শিরোনাম
হরিরামপুরে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী- মুহাম্মদ জাহিদুর রহমানের নির্বাচনী প্রচারণা। সুনামগঞ্জে ইরা-সিআরইএ প্রকল্পের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী ‘অভিযোজন এক্সপো’ মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াছ মিয়া সাদা পাথর কান্ডে সিলেটের ডিসি,ইউএনও অপসারিত হলেও ওসি আদনান বহাল তবিয়ত! খুঁটির জোর কোথায়? গৃহস্থলী জ্বালানি গ্যাসের দাবিতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে চলতেছে মিছিল সমাবেশ। হরিরামপুরে বিএনপির রাজনীতিতে জনপ্রিয়তার শীর্ষে-আবুসাদাত ইমনেই চলছে চেয়ারম্যান-সচিববিহীন তোয়াকুল ইউপি, সেবা কার্যক্রম ব্যাহত ভূরুঙ্গামারী উপজেলা বিএনপির কমিটিতে ত্যাগীদের পরিবর্তে স্থান পেয়েছে আওয়ামী লীগের দোসররা! ছাতক থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার আসামী ১২ সুনামগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের র‌্যালি,পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ডাস্টবিন স্থাপন ও ফলজ-বনজ বৃক্ষরোপন সিলেট বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের পরিচ্ছন্নকর্মীর বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত
বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন

স্থাপনা উচ্ছেদে রাস্তায় ও আকাশের নিচে শত পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার / ১৩৭ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৫

গাজীপুর প্রতিনিধি:

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সিনাবহ বাজারে ঈদের আগের দিন হঠাৎ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে বন বিভাগ। ঈদুল ফিতরের সব প্রস্তুতির মালামাল, খাদ্যসামগ্রীসহ দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে গত তিন দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে শিশু, গর্ভবতী নারী, বৃদ্ধসহ ক্ষতিগ্রস্ত দুই শতাধিক পরিবারের সদস্যরা। হঠাৎ এমন উচ্ছেদে তাদের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে রূপ নিয়েছে বিষাদে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নানা মহলের মানুষ।

সরেজমিন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রমজানের শেষ দিন সব প্রস্তুতি নিয়ে সবার মনে যখন ঈদ আনন্দ, ঠিক তখনই বন বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানের কারণে মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ল। গত রবিবার দিনব্যাপী উপজেলার চন্দ্রা রেঞ্জের সিনাবহ ও বাঘাম্বর এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বশিরুল আল মামুন, ঢাকা বিভাগের এসিএফ ফাহিম মাসুদ, স্থানীয় রেঞ্জের বিভিন্ন অফিসের রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তারা। এ ছাড়াও অভিযানে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার বাহিনী এবং উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

বন বিভাগ ও এলাকাবাসীর দাবি, গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন বিভাগের জমি দখল করে হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুধু ৫ আগস্ট নয় সব সময়ই বনের জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় দালালচক্র ও বনের অসাধু কর্মকর্তাদের টাকা-পয়সা দিয়ে এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে আসছে দখলদাররা। এ ছাড়াও বনের জমি দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও বিনোদন কেন্দ্র। তবে ৫ আগস্টের পর চন্দ্রা রেঞ্জের চন্দ্রা বিট অফিসের আওতায় সবচেয়ে বেশি অবৈধ স্থাপনা তৈরি হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই দোতলা ভবন, কেউ টিনশেড আবার কেউ আধাপাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। বনের জমি দখলের মহাউৎসবে ঘর নির্মাণ করে বাসা ভাড়া দিয়েছেন স্থানীয় অসাধু ব্যক্তিরাও। গত শনিবার এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে সরিয়ে নেওয়ার জন্য মাইকিং করে বন বিভাগ। কিন্তু কেউ তাতে কর্ণপাত করেননি। অবশেষে ঈদের আগের দিন রবিবার দিনব্যাপী যৌথ বাহিনীর সহযোগিতায় ৪টি এক্সকাভেটর দিয়ে সিনাবহ ও বাঘাম্বর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় বন বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযানকালে স্থানীয় লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে বন বিভাগ ও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বন বিভাগের লোকজনসহ উভয়পক্ষের ১০-১২ জন আহত হয়েছেন। ঈদের আগের দিন হঠাৎ এমন উচ্ছেদ অভিযানে ঈদুল ফিতরের সব প্রস্তুতির মালামালসহ দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয় বন বিভাগ। ফলে গত তিন দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শতাধিক পরিবারের মানুষ। এরা বেশিরভাগ পোশাক শ্রমিক ও নদীভাঙনপ্রবণ এলাকার মানুষ।

খবর পেয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইজুদ্দিন আহমেদ। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। ওই নেতা বলেন, যে পরিমাণ ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়েছে, আশা করছি আগামী ১৫-১৬ দিন তারা ভালোভাবে কাটিয়ে দিতে পারবেন। প্রয়োজনে তাদের আরও সহায়তা দেওয়া হবে।’

ক্ষতিগ্রস্ত আবুল কালাম বলেন, ‘যারা নতুন ঘর নির্মাণ করেছেন, তাদের ঘর ভেঙে দেওয়া হোক। কিন্তু আমরা ১০ থেকে ১২ বছর আগে যে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছি, সেই ঘরও ভেঙে দিয়েছে। ঈদের আগের দিন আগে হঠাৎ ঘর ভেঙে দেওয়ায় এখন আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল জলিল (৭৫) বলেন, ‘আমার জমির কাগজপত্র সব সঠিক থাকলেও তারা আমার কাগজ দেখেনি। উল্টো লাঠি দিয়ে আঘাত করে আমার হাত ভেঙে দিয়েছে। মাহমুদা বেগম বলেন, আমরা রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়ার মতো অবস্থায় নেই। কেউ কিছু দিলে খাচ্ছি। খোলা আকাশের নিচে থাকছি। রাতে ঘুমাই না, জেগে থাকি।’

পান্না আক্তার বলেন,ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারি নাই। টাকা, গহনা গেল কই?’ নার্গিস বেগম বলেন,স্বামী ক্যানসারের রোগী। পাঁচ সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে প্রতিবন্ধী। এখানে বিদ্যুৎ, পানি, টয়লেট ব্যবস্থা নেই, কীভাবে থাকি?’ আসমা বেগম বলেন, ‘ঘরবাড়ি করার সময় বন বিভাগের লোকদের টাকা দিয়েছি। এখন হঠাৎ ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে ঈদের আনন্দ কেড়ে নিল!

এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর চন্দ্রা রেঞ্জ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শহিদুল ইসলাম শাকিল বলেন, সরকারের নির্দেশক্রমে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকালে বন বিভাগের লোকজন টাকা নিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,কই আমি তো টাকা নেইনি। এ ছাড়াও আমাদের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বনভূমি পুনরুদ্ধারে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।

 

 

 


এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ