পিরোজপুর প্রতিনিধি:
পিরোজপুরে মাদক নির্মূল করার দায়িত্ব যার, সেই তিনিই মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে এক নারীর সঙ্গে ইয়াবা সেবন করছেন। সেই ঘটনাস্থল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সরকারি ভবনেই। তার স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ওই কর্মকর্তার নাম মো. বাবুল সরকার। তিনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পিরোজপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত রয়েছেন। এই পদে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একাধিকবার তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি হয়েছিল।
কিন্তু ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘বাঙালির বিশ্ববিক্ষণ’ বই লিখে শাস্তির বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়েছেন বলে জানা যায় ।
মাদকের সঙ্গে জড়িত পিরোজপুরের একাধিক ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাদক জব্দ করে তা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. বাবুল সরকার অনেক সময় নিজের কাছে রেখে দেন। পাশাপাশি অর্থের বিনিময়ে নষ্ট করছেন মামলায় ব্যবহার করা যায় এমন আলামতও। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী ও পৃষ্ঠপোষকদের সহযোগিতা করার অভিযোগও রয়েছে।
তবে বিষয়টি নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি।
শুধু বাবুল সরকার নন, তার মতো অনেকেই মাদক সেবন, ঘুষ, দুর্নীতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। কারো কারো বিরুদ্ধে এলাকার নিরীহ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে ঘুষ আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। এমন নানাবিধি অভিযোগে গত এক বছরে ২১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এদের তিনজনকে অব্যাহতি এবং ৪ জনকে লঘুদন্ড দেওয়া হয়েছে।
বাবুল সরকারের ইয়াবা সেবনের স্থিরচিত্র অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেখানো হয়েছে। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছবিটি বাবুলের বলে এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। তারা আরো বলেছেন, ছবির ঘটনাস্থল অধিদপ্তরের চারতলায়। যেখানে সহকারী পরিচালক বাবুল সরকার রাত যাপন করেন। তিনি ২০২৪ সালের ১৫ এপ্রিল পিরোজপুরে সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। সেই থেকে তিনি অধিকাংশ সময় চারতলায় অবস্থান করছেন। সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াত সীমিত।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পিরোজপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. বাবুল সরকারের আপত্তিকর ছবি সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার সকালে এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য মোবাইল ফোনে বাবুল সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলতে ব্যর্থ হই, একাধিকবার তার সরকারী নম্বরে ফোন দেওয়ার পর রিসিভ করে ফোনে কথা না বলে কেটে দেয়। এমনকি তার পিরোজপুরের সরকারি কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
অফিসের কর্মচারীবৃন্দ বলেন সকাল ৯ টার পরে অফিস থেকে কাউকে কিছু না বলে তিনি বের হয়ে যান।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (অপারেশনস্ ও গোয়েন্দা) অতিরিক্ত ডিআইজি তানভীর মমতাজের মোবাইল ফোনে ইয়াবা সেবনের স্থিরচিত্র পাঠানো হলে তিনি এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ছবিটি কখন কোথায় তোলা হয়েছিল সেটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। তিনি আরো বলেন, বাবুল সরকারের বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি যদি সত্যতা পাওয়া যায় তবে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।