এনে একটি জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার। না হলে প্রতিটি উচ্ছেদ অভিযানে বারবার ‘আইনের নামেই অন্যায়’ করার অভিযোগই সামনে আসবে।পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটি এখন সময়ই বলে দেবে। তবে এতটুকু নিশ্চিত—মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের এই ঘটনার ধাক্কা সহজে সামাল দেওয়া যাবে না।

 


এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ