নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিলেটসহ সারাদেশে হঠাৎ করে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এতে করে সিলেটে মানুষ গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও বিশ্বনাথের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। এসব এলাকায় রাতভর মসজিদে মাইকিং করে ডাকাতের সতর্কবার্তা প্রচার করা হয়েছে। এলাকাবাসী দলবেঁধে পাহারা দিচ্ছেন।
তবে এসব সতর্কতার মাঝেও মঙ্গলবার রাতে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে একাধিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। এক রাতে নগরী ও আশপাশের এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
যদিও পুলিশের তৎপরতা ও জনগণের সহায়তায় কয়েকজন অপরাধী গ্রেপ্তার হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন সেনা-পুলিশের যৌথ টহল জোরদার করেছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় চুরি ও ডাকাতির খবর ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এর বেশ কিছু খবর গুজব। আতঙ্কের সুযোগ নিয়ে কিছু মহল মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে, যা জনমনে অস্থিরতা তৈরি করছে।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাতে জালালাবাদ থানার মোঘলগাঁও ইউনিয়নে ছাগল ব্যবসায়ী সমর আলী (৬৫) দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয়, ধারণা করা হচ্ছে ছাগল বিক্রির ৩৫ হাজার টাকা লুট রাত বাড়তেই সিলেটে বাড়ে আতঙ্ক এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। বুধবার দুপুরে পীরেরগাঁও গ্রামের একটি ঝোপ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
একই রাতে গোলাপগঞ্জ থানার একটি অভিযানে আন্তজেলা ডাকাত দলের দুই সদস্য আব্দুল্লাহ আহমদ ও মো. ফয়সাল হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ডাকাতির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আব্দুল্লাহ আহমদের বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি, চুরি ও দস্যুতার মামলা রয়েছে। অন্যদিকে, ফয়সাল হাসানের বিরুদ্ধেও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধের মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে নগরীর সুবিদবাজার বনকলাপাড়ায় ছিনতাইয়ের অভিযোগে এক যুবক গণপিটুনির শিকার হয়। শরিফ আহমদ নামের ওই ব্যক্তি রিকাবিবাজারে এক নারীর মোবাইল ছিনতাই করে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে ধরে ফেলে। তার কাছ থেকে ছুরি ও ছিনতাইকৃত মোবাইল উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পুলিশ জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এছাড়া মঙ্গলবার গভীর রাতে বিশ্বনাথে একদল ডাকাত হানা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশ ও স্থানীয়দের তৎপরতায় তারা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে দ্রুত টহল বাড়ানো হয় এবং এলাকাবাসী সতর্ক অবস্থানে থাকেন। এসব ঘটনা ছাড়াও সিলেট ও আশপাশের উপজেলাগুলোতে চুরির খবরও পাওয়া গেছে।
নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই সেনা ও পুলিশের যৌথ টহল জোরদার করা হয়েছে। লাক্কাতুরা থেকে ক্যাডেট কলেজ পর্যন্ত চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং সন্দেহভাজন যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে টহল অব্যাহত থাকবে, যাতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন করা যায় এবং নাগরিকরা নিরাপদে থাকতে পারেন।
সিলেটের সাম্প্রতিক অপরাধ পরিস্থিতি জনমনে ভয় ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে, তবে এলাকাবাসীকে সচেতন ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে প্রশাসন।