সিলেটে চাঁদাবাজদের গ্যাঁড়াকলে হকার পুনর্বাসন অকার্যকর করার ষড়যন্ত্র বিএনপি নেতাদের দরবারে দৌড়ঝাঁপ সন্ধ্যার পর সুযোগ চায় ‘চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট’ সবজি-মাছওয়ালারা মাঠে থাকতে চায়।
সিসিকের সংস্কার কাজ অসম্পূর্ণ
বিশেষ প্রতিবেদক:: সিলেটের একটি চাঁদাবাজ চক্রের গ্যাঁড়াকলে পড়েছে হকারের কাপড় ব্যবসায়ীরা। প্রায় ৩০০ কাপড় ব্যবসায়ী নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে চাঁদাবাজরা। তারা সুরমা মার্কেটের ভিতরে একাধিক গোপন বৈঠক করেছে। সেই বৈঠকে লালদিঘি মাঠে হকার পুনর্বাসনকে অকার্যকর
করার পরিকল্পনা করেছে। চাঁদাবাজ চক্রটি সন্ধ্যার পর ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করার সুযোগ চায়। নতুন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা সিলেটের বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দরবারে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে। কিন্তু ইমেজ সংকটের ভয়ে নেতারা এই হকার চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটকে তেমন পাত্তা দিচ্ছেন না। সিসিকের কাজ ‘অসম্পূর্ণ’ এই অজুহাতকে দাঁড় করিয়ে
আন্দোলনে নামারও চক কষছে চক্রটি। হকার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র গোপন খবরটি ফাঁস করেছে। নেপথ্যে শ্রমিক লীগের কতিপয় নেতাও জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
হকারদের গোপন বৈঠক সূত্র জানায়, গত তিন সপ্তাহে নগরীর সুরমা মার্কেটের ভিতরে হকারদের একটি পুরনো চাঁদাবাজ চক্র কয়েক দফা
সিলেটে চাঁদাবাজদের গ্যাঁড়াকলে
গোপন বৈঠক করেছে। তারা সিরেটের ডিসি সারওয়ার আলম, এসএমপি পুলিশ কমিশনার ও সিসিকের হকার পুনর্বাসন অকার্যকর করতে নানা ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য দিয়েছে। বৈঠকে তারা সন্ধ্যার পর ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করার সুযোগ নিতে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও সবজি-মাছওয়ালারা লালদিঘি মাঠে পুনর্বাসিত হতে রাজি আছে, কিন্তু চাঁদাবাজ গ্রুপটি কাপড়ওয়ালা প্রায় ৩৫০ হকারকে সংগঠিত করে আন্দোলনে নামার চক্রান্ত করে। কিন্তু তারা রাজনৈতিক শক্তির আশ্রয় নেওয়ার জন্য কথাবার্তা করে। অন্দোলন চালানোর জন্য শ্রমিক লীগের একটি পুরনো হকার গ্রুপ পিছন থেকে ইন্ধন দিচ্ছে।
গোপন বৈঠক সূত্র আরও জানায়, হকারদের মধ্যে দুটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। সবজি ও মাছওয়ালারা চাঁদাবাজ গ্রুপের বিপক্ষে অবস্থান করছে। তারা ফুটপাতে বসে পুলিশের তাড়া খেতে নারাজ। কিন্তু কাপড় ব্যবসায়ীরা লালদিঘি মাঠে যেতে চাচ্ছে না। তাদেরকে শ্রমিক লীগ ও চাঁদাবাজ গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে। চাঁদাবাজরা হকারদের পুটপাতে বসিয়ে আবারও চাঁদাবাজি করতে গোপন পাঁয়তারা করছে। যদিও ওই গ্রুপটির মূল নেতারা কেউই হকার নন। ফুটপাতে তারা নিজে কোনো ব্যবসা করেন না। একেকজন ফুটপাতে চারটা দোকান বসান। আর নগরীর ফুটপাতে বসা সাধারণ গরিব হকারদের কাছ থেকে ব্যাপকভাবে চাঁদাবাজি করেন। বিগত সময়ে ফুটপাতে কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়েছে। সেই লোভ সামলাতে পারছে না চক্রটি। তারা ডিসি, এসএমপি কমিশনার ও সিসিকের হকার পুনর্বাসনকে অকার্যকর করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। শিগগিরই তারা সিসিকের প্রধান ফটকে ঘেরাও আন্দোলন করার পরিকল্পনা তৈরি করেছে।
বিএনপি ও হকারের সূত্র জানিয়েছে, হকার নেতারা ইতিমধ্যে সিলেটের বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে রাতে তাদের কার্যালয়ে দেখা করেছেন। সেখানে তারা ‘হকারদের ভোট’ প্রলোভন দেখিয়েছেন নেতাদের। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় বিএনপির কোনো নেতাই চাঁদাবাজ হকার নেতাদের পাত্তা দিচ্ছেন না। অতীতে সিলেট মহানগর বিএনপির এক নেতা মদদ দিলেও তিনিও তাদেরকে কার্যালয় থেকে বের করে দিয়েছেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। তবু ক্ষান্ত হচ্ছে না চক্রটি। তারা একের পর এক বিএনপি নেতা বদলিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ তারা সন্ধ্যার পর থেকে ব্যবসা করার দাবি নিয়ে নেতাদের কাছে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো নেতাই তাদের আশ্বস্ত করেননি। তাই তারা শ্রমিক লীগের কুপরামর্শে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে হকার কল্যাণ ঐক্য পরিষদের নেতা নুরুল ইসলাম ও আহাদ তা মানছেন না। তারা বিষয়টি নিয়ে আলাপে সুরাহার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সামনে নির্বাচনের কারণে আহাদ-নুরুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে নিজ দলের নেতাদের ভরসা পাচ্ছেন না। আহাদ-নূরুল ইসলাম মাঠের ভিতরের সবজি-মাছওয়ালাদের নিয়ে ভিতরে ব্যবসার দিকে ঝোঁক দেখাচ্ছেন। কিন্তু কাপড় ব্যবসায়ী-রা তাদের নেতৃত্ব মানছেন না। তাই কাপড় ব্যবসায়ীদের সংগঠিত করে যেকোনো সময় হকারদের অতীতের চাঁদাবাজ চক্র পথভ্রষ্ট করতে পারে বলে একাধিক গোপন বৈঠকে তা প্রকাশ পেয়েছে। তারা ‘স্থায়ী পুনর্বাসন’ অথবা সিসিকের মাঠ সংস্কার অসম্পূণ-এসব দাবি নিয়ে মাঠে নামতে পারে। অভিযোগ উঠেছে, গ্রুপটির নেতৃত্বে আছেন সিলেট মহানগর ‘বৈষম্য বিরোধী হকার ঐক্য পরিষদ’ এর সদস্য সচিব মো. নজরুল ইসলাম। তার নেতৃত্বে ৫ আগস্টের পর থেকে সিলেট মহানগরের ফুটপাতে কোটি টাকার চাঁদাবাজি করেছে কতিপয় ভূয়া হকার নেতা। এমনকি বৈষম্য বিরোধী হকার ঐক্য পরিষদের সংগঠনটিও ভুয়া বলে জানিয়েছেন প্রকৃত হকারেরা। সময়ের ধারাবাহিকতায় কিছুদিন আগে সংগঠনটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
জানতে চাইলে সিলেট মহানগর বৈষম্য বিরোধী হকার ঐক্য পরিষদের সাবেক সদস্য সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “মাঠের ভিতরে অনেক সমস্যা। রাস্তা করে দেওয়ার কথা রাস্তা করে দেয়নি। তাই কাপড়ের ব্যবসায়ীরা মাঠে থাকতে চাচ্ছেন না। আমাদেরকে সন্ধ্যার পর ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। এছাড়াও আমাদের ৯টি দাবি নিয়ে আমরা স্মারকলিপিসহ কাজ করছি।”
সিলেট মহানগর হকার ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুল আহাদ বলেন, সবজি ও মাছ ব্যবসায়ীরা মাঠের ভিতর ব্যবসা করছে। কিন্তু কাপড়ের ব্যবসায়ীরা মাঠে যেতে চাচ্ছে না। তারা সন্ধ্যার পর ব্যবসা করার সুযোগ চাচ্ছে। আরেকদিকে মাঠের ভিতরের অনেক সংস্কার অসম্পূর্ণ রয়েছে। প্রবেশ রাস্তাগুলোর সমস্যা আছে। কিন্তু এ নিয়ে প্রশাসন আমাদের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়নি।”
এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর ও মিডিয়া) মোহান্নন্দ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নগরীর সড়ক দখল করে ফুটপাতে কোনো অবস্থাতেই হকারদের ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। সড়কে বসলেই পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিবে।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহান্নন্দ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ‘হকারদের জন্য আমরা লালদিঘি মাঠ সংস্কার করে দিয়েছি। তারা যা চাইবে, তা-ই আমরা করে দিতে পারবো না। পাইলট স্কুলের ওদিকে রাস্তা করা যাবে না। কুদরত উল্লাগ মার্কেটের ওদিকে তারা যেতে দিবে না। সিটি মার্কেটের রাস্তা দিয়েই তারা মাঠে প্রবেশ-বাহির করতে হবে। মাঠে শেড বানিয়ে দিয়েছে, আর সংস্কার অসম্পূর্ণ থাকার কিছু নেই।’
সূত্র দৈনিক নিরপেক্ষ