শিরোনাম
কাভার্ডভ্যান ও ইছার মাথা (ট্রাক্টর) মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত দুই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মিশন ও ভিশন নির্ধারণ’ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হলেন কুমিল্লার হাজী ইয়াছিন ইসি’র অধীনে এনআইডি চাই: ঝিনাইগাতীতে মানববন্ধন  সেই ভাইরাল কন্যা ফারজানা সিঁথিকে ধর্ষণের হুমকি, অতঃপর সাজেকে ভয়াবহ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় লুসাই ও ত্রিপুড়া পরিবারের পাশে দাড়িয়েছে বিজিবি  গোয়াইনঘাটে ১২ কোটি টাকার চো রা ই পণ্যের চালান জ*ব্দ সংসদ নির্বাচন ঘিরে সিলেট-৪ আসনে প্রার্থীদের প্রচানায় সরগম স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে সিলেটে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কৃষক কৃষণী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৬:১৫ অপরাহ্ন

সেই ভাইরাল কন্যা ফারজানা সিঁথিকে ধর্ষণের হুমকি, অতঃপর

স্টাফ রিপোর্টার / ৪ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫

সিলেট বুলেটিন বিনোদন ডেস্ক,

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় এক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ফারজানা সিঁথি। শুধু তাই নয়, সেই আন্দোলনের নানান সময়ে তাকে দেখা গেছে নানান ভূমিকায়। ফলে ভাইরাল কন্যা হিসেবেই পরিচিত পান তিনি। এবার সিঁথি ধর্ষণের হুমকি পেয়ে মামলা করলেন এক কনটেন্ট ক্রিয়েটরের বিরুদ্ধে। ফেসবুক লাইভে এসে সিঁথিকে ধর্ষণের হুমকি দেন হৃদয়। সেইসঙ্গে নেটিজেনদেরও উদ্বুব্ধ করেন। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাতে হৃদয়ের নামে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তিনি। আমিই বেছে নিতাম ছ্যাঁকা খাওয়া চরিত্র: বাপ্পারাজ

তিনি বলেন, ২৭ ফেব্রুয়ারি হৃদয় ফেসবুক লাইভে এসে আমাকে ধর্ষণের হুমকি দেন। পাশাপাশি আমার জীবনযাপন, চলাফেরা, পোশাক আশাক নিয়ে নোংরাভাবে কথা বলে। সেইসঙ্গে আমাকে ধর্ষণ করলে তিনি পুরস্কার দেবেন বলেও ঘোষণা দেন। এরপর বলেন, লাইভটি তখন দেখিনি। সম্প্রতি নজরে আসে আমার। এ অবস্থায় তার ওই লাইভ অনেকেই দেখেছেন। ফলে বিষয়টি আমার জন্য হুমকিস্বরূপ। আমি অনিরাপদ বোধ করছি। সে কারণে মঙ্গলবার শেরে বাংলা নগর থানায় গিয়ে মামলা করি। সম্প্রতি পাগলের বেশ ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বানিয়ে নারীদের প্রতি অশালীন অঙ্গভঙ্গি ও মন্তব্য ছড়ানোর অভিযোগে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কবর থেকে তোলা হলো সহকারীর লাশ, যা বললেন তানজিন তিশা

বিষয়টি উল্লেখ করে সিঁথি বলেন, ওনাকে আপনারা চিনবেন, সম্প্রতি সাভার থানা তাকে গ্রেপ্তার করেছে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য। আমি তার নামে একটি এফআইআর দায়ের করেছি ধর্ষণের হুমকি ও মানহানির জন্য। যারা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চায়, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা উচিত। সিঁথিকে সবশেষ দেখা গেছে হাবিব ওয়াহিদের একটি মিউজিক ভিডিওতে। ‘একলা মানুষ’ শিরোনামের ওই গানচিত্রে মডেল হিসেবে ছিলেন তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

“ভাষার জন্য লড়াই, গৌরবের ২১শে ফেব্রুয়ারি” ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল ও হৃদয়বিদারক দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেক বীর বাঙালি শহীদ হন। তাদের আত্মত্যাগ শুধু বাংলাদেশের নয়, সমগ্র বিশ্বের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার এক গৌরবময় দিন। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ভাষার জন্য আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায় না। আমরা যেন এই আত্মত্যাগের মর্যাদা রাখি এবং মাতৃভাষার সঠিক চর্চা ও সংরক্ষণে সচেষ্ট থাকি। নতুন প্রজন্ম কী ভাবে ২১ শে ফেব্রুয়ারী ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা’ দিবস নিয়ে ? এই বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী কথা বলেছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি এর ডিআইইউ প্রতিবেদক- নুর ইসলাম একুশে ফেব্রুয়ারি: ভাষা আন্দোলনের অমর গাথা বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে একুশে ফেব্রুয়ারি এক অনন্য ও গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৫২ সালের এই দিনে পাকিস্তানি শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাঙালি ছাত্র-জনতা। রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকে। তাঁদের আত্মত্যাগের ফলেই বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে ঘোষণা করে, যা আজ বিশ্বব্যাপী ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের প্রতীক হিসেবে পালিত হয়। একুশের চেতনা আমাদের মাতৃভাষাকে ভালোবাসতে, সঠিকভাবে চর্চা করতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ভাষার মর্যাদা তুলে ধরতে উদ্বুদ্ধ করে। ভাষার জন্য জীবনদানের এমন ইতিহাস বিশ্বে বিরল, যা বাঙালি জাতির অহংকারের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। “একুশ মানে মাথা নত না করা, একুশ মানে নিজের ভাষার জন্য লড়াই” তাহেরা ইসলাম তনিমা সিভিল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। ভাষার জন্য জীবন, বাঙালির ইতিহাস : ২১ শে ফেব্রুয়ারী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও একাধারে দিনটি শহীদ দিবস। দিনটিতে আমরা ভাষার জন্য শহীদ হওয়া সকল শহীদদের স্মরণ করছি। ভাষার দাবিতে শহীদ হওয়ার বিরল দৃষ্টান্তের ইতিহাস পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও দেখা যায় না। ভাষা কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি একটি জাতির পরিচয় ও সংস্কৃতির বাহক। মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং এর সঠিক চর্চা করা আমাদের দায়িত্ব। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে বিভিন্ন ভাষার আধিপত্যের মধ্যে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও সঠিক চর্চা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। যে জাতি তার দেশ ও ভাষাকে যত বেশি মর্যাদা দেবে সে দেশ তত বেশি উন্নত হবে।ভাষার মাস,আত্ম-পরিচিতির মাস ফেব্রুয়ারি। ভাষা আত্মার পরিচিতি বহন করে যার মধ্যে চিন্তা -চেতনা বিকাশ লাভ করে এবং সেগুলো প্রকাশও পায়। ফেব্রুয়ারি যেহেতু আমাদের ভাষার মাস সেহেতু অবশ্যই ভাষা নিয়ে আলাপ–আলোচনা থাকবেই।যে বাংলাকে আমরা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি, সেই ভাষার বর্তমান অবস্থা কী? মর্যাদার দিক থেকে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা করার যে জাতীয় অঙ্গীকারটি প্রায়ই আমরা উচ্চারিত করি, তা কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে? এই প্রশ্নগুলো কিন্তু থেকেই যায়! মাতৃভাষা বাংলার প্রতি আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের, বিশেষত আমাদের নবীন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি কী? শিক্ষার্থী সমাজ, শিক্ষিত কর্মজীবী সমাজ, অফিস–আদালত, শিল্প–ব্যবসা, সেবা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠন, সামগ্রিকভাবে নাগরিক সমাজ বাংলা ভাষাকে কীভাবে মূল্যায়ন করে? আমি নিজেও একজন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী কিন্তু আমি মনে করি বাঙালি হিসেবে আমাদের নিজেদের মাতৃভাষার উপর পূর্ণ জ্ঞান থাকা উচিত। সেকেন্ড ল্যাংগুয়েজ আমাদের থাকবে বিদেশি ল্যাংগুয়েজ আমাদের থাকবে সবকিছুর শিক্ষা আমরা অর্জন করব সেটা আমাদের প্রফেশনাল জীবনে কাজে লাগানোর জন্য, কিন্তু মাতৃভাষা সব কিছুর উর্ধ্বে। তামান্না ফেরদৌস ইংরেজি বিভাগ, সভাপতি, ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, ডিআইইউ। ভাষার জন্য আত্মত্যাগের ইতিহাস : ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির জীবনে এক ঐতিহাসিক ও গভীর বেদনার দিন। ১৯৫২ সালের এ দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিলরত ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ চালায় পাকিস্তানি ঘাতক, পুলিশবাহিনী। রক্তে রঞ্জিত হয় ঢাকার রাজপথ, ঝরিয়ে যায় তাজা তাজা প্রাণ। রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকে শহীদ হন, আহত হন প্রায় চার শতাধিক মানুষ। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার দাবিতে প্রথম শহীদ হওয়ার বিরল দৃষ্টান্তের সৃষ্টি হয় আজকের বাংলাদেশ, তথা সেই সময়ের পূর্ব বাংলায়। বাঙালিরা তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা, মাথা নত না করা, অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেওয়া এবং বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর প্রকৃত স্বভাব তুলে ধরে পুরো বিশ্বের সামনে। ভাষা আন্দোলনের এই প্রেক্ষাপট তাৎক্ষণিক কোনো ঘটনা ছিল না; বরং এটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকশ্রেণির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বাঙালি সংস্কৃতি ও ভাষা ধ্বংসের অপচেষ্টা। পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির আগেই এর রাষ্ট্রভাষা কী হবে, তা নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকে। তৎকালীন পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ মানুষ বাংলায় কথা বলতেন, আর মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ উর্দুতে কথা বলতেন। তারপরও শাসকগোষ্ঠী উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করার অপচেষ্টা চালায়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানালে তা উপেক্ষিত হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এবং ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানালে ছাত্ররা সঙ্গে সঙ্গে মুখোধ্বনি দিয়ে প্রতিবাদ জানায়। ২১শে ফেব্রুয়ারির ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। ২২ ও ২৩শে ফেব্রুয়ারি সর্বস্তরের মানুষ পূর্ণ হরতাল পালন করে এবং সভা-শোভাযাত্রাসহ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ২২শে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শফিউর, আউয়াল ও অলিউল্লাহ নামে এক কিশোর শহীদ হন। ২৩শে ফেব্রুয়ারি পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। এ নির্লজ্জ, পাশবিক পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মুসলিম লীগ সংসদীয় দল থেকে সেদিনই পদত্যাগ করে। ভাষা শহীদদের স্মৃতিকে চির অম্লান করে রাখতে নির্মিত হয় প্রথম শহীদ মিনার, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি শহীদ শফিউরের পিতা উদ্বোধন করেন। ক্রমাগত আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত দাবি মেনে নিতে বাধ্য হন এবং ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম প্রণীত সংবিধানে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একমাত্র রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায় বাংলা। ভাষা আন্দোলন, মাতৃভাষা এবং নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ইউনেস্কো, ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর, ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, যা আজ বিশ্বে গভীর মর্যাদা ও সম্মানের সাথে উদযাপন করা হয়। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে, আমরা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেইসব বীর শহীদকে, যারা ভাষার জন্য নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাঙালি জাতির সাহসিকতার ইতিহাস আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। মো:রবিউল ইসলাম পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাষার জন্য আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় বিরল ঘটনা : একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি বাঙালি জাতির অনুভূতিতে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যা একাধারে ভাষা আন্দোলন দিবস ও জাতীয় শহীদ দিবস নামে পরিচিত। দিনটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ( বাংলা ৮ ফাল্গুন ১৩৫৮ ) পাকিস্তান সরকারের দেওয়া ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে বাঙালি ছাত্র-জনতা তাদের ভাষার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে নামলে পুলিশ তাদের উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে এতে বাঙালি বীর সন্তান আবুল বরকত, রফিক উদ্দিন আহমেদ, শফিউর রহমান,আব্দুস সালাম সহ নাম না জানার অনেকে শহীদ হন। ভাষার জন্য আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় বিরল ঘটনা।যদিও এর পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ এক বৈষম্যের ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পূর্ব বাংলার বাংলা ভাষাভাষী ৪ কোটি ৪০ লাখ জনগণ পাকিস্তানি অধিরাজ্যের অংশ হয়ে যায় ফলে পাকিস্তানের সরকার, প্রশাসন, সামরিক বাহিনী, থেকে সর্বক্ষেত্রে পাকিস্তানের পশ্চিম প্রান্তের আধিপত্য দেখা যায় অন্যদিকে পাকিস্তানের পূর্ব প্রান্তের মানুষ সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। পাকিস্তানের মোট নাগরিকের ৫৪ শতাংশ ছিল বাঙালি যাদের মুখের ভাষা ছিল বাংলা তা সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকার করাচিতে জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনে শুধুমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা এবং স্কুল কলেজ মিডিয়াতে ব্যবহার করার প্রস্তাব করা হয় যা বাঙালি জাতির জন্য ছিল চরম বৈষম্য। এই বৈষম্যের পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ফুলে চেপে উঠে বাঙালি ছাত্র জনতার ক্ষোভ। একুশে ফেব্রুয়ারির গুলির ঘটনায় পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ শে ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গনে করে ওঠে প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৭ই মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ১৯৫৬ সালের ২৯ শে ফেব্রুয়ারি। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় বাংলা ভাষায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার এতে ১৮৮ টি দেশ সমর্থন জানালে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে যে দুইজন বাঙালির ভূমিকা অনস্বীকার্য তারা হলেন কানাডার ভ্যানকুভারে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম তারাই প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান এর কাছে 1998 খ্রিস্টাব্দে । যারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৫২ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিনটি জাতীয় শহীদ দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি রাত বারোটা এক মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে একাধিক্রমে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ থেকে শুরু করে সাধারণ জনতা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষিত হয় এবং ওই দিন শহীদ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে রেডিও টেলিভিশন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যা ব্যক্তির জাতীয়তাবাদ বিকাশে তাৎপর্য ভূমিকা রাখে। এছাড়াও বাংলা একাডেমি ভাষা শহীদদের স্মরণে ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে ঢাকায় একুশে বইমেলার আয়োজন করে। দিনটি বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে শহীদদের আত্মত্যাগ নিজের মধ্যে ধারণ করে । শুভ্র মন্ডল মনোবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। মাতৃভাষার গুরুত্ব ও বর্তমান প্রেক্ষাপট : ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে, বাংলাদেশে তরুণদের আত্মদান ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। পৃথিবীর বুকে বাংলায় একমাত্র ভাষা যার জন্য অসংখ্য মানুষ রক্ত ও ঝরেছে তাই এই ঐতিহাসিক দিনটি স্বাধীন বাংলাদেশের গৌরবের বিষয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট অবিভক্ত ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয় পাকিস্তান ছিল দুটি অংশ একটি পশ্চিম পাকিস্তান অপরটি পূর্ব পাকিস্তান। এই পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশ পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা আমাদের উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। ১৯৪৮ সালের ২১ শে মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এক জনসভা গঠন করেন যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। একথা শুনে বাংলার দামাল ছেলেরা সাথেই এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই আবার ১৯৫২ সালের ৩০শে জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নাজিমউদ্দীন উদ্দিন ও এক জনসভায় দাম্ভিকতার সঙ্গে একই ঘোষণা দেন। প্রতিবাদে ছাত্ররা ধর্মঘট পালন করে তারা ১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল দশটায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। পুলিশ নিরস্তর ছাত্রীদের ওপর বন্দুক, বেয়নেট ,টিয়ার গ্যাস, আর লাঠিসো নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল । এতে সালাম, বরকত, জব্বার ,রফিকসহ নাম জানা অনেক শহীদ ছিলেন। বিনিময়ের রক্ষা পেল সেই মাতৃভাষা। কাজী তাহসিন বিবিএ বিভাগ, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়।