স্টাফ রিপোর্টার :
ঢাকায় বসবাসের জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে চলে আসছে ভবন মালিকদের কাছ থেকে ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার বিকল্প হিসেবে দীর্ঘমেয়াদে বন্দোবস্ত, যা সেখানে মর্টগেজ নামে পরিচিত। শুরুতে এ ব্যবস্থা উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক হলেও পরে প্রতারণার বিষয়টি জেঁকে বসে। দেখা গেছে, ভবন বা ফ্ল্যাটের মালিক একই ফ্ল্যাট একাধিক ব্যক্তির কাছে বন্দোবস্ত দিয়ে সটকে পড়েছেন। আবার বন্দোবস্ত নিয়ে অনেকে ওই ফ্ল্যাট পুনরায় বন্দোবস্ত দিয়েছেন একাধিক ব্যক্তিকে।
এতে এখন মাথা খুঁড়ছেন ভুক্তভোগীরা।
ঢাকায় প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা এই বন্দোবস্ত বা মর্টগেজ পদ্ধতিতে দেখা যায়, এককালীন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে কয়েক বছরের জন্য মালিকের কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি বসবাসের জন্য নেয় দ্বিতীয় পক্ষ। এ নিয়ে দলিল করা হয়।
কিন্তু বর্তমানে একই ফ্ল্যাট একাধিক ব্যক্তির কাছে বন্দোবস্ত দেওয়ার ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। ঢাকার বাড্ডা, ভাটারাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এ প্রতারণার শিকার হচ্ছে অনেকে।
জানা যায়, জিন্নাত আরা জোসনা, পিতাঃ মোঃ সোনা মিয়া, মাতাঃ মোসাঃ রাজিয়া খাতুন, ঠিকানাঃ বাসা/ হোল্ডিং-গ-১, গ্রাম/রাস্তায়। ঈদগাহ মসজিদ রোড, শাহজাদপুর পূর্ব এবং পশ্চিম, ডাকঘরঃ গুলশান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী, ধর্মঃ ইসলাম, পেশাঃ গৃহিনী, জাতীয় পরিচয় পত্র নং-৭৭৬২৬৫২৯৫১। এই মহিলা বিভিন্নজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
একই ফ্ল্যাট বন্দোবস্তের জন্য একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি করে, মালিক সেজে প্রতারণা করেছেন । ভুক্তভোগীরা বলছে, লাভের আশায় কয়েক বছরের জন্য ফ্ল্যাট বন্দোবস্ত নিয়ে এখন সমস্যার শেষ নেই। দলিল ঠিক থাকলেও একই রকম কাগজ রয়েছে একাধিক পরিবারের কাছে।
গত রবিবার শাহাজাদপুর কিছু এলাকা ঘুরে এমন ভোগান্তিতে পড়া কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাড্ডা শাহজাদপুর মুক্তিপল্লী রোডে একটি ৬তলা বিশিষ্ট ভবনটির ৭টি ইউনিট মর্টগেজ নিয়েছে প্রায় ৭টি পরিবার। কোনো কোনো ফ্ল্যাট তিন থেকে চারটি পরিবারের কাছেও মর্টগেজ দেওয়া হয়েছে বলে জানান বাসিন্দারা। ভবনের তৃতীয় তলায় থাকেন ভবন মালিক জিন্নাত আরা জোসনা। কিন্তু চুক্তিমাফিক নিজেদের জন্য বরাদ্দ ফ্ল্যাট না পেয়ে কয়েকটি পরিবার তাঁর ফ্ল্যাটে গিয়ে ওঠে। তিন রুমের ফ্ল্যাটটিতে বর্তমানে থাকছে স্বামী-স্ত্রী সহ পরিবার।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন বছর আগে এই ফ্ল্যাটটি মোঃ ওমর ফারুক, ৩ বছরের চুক্তিতে আট লাখ টাকায় বন্দোবস্ত নেন; ২ বছর আগে তিন বছরের চুক্তিতে ৮ লাখ টাকায় নেন কিন্তু ফ্ল্যাটে উঠতে গিয়ে দেখি অন্য পরিবার রয়েছে সেখানে। যাদের প্রত্যেকের কাছেই রয়েছে বিভিন্ন মেয়াদে মর্টগেজ নেওয়ার দলিল।
বন্দোবস্ত নেওয়া মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘কষ্টের টাকায় এমন ঝামেলায় পড়ব ভাবিনি, এখন না পারি ছাড়তে আর না পারি থাকতে।
আরো জানা গেছে, বন্দোবস্তের নামে এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত রয়েছে মুক্তিপল্লী রোড ভাটারা দাগ নং ১০৮৬ ৬তলা ভবনের মালিক জিন্নাত আরা জোসনা ও তার স্বামী।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মশিউর ভাই বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোন সমাধান দিতে পারব না। মানুষ লোভে পড়ে এই কাজটির সঙ্গে জড়াচ্ছে। আর কিছু অসাধু মানুষ এর ফায়দা লুটছে।’ তারপর মানুষের কষ্টের আর শেষ থাকে না।
বিষয়টি নিয়ে থানায় কোনো ধরনের অভিযোগ আসে কি না জানতে চাইলে ভাটারা থানার ওসি মাজারুল ভাই সাংবাদিককে বলেন, ‘মর্টগেজ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসে। কিন্তু ওইভাবে কেউ মামলা করেনি।