সিলেট বুলেটিন ডেস্ক:
তিস্তাপাড় থেকে কারো হাতে ঢাক ঢোল, কারো হাতে ঘুড়ি, কারো কারো হাতে পানির দাবিতে তৈরি করা ব্যানার ফেস্টুন। ছুটছেন তিস্তা তীরে। দাবি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে দুই দেশের পানি নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে তা বাস্তবায়ন। একই সঙ্গে তিস্তা মহাপরিকল্পনাও বাস্তবায়ন।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে হাজারো মানুষ ছুটছেন কর্মসূচিতে অংশ নিতে। মঙ্গলবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে এই আয়োজন। দুপুরে তিস্তার কাউনিয়া অংশে পরিদর্শন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুসহ শীর্ষ নেতারা।একই দাবিতে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে ১১৫ কিলোমিটার তিস্তার দুই পাশে ২৩০ কিলোমিটার অংশের ১১টি স্পটে এক যোগে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি যোগ দিতে আসছেন তিস্তা তীরবর্তীতে বসবাসরত মানুষজন।
এদিকে, দাবি আদায় অংশ নেয়া মানুষজনের রাত্রী যাপনের জন্য বানানো হয়েছে শত শত তাবু। ব্যবস্থা করা হয়েছে রাতের খাবার। বিনোদনের জন্য, দেশীয় খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে।
আয়োজকরা বলছেন, তিস্তা নদী ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন নদী। রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার ও ১২টি উপজেলার ৪৪টি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে তিস্তা নদী প্রবাহিত। তিস্তা শুধু একটি মাত্র প্রবাহ নয়, শাখা-প্রশাখ প্রাণ-প্রকৃতি। শাখা-প্রশাখা ও উপনদী মিলে তিস্তা সংযুক্ত নদীর সংখ্যা ২২টি। ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বেনীসদৃশ্য তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশে প্রবাহ ১১৫ কিলোমিটার উপনদী মিলেই তিস্তার উৎপত্তিস্থল থেকে ভাটির ব্রহ্মপুত্রের সীমানা পর্যন্ত; ৩১৫ কিলোমিটার বিস্তৃত তিস্তা অববাহিকাটিকে একটি ইউনিট ধরে সারা বছরের পানির প্রবাহকে হিসেবে এনে অববাহিকা ভত্তিক যৌথব্যবস্থাপনা গড়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ছিল।
এ লক্ষে ২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশ একটি চক্তিতে সই করেছে। এর সঙ্গে খরাকালে তিস্তা পানি চক্তিটিও চূড়ান্ত হয়েছিল।চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পেতো ৩৭.০৫ শতাংশ, ভারত পেতো ৪২.০৫ শতাংশ পানি। শেষ মুহূর্তে মমতার আপত্তির মুখে তিস্তা পানি চুক্তি হয়নি। হয়নি সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে অববাহিকা ভিত্তিক যৌথ ‘তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা।’ এজন্য প্রয়োজন ছিল তিস্তার উজানে পাহাড়ি অঞ্চলে যৌথভাবে একটি বড় জলাধার নির্মাণ করা। এই জলাধার থেকে নিয়ন্ত্রিত পানি ছেড়ে দিতে হতো, যাতে করে ভাটিতে বর্ষাকালে পানি প্রবাহ কমে যায় এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ বাড়ে। এতে দুই দেশের সেচের পানি সংকটের সমাধান হবে এবং বিপুল পরিমাণ জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব।
জানা গেছে, দেড়যুগেও কোনো ফল মেলেনি। শুস্ক মৌসুমেরো পানি প্রত্যা আগে অল্প কিছু পানি হলেও তারা দেড়যুগেও সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে পুরো পানি প্রত্যাহার করা হয়েছে। খরাকালেও তারা পানি ছাড়তো। আন্তঃসীমান্ত নদীর উজানে স্থাপনা তৈরি করতে হলে ভাটির দেশকে জানাতে হবে। এটিই আন্তর্জাতিক নিয়ম। শক্তিশালী প্রতিবেশী তার শক্তিমত্তার জোড়ে সমাধান আটকে রেখেছে। পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিম সরকার বাংলাদেশকে না জানিয়ে একতরফাভাবে তিস্তা নদীতে নির্মাণ করেছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, ব্যারাজ, বাঁধসহ নানা স্থাপনা। তিস্তা ভারতের জন্য আশির্বাদ হলেও বাংলাদেশের দুঃখে পরিণত হয়েছে। উজানের ভারত ৩৫টির বেশি বাঁধের মাধ্যমে পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। তিস্তা নদীর পানি শুধু কৃষির জন্য নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে ৫টি জেলায় জলবিদ্যুৎ অপারেশনাল আছে।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও রংপুর বিভাগ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীব দুলু বলেন, ‘এই আন্দোলন সাধারণ মানুষের। মানুষজন তাদের দাবি আদায়ে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নিচ্ছেন।