বান্দরবান প্রতিনিধি ঃ
বান্দরবানের জেলার শয্যা বিশিষ্ট লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনটি এক্সরে মেশিনের মধ্যে একটি দুই বছর ধরে ও দুটি গত এক দশক থেকে অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সচল একমাত্র এক্সরে মেশিনটি ২০২৩ সালের লামার ভয়াবহ আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে নিমজ্জিত হয়ে অচল হয়ে যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে এক্সরে মেশিনটি মেরামত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখায় বার বার পত্র দেওয়ার পরও এক্সরে মেশিন মেরামতের কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এখিং মার্মা। কবে নাগাদ এই অচল এক্সরে মেশিন মেরামত করে সচল করা হবে তা কেউ জানাতে পারছে না।
জানা গেছে, ২০২০ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টিবিএল অ্যান্ড এএসপির মাধ্যমে ফুজি কোম্পানি একটি ডিজিটাল এক্সরে মেশিন লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরবরাহ করেন। ২০২৩ সালের আগষ্ট মাসে অতিবর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় লামা হাসপাতালসহ লামা শহর তলিয়ে যায়। এই পাহাড়ি ঢলে হাসপাতালের টিবিএলের সরবরাহকৃত এক্সরে মেশিনসহ আরও দুইটি এক্সরে মেশিনই পানিতে নিমজ্জিত হয়ে অচল হয়ে যায়। এছাড়া হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি, জেনারেটর, অটোক্লেভ মেশিনসহ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়।
লামা হাসপাতালের স্টোর কিপার মো. নওফেল জানান, এক্সরে মেশিন দুটি মেরামত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট লাইন ডাইরেক্টর বরাবরে অনেকবার পত্র দেওয়া হয়েছে। এই পত্র প্রেরণের পর টিবিএল ব্রাক অফিসের মাধ্যমে একটি প্রতিনিধি দল এক্সরে মেশিন মেরামতের জন্য চেষ্টা করেন। ব্রাকের প্রতিনিধি দল লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানায় নষ্ট মেশিন মেরামতের জন্য জাপান থেকে যন্ত্রাংশ আনতে হবে। কবে নাগাদ যন্ত্রাংশ আনা হবে বা এক্সরে মেশিন মেরামত করতে কতদিন সময় লাগবে তার সুনির্দিষ্ট সময় ব্রাকের প্রতিনিধি দল জানাতে পারেনি।
বান্দরবান জেলার অর্ধেক জনসংখ্যার বসবাস অত্র লামা উপজেলায়। এছাড়া পার্শ্ববর্তী আলীকদমের চৈক্ষ্যং ও চকরিয়া উপজেলার বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের জনসাধারণ লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করে থাকে।
লামা সাংবাদিক ইউনিটির সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ সুজন বলেন, ‘বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে ন্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও লামা স্বাস্থ্য বিভাগের এই সমস্যা নিরসনে বিগত দিনে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ জেলা পরিষদ গ্রহণ করেনি। লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্হিবিভাগে ও আন্তঃবিভাগে প্রতি দিন ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। যন্ত্রপাতির অভাবে সঠিক রোগ নির্নয় করতে না পারায় বিনা চিকিৎসায় বেশিরভাগ রোগীকে ফিরে যেতে হয়। অনেককে অন্যত্র চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ নিয়ে ফিরে যেতে হয়। এ দিকে হাসপাতালের বিদ্যুৎ লাইনে লো-ভোল্টেজের কারণে ওটি, অটোগ্লাব মেশিনসহ বিভিন্ন কাজ করা যাচ্ছে না।
লামা হাসপাতালে আঘাত নিয়ে ভর্তি রোগী রূপসীপাড়ার মংপ্রু পাড়ার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন ও গজালিয়া ইউনিয়নের মংব্রাচিং মার্মা জানান, আঘাতজনিত কারণে চিকিৎসা নিতে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ডাক্তার তাদের এক্সরে করার পরামর্শ দেয়। হাসপাতালে এক্সরে না থাকায় টাকার অভাবে লামার বাহিরে গিয়ে এক্সরে করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি । এক্সরে করতে না পারার কারণে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা না নিয়েই পরবর্তীতে তাদের বাড়ি ফিরে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এখিং মার্মা জানান, আইসিডিডিআরবি পোর্টেবল এক্সরে দিয়ে সপ্তাহে একদিন লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের এক্সরে করা হতো। বর্তমানে গত দুইমাস ধরে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। হাসপাতালের পুরাতন দুটি অচল এক্সরে মেশিন চালু করা সম্ভব নয়। ২০২৩ সালে বন্যায় ডুবে যাওয়া অপর চালু এক্সরে মেশিনটি মেরামত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর বরাবরে অসংখ্যবার পত্র দেওয়া হয়েছে। অধিদপ্তর থেকে মেরামতের জন্য আশ্বস্থ করা হয়েছে।
বান্দরবান জেলার সিভিল সার্জন দিলীপ কুমার দেবনাথ দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি পএিকার প্রতিনিধি কে বলেন, ‘লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর নষ্ট যন্ত্রপাতির বিষয়ে আমাকে জানানো হয়েছে।এক্সরে মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ মেরামতের জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ।