স্টাফ রিপোর্টার:
১৯ মে দুপুর ১.৩০ সময় সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) একাংশের ডাকা এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, আতিকুর রহমান আতিক, সদস্য, বায়রা, তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সরকার ০১ জুন ২০২৪ তারিখ হতে বিদেশী কর্মী নিয়োগ বন্ধ রাখার পর সকল সোর্স কান্ট্রি হতে পুনরায় কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষে বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুন:উন্মুক্তকরণে দুই সরকারের মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাননীয় উপদেষ্টা বিগত ১৪-১৬ মে, ২০২৫ তারিখে মালয়েশিয়া সফর করে সেদেশের মানব সম্পদ মন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেছেন। মালয়েশিয়া সরকার ইতোমধ্যে ভিসাপ্রাপ্ত ৭,৯২৬ জন বাংলাদেশী কর্মী গ্রহণে সম্মত হয়েছে এবং তাদের অনুসৃত নীতি মোতাবেক বিদেশী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলদেশী কর্মীদেরকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে। এতে আশা করা যায় বছরে গড়ে ২ লক্ষ করে বাংলাদেশী কর্মী মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। বায়রা’র সাধারণ সদস্যগণ সরকারের এই উদ্যোগের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছেন এবং সরকারের নির্দেশনা মেনে কর্মী প্রেরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তবে অতীব দুঃখের বিষয় এই যে, বায়রা’র কতিপয় স্বার্থান্বেষী সদস্য দেশ ও কর্মীদের স্বার্থ বিবেচনা না করে বায়রা’র নেতৃত্ব এবং ব্যক্তিগত মুনাফার লক্ষে সরকারের সকল উদ্যোগ ব্যর্থ করে দেয়ার অপচেষ্টা গ্রহণ করেছেন। জনাব মোঃ ফখরুল ইসলাম বিগত ২০১৭-১৮ মেয়াদে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে সরাসরি ব্যবসা করেছেন এবং ২০২২-২৪ মেয়াদে নামে-বেনামে ত্রিবেনী ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-২২), হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (এইচআরডিসি, আরএল-৪৫২), সেলিব্রেটি ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৫০৩) সহ বিভিন্ন এজেন্সির নামে-বেনামে ব্যবসা করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করেছেন। তারা অবৈধভাবে মালয়েশিয়া হতে অতি উচ্চ মূল্যে ভিসা ক্রয় করে অভিবাসন ব্যয় সীমাহীন ভাবে বৃদ্ধি করেছেন এবং কোটাপ্রাপ্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে এসকল কর্মী প্রেরণ করে লাভবান হয়েছেন। এসকল অবৈধ ব্যবসার কিছু নমুনা আপনার সদয় এতদসঙ্গে পেশ করছি। এছাড়া জনাব মোঃ ফখরুল ইসলাম ওয়েলকাম ডায়াগনস্টিক এন্ড মেডিকেল সেন্টারের মাধ্যমে অনুমোদনহীন হাজার হাজার কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন।
এসকল স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিবর্গ নিজের স্বার্থের বাইরে কোন কিছু চিন্তা করতে পারেন না। দেশের অভ্যন্তরে মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা চালানো এবং মানব পাচার ও মানি লন্ডারিং এর মতো মামলা-মোকদ্দমায় ইন্দন যুগিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রেরণ করেছেন। এতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের TIP Ranking এর উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ফলশ্রুতিতে দেশের রপ্তানি খাত এবং জনশক্তি সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মালয়েশিয়া সরকার ইতোমধ্যে অন্যান্য সোর্স কান্ট্রি থেকে কর্মী নিয়োগ শুরু করলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এসকল মামলা-মোকদ্দমার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগে অনীহা প্রকাশ করছে।
এই প্রেক্ষিতে সরকারের উচিত হবে এসকল কুচক্রী মহল ও স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিবর্গের কথায় প্রভাবিত না হয়ে মালয়েশিয়া সরকারের অনুসৃত নীতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে স্বল্প ব্যয় ও নিরাপদ অভিবাসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেদেশে কর্মী প্রেরণের ব্যবস্থা করা। অন্যথায় মালয়েশিয়া সরকার অন্যান্য সোর্স কান্ট্রি হতে প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগ করবে। ফলশ্রুতিতে মালয়েশিয়ার অতীব সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারে বাংলাদেশী কর্মীগণ বৈধভাবে গমন করতে পারবেন না। এতে করে অবৈধভাবে বা ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে গমনের মতো ঘটনা ঘটবে, যার পরিনাম হিসেবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য দীর্ঘ দিনের মতো বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারের সিদ্ধান্তহীনতাই এজন্য দায়ী হবে।
এমতাবস্থায়, সরকারের উচিত হবে ভিত্তিহীন অভিযোগে রুজুকৃত মামলা-মোকদ্দমা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করে দেশে একটি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা। আগামী ২১-২২ মে’ ২০২৫ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ মিটিং-এ রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহের মধ্যে বিরাজমান সিন্ডিকেট-এন্টিসিন্ডিকেট সংক্রান্ত বিরোধকে গুরুত্ব না দিয়ে দেশের বেকার যুব সমাজের কর্মসংস্থানের স্বার্কেই সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। সুতরাং মালয়েশিয়া সরকারের সাথে ফলপ্রসূ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দেশ ও কর্মীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি পুন: উন্মুক্তকরণের ব্যবস্থা করা অতীব জরুরী।