স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট, ১৫ জুলাই ২০২৫ – সিলেট সদর উপজেলার মোকামগুল এলাকায় উঁচু টিলা কেটে সাবাড় করা হচ্ছে নির্বিচারে। পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ এই কর্মকাণ্ডে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ৪টি গাড়ি আটক করলেও, পরবর্তীতে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে পরিবেশ ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে এবং পরিবেশকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই মোকামগুল এলাকায় এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে টিলা কেটে মাটি বিক্রি করে আসছে। এতে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ভূমিধসের ঝুঁকিও বাড়ছে। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথ অভিযান চালায়। অভিযানে টিলা কাটার কাজে ব্যবহৃত ৪টি মাটি বহনকারী গাড়ি জব্দ করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে আটক করা হয়।
ব্যবস্থা গ্রহণের অভাব:
অভিযানের পর স্থানীয় জনমনে কিছুটা স্বস্তি এলেও, পরবর্তীতে দেখা যায় আটককৃত গাড়িগুলোর বিষয়ে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে গাড়িগুলো দ্রুতই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে টিলা কাটার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা পুনরায় তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা বলছেন, যদি আটককৃতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হতো, তাহলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা কমে আসতো।
পরিবেশের ওপর প্রভাব:
সিলেট অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম উপাদান হলো এর উঁচু টিলাগুলো। এসব টিলায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও জীবজন্তুর আবাসস্থল। নির্বিচারে টিলা কাটার ফলে এসব গাছপালা উজাড় হচ্ছে, যা জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি। এছাড়া, টিলা কাটার কারণে বৃষ্টির পানি সহজে নেমে যেতে না পারায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে, বিশেষ করে বর্ষাকালে।
দাবি ও প্রত্যাশা:
পরিবেশবাদীরা দ্রুত টিলা কাটা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, পরিবেশ আইন প্রয়োগে শৈথিল্য দেখালে দেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে। তারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, টিলা কাটার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক এবং পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে নির্দেশনা দেওয়া হোক। পাশাপাশি, জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি বলেও তারা মনে করেন।