স্টাফ রিপোর্টার
জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার অধীনস্থ সাভারের এনএফভিআই শপিং কমপ্লেক্স (অন্ধ মার্কেট) কে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও পতিত সরকারের দোসর ও চিহ্নিত চাঁদাবাজদের কবল থেকে রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন চার শতাধিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। শনিবার (২৮ জুন) দুপুর ১২ টায় সাভার-বিরুলিয়া আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার অধীনস্থ এনএফভিআই শপিং কমপ্লেক্সের সামনে এই মানববন্ধন করা হয়।
এ সময় তারা চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও অবৈধ দোকান দখল মুক্ত করার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাধব চন্দ্র সরকারের সভাপতিত্বে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার মহাসচিব আইয়ুব আলী হাওলাদার।
মহাসচিব আইয়ুব হাওলাদার বলেন, জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার অধীনস্থ এনএফভিআই শপিং কমপ্লেক্সের জমিদারি ভাড়া দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করা হয়।
তিনি বলেন, সংস্থার পক্ষ থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পরিবারের পূর্ণবাসনের জন্য সেলাই মেশিন প্রদান, গৃহনির্মাণের জন্য ঢেউটিন প্রদান, জি আর চাল বিতরণ, কম্বল বিতরণ, ঈদ সামগ্রী বিতরণ, ইফতার সামগ্রী বিতরণ, ঈদ উপহার বিতরণ, বয়স্ক ভাতা প্রদান, আর্থিক সাহায্য প্রদান, ক্ষুদ্র ব্যবসায় সাহায্য করা, বিবাহ সাহায্য প্রদান, দাফন-কাফন সাহায্য প্রদান, চিকিৎসা সাহায্য প্রদানসহ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পতিত সরকারের সময় সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের ঘনিষ্ট সহযোগী দুর্ধর্ষ চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অবৈধ মার্কেটের দোকান দখলকারী ও চাঁদাবাজ নজরুল ইসলাম ওরফে মুরগি নজরুলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হেলাল ওরফে মুরগি হেলাল, সোহেল ওরফে ল্যাংড়া সোহেল, মাহবুবুল হাসান খোরশেদ ওরফে মুরগি খোরশেদ, আনোয়ার হোসেন ওরফে ফটকা আনোয়ার, রিপন ওরফে কাইল্লা রিপন, বেলাল উদ্দিন মনাসহ তাদের সহযোগী অজ্ঞাত ২০/২৫ জন কতিপয় চাঁদাবাজ বিভিন্ন সময় জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার অধীনস্থ এনএফভিআই শপিং কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়, মার্কেটে দোকান দখল এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
মহাসচিব আইয়ুব আলী হাওলাদার বলেন, ৫আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে উপরোক্ত দুষ্কৃতিকারীরা কিছুদিন নীরব থাকলেও খোলস পাল্টে পূর্বের ন্যায় সেই সন্ত্রাসী কার্যক্রমে আরো তৎপর হয়ে উঠেছে এবং নতুন কিছু কৌশল অবলম্বন করেছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের নাম ভাঙ্গানো, পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গানোসহ কতিপয় সাংবাদিকদের নাম ব্যবহার করে পূর্বের ন্যায় অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে চাঁদাদাবি, ছাত্র আন্দোলনের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি, অবৈধভাবে এনএফভিআই শপিং কমপ্লেক্সের দোকান লিখে দিতে চাপ প্রয়োগ এবং জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং সহযোগী সদস্যদের জীবননাশের হুমকিসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। এর আগেও পতিত সরকারের সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এই নজরুল ইসলাম ওরফে মুরগী নজরুল মার্কেটের উন্নয়ন ও মসজিদ উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিঘ্নতা সৃষ্টি করে এবং চাঁদা আদায় করে।
তিনি আরো বলেন, পবিত্র ঈদুল আযহার ৩ দিন পূর্বে নজরুল ইসলাম ওরফে মুরগী নজরুলের নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী চক্রটি জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার অধীনস্থ এনএফভিআই শপিং কমপ্লেক্সের অফিসে এসে মার্কেট ইনচার্জ আব্দুর রহিমের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এই চাদার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে বিভিন্ন প্রকার চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। পবিত্র ঈদুল আযহা শেষে চতুর্থ দিনের মাথায় অপরাধ চক্রটি মার্কেটে সশস্ত্র মহড়া দেয় এবং পুনরায় মার্কেট ইনচার্জ আব্দুর রহিমকে অফিসে এসে শাসিয়ে চাঁদা পরিশোধ না করলে গুলি করে হত্যা করবে মর্মে হুমকি দেয়। পরবর্তীতে গত ২৩ জুন রাত ১১ টায় এনএফভিআই শপিং কমপ্লেক্সের সামনে বিরুলিয়া রোডে পেয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মার্কেট ইনচার্জ আব্দুর রহিমকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। এ সময় তার ডাক চিৎকারে আশপাশ থেকে লোকজন এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করে। তাদের এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সহযোগী সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এমতাবস্থায় সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমনসহ আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি এবং নির্বিঘ্নে মার্কেট পরিচালনায় সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ সময় জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান মোকলেসুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব এস এম ইউনুসুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হালেম মাতব্বর, এনএফভিআই ইনচার্জ আব্দুর রহিমসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।