নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারীরা এখন পরিবার সমাজ আর রাষ্ট্রের উন্নয়নে তাদের যোগ্যতা মেধা শ্রম দিয়ে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন।জীবনযুদ্ধের বিভীষিকাময় অধ্যায় অতিক্রম করে দেখছেন সাফল্যের সোনালী দিন।তিন নারী হচ্ছেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আনোয়ারা-দিলরুবা ও শামছুন
উপজেলার মহিষখেড় গ্রামের মৃত শফিকুর রহমানের ও মাতা নার্গিস বেগমের মেয়ে মোছাঃ আনোয়ারা খাতুন।এইচ এসসি পাশ করার পর ২০০৩ সালে বিবাহ বন্ধনেআবদ্ধ হন এবং ঐ বছরই গ্রামের সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ের চাকরী নেন। ৫ বছরের ছেলে ৪ বছরের কণ্যা সন্তান তাদের সংসারে। এমন সময় সড়ক দূর্ঘটনাায় স্বামী মারা যান। নানা কারনে স্বামীর বাড়ি ছাড়তে হয় তাকে।আনোয়ারার জীবনে নেমে বিভীষিকাময় অন্ধকার। তিনি শোককে শক্তিতে পরিনত করে সন্তানের ভরন পোষণসহ নিজে লেখাপড়া চালিয়ে যান।তার অদম্য স্পৃহা আর ধৈর্য নিয়ে বিএসএস,এমএসএস সমাপ্ত করেন। বাবার বাড়িতে থেকেও লেখাপড়া চাকুরী সন্তানদের লেখা পড়া চালিয়ে যান নিজে আর বিয়ের চিন্ত করেননি।তার মেয়ে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে লেখাপড়া করছে এবং ছেলে এ বছর এসএসসি পরিক্ষার্থী।তিনি ২০০৮সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ট্র শিক্ষিকা,২০১৬ সালে শ্রেষ্ট সহকারী শিক্ষিকা, ২০২৪ সালে শ্রেষ্ট প্রধান শিক্ষকের সম্মান অর্জন করেন।উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক কার্যালয় তাকে ২০২৪ সালে চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য শ্রেষ্ট জয়ীতার সম্মাননা প্রদান করে।
শামছুন্নাহারঃ একই উপজেলার বুড়দেও গ্রামের আব্দুল মতিন ও খাদিজা বেগমের মেয়ে।স্বামী শরিফুল ইসলাম বেঁচে নেই।এইচএসসি পাশের পর শুরু করেন দাম্পত্য জীবন। লেখাপড়ার ইচ্ছা থাকা সত্বেয় সংসারের নানা প্রতিকুলতায় বাধাগ্রস্হ হয়।তার ইচ্ছে ছিল যত ঝড়ঝঞ্জা আসুক সন্তাদের মানুষ করতে হবে।স্বামীর ব্যবসা,ব্রাকে দর্জি প্রশিক্ষকের কাজও মহামারী করোনা কেড়ে নেয়।স্বামীকেও হারান।জীবন যুদ্ধে ঘোর অন্ধকার নেমে এলেও হাল ছাড়েনি তিনি। কঠোর পরিশ্রম করে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যান। ছেলে হাসান শাহরিয়ার আদিব রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে,মেয়ে তাহসিন ইসলাম আনিসা ভার্সিটিতে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। শামছুন্নাহারকে সফল জননী হিসবে উপজেলা পর্যায়ে সম্মাননা প্রদান করেছে প্রশাসন।মোছাঃ দিলরুবা বেগম একই উপজেলার দক্ষিণ বুড়দেও গ্রামের তাজুল ইসলাম,মাতা দিলোয়ারা বেগমের মেয়ে। ৮ম শ্রেণীতে থেকেই স্বপ্ন দেখতেন জীবনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার।তার জানার আগ্রহ ছিল উপজেলার বিভিন্ন অফিসের কার্যক্রমে মানুষ কি ভাবে উপকৃত হয়।তথ্য জানা আর কাজে লাগানোর আগ্রহ শিশুকাল থেকেই মনে জাগ্রত হয়।জানে পারেন যুবউন্নয়ন অফিসে দর্জি আর ব্লকবাটিকের কাজ শেখানো হয়।সুযোগ নিতে দেরি করেননি।সাথে চলে পড়ালেখা।প্রশিক্ষিত হয়ে বাড়িতেই দোকান খুলেন।অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে শুরু করেন।২০১৬ সালে নরসিংদীতে তার বিয়ে হয়। সেখানে তার ননদের পার্ললারের দোকানের কাজও শিখেন।২০২০ সালে স্বামী মারা যান। তখন তিনি ছিলেন গর্ভবতী।এমন সময় স্বামীকে হারিয়ে তার জীবেনে নেম আসে অমাবস্যার অন্ধকার।স্বামীর বাড়ি ছেড়ে আসতে হয় তাকে। সীমাহীন দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিন কাটে।প্রবাসে চলে যাওয়ার পরামর্শও কেউ কেউ দিয়েছেন।দিলরুবা নিজেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তার গ্রহনকৃত প্রশিক্ষনকে কাজে লাগান। বাড়িতে পার্লারের দোকান শুরু করেন। কিছু সময়ের ব্যবদানে কাটতে থাকে পরিবারের দৈন্যতা।সন্তানের লেখা পড়া,মা বাবা ভাইবোনসহ সকলের ভরন পোষনে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন।মাসে ৫০/ ৬০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে তার পার্লারে।সেকানে একজনের কর্মসংস্থানও হয়েছে।তার কঠুর শ্রম ধৈর্যের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা হিসাবে অর্থনৈতিক সফলতা পেয়েছেন।উপজেলাপ্রশাসন এই তিন নারীকে ২০২৪ সালের শ্রেষ্ট জয়ীতারসম্মাননা প্রদান করেছেন।