প্রতিকী ছবি
সুনির্মল সেন:
রিকশাযোগে এক ভদ্রলোক এসে থামলেন ওসমানী মেডিকেলের একটি ফার্মেসীর সামনে। রিকশা থেকে নেমে চটের ছালা হাতে নিয়ে ঢুকে পড়লেন ফার্মেসীর ভেতরে। তারপর কিছু ওষুধ বের করে দিলেন ফার্মেসী ব্যবসায়ীর হাতে। ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা গুনে নিয়ে ভদ্রলোক চলে গেলেন অন্য ফার্মেসীতে। সেখানে গিয়ে কিছু ওষুধের অর্ডার সংগ্রহ করলেন।
এভাবেই সিলেটের অনেক ফার্মেসীতে প্রবেশ করছে ভারতীয় অবৈধ ওষুধ। যেগুলো বিকিকিনিতে নেই ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশনের অনুমতি। চোরাকারবারীরা এসব ওষুধ এনে লুকিয়ে বিক্রি করছে ফার্মেসী ব্যবসায়ীদের কাছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসকল ওষুধের বেশিরভাগ ভারতীয়। এর মধ্যে কিছু ওষুধ আছে যা যুব সমাজকে ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের পথে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কিছু অসাধু ফার্মেসী ব্যবসায়ী এসব ওষুধ বিক্রি করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই ভয়ংকর। সেবনকারীর রক্তনালী এক সময় সংকোচিত হয়ে যেতে পারে।
এদিকে ফার্মেসী ব্যবসায়ীরা তাদের ফার্মেসীতে থাকা চোরাকারবারীদের বিক্রিত কিছু ওষুধের ব্যাপারে বলেন, এসব ওষুধের মধ্যে অনেকগুলো ওষুধ আছে রোগীদের জীবন রক্ষাকারী। যা বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানীগুলো তৈরি করছে না। সিলেটের ফার্মেসীতে ভারতীয় ইডিগ্রা, সেনেগ্রা, কেবেট্রা, টারগেট—১০০, সিনকারা, বিজিবক্স, নট্রপিল সিরাপ, জেসটিন, পেরিয়েকটিন, ডেক্সমেথাসন, গার্ডিনাল, ফেনোবারবিটন, পাকিস্তানী গাইনোকোসাইড সহ বিভিন্ন ওষুধ রয়েছে।
বিশেষ করে ভারতীয় ওষুধগুলো সিলেটের সীমান্তবর্তী পথগুলো দিয়ে প্রবেশ করছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চোরাকারবারী জানিয়েছে। সে জানায়, কিছু ওষুধ তারা ঢাকা থেকেও আনছেন। এ ব্যাপারে বিএমএ’র কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি জানান, ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন এর অনুমতি ছাড়া এই ওষুধগুলো কিভাবে ফার্মেসীগুলোতে প্রবেশ করছে। তাছাড়া এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এগুলো বিক্রি হচ্ছে কিভাবে—এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
এদিকে এই ওষুধগুলোর মধ্যে কিছু ওষুধ রয়েছে যৌন উত্তেজক। যা যুব সমাজকে ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের পথে। একটি সূত্র জানায় এসব ওষুধ বেশিরভাগ ব্যবহার করছে যুবক ও উঠতি বয়সের তরুণরা। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসী থেকে লুকিয়ে কিনে নেয় তারা। আর কিছু অসাধু ফার্মেসী ব্যবসায়ীদের মুনাফা লোভই যুব সমাজের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে এসব ওষুধ সেবনকারী এক সময় ঈশ্বর প্রদত্ত শক্তি হারিয়ে ফেলবে। ফলে তাকে শুধুই ওষুধের উপর নির্ভরশীল হতে হবে। সেবনকারীর রক্তনালী ক্রমশ সংকোচিত হয়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ জানান, এ রকম ওষুধের পার্শ প্রতিক্রিয়া খুবই মারাত্মক। সেবনকারী প্রেসারের রোগী হলে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। হৃদরোগের ক্ষেত্রেও এসব ওষুধ ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, এসব ওষুধের উপর সরকারি বিধি নিষেধ থাকা সত্ত্বেও কিভাবে ফার্মেসীগুলোতে প্রবেশ করছে।
অবৈধ কিছু ওষুধ সম্পর্কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ফার্মেসী ব্যবসায়ী জানান, কিছু ওষুধ রয়েছে রোগীদের জীবন রক্ষাকারী। যা বাংলাদেশের প্রায় ৫শ’ ওষুধ কোম্পানীর একটিও তৈরি করছে না। উদাহরণ স্বরুপ তিনি জানান, বাংলাদেশী গ্যাকো কোম্পানীর প্রস্তুতকৃত বারডিনাল ও জেসন কোম্পানীর ফেনোসন ট্যাবলেট ও ইনজেকশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে বাধ্য হয়ে ভারতীয় ফেনোবারবিটন কিনতে হয়। ফেনোবারবিটন একজন রোগীর জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জেসন কোম্পানী বন্ধ হয়ে যাওয়া ফেনোসন ওষুধ বর্তমানে বাজারে ছাড়লেও কম সরবরাহ হচ্ছে। এই কোম্পানীর ৫/৬ হাজার টাকার ওষুধ রাখলে আমাদেরকে এক বক্স ফেনোসন দেয়া হয়। ফলে বাধ্য হয়ে আমরা ভারতীয় ফেনোবারবিটন রাখতে হয় রোগীদের চাহিদা মেটাতে। অবৈধ ওষুধ সিলেটের ফার্মেসীগুলোতে বিক্রি হচ্ছে কিভাবে— এরকম এক প্রশ্নের জবাবে কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট এসোসিয়েশন সিলেটের সভাপতি জানান, এসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে আমরা সিলেটের ফার্মেসী ব্যবসায়ীদের লিখিতভাবে অবগত করেছি।রেজিস্ট্রেশন বিহীন এবং ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন এর অনুমতি ব্যতিত কোন অবৈধ ওষুধ ফার্মেসীতে বিক্রি না করার জন্য।