ফ্যাসিস্টের দোসর অরবিন্দু এখনও দাপট দেখাচ্ছে ওসমানীতে
স্টাফ রিপোর্টার::: ফ্যাসিস্টের দোসর অরবিন্দুর সিন্ডিকেট এখনও সামাল দিচ্ছে সিলেট ওসমানী হাসপাতাল। সকল অপকর্মে এই সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয় ভূমিকায়। এই চক্রের প্রধান অরবিন্দু দাস। চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় মামলার আসামী অরবিন্দু দাস। তাছাড়া, অরবিন্দু দাসের উপর আরও একাধিক মামলা থাকলেও এখনো তিনি ওসমানীতে বহাল তবিয়তে। উপরন্তু দুর্নীতির মাধ্যমে গড়ে তোলা সিলেটের একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অপকর্ম রক্ষায় তিনি এখন গা ঢাকা দিতে মরিয়া। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন বদলীর। বদলী নিশ্চিত করতে দপ্তরের এক কর্মকর্তার সাথে ২০ লাখ টাকার চুক্তি করেছেন বলে হাসপাতালের এক সুত্র দাবি করেছে।
অরবিন্দু দাসের ব্যাপারে খোঁজ নিতে গেলে বের হয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি হাসপাতালের সকল গোপন তথ্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাচার করছেন-এমন অভিযোগও করছেন সহকর্মীরা। এই চক্রের সাথে বর্তমান বিএনএ’র কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতাও রয়েছেন। ঝুমুর ঝিনু নামের ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর অপর স্টাফ নার্সের নামও রয়েছে এই সিন্ডিকেটে। হাসপাতালের কয়েকজন নার্স নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, নার্সের চাকুরী দিয়ে কর্মজীবন শুরু হওয়া অরবিন্দু ১৫ বছরেই এখন শতকোটির টাকার মালিক। নার্সিং বদলী বাণিজ্য, স্টোর থেকে সরকারি ওষধ পাচার, আউটসোর্সিং বাণিজ্য থেকে শুরু করে এমন কাজ নেই-যা অরবিন্দু করেন নি। তৎকালীন তিনি ছিলেন আওয়ামী সরকারের আশির্বাদ পুষ্ট। ফলে দাপট কাজে লাগিয়েছেন যথাযথভাবে। এখন বাড়ি, গাড়ি এমনকি একাধিক নারীর সাথেও সখ্যতা রয়েছে অরবিন্দুর। হাসপাতালের অনেকেই এসব বিষয় জানলেও ভয়ে কেউ তখন মুখ খুলতো না। ৫ অগষ্টের পট পরিবর্তনের পর অনেকেই নানা তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করছেন। ভুক্তভোগীদের দাবি- অরবিন্দু দাসের বদলীর আগেই দ্রুত গ্রেপ্তার করে তার সম্পদের হিসাব নিতে হবে। এ বিষয়ে দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
এদিকে অরবিন্দু দাসের উপর ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের পর অরবিন্দু দাসের দম্ভোক্তি আরও বেড়ে গেছে। এই সংবাদ প্রকাশ অরবিন্দুর বদলী আরও ত্বরান্বিত করবে বলে, তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সহকর্মীদের সাথে আলাপকালে অরবিন্দু জানান, এসব লিখে আমার কিছুই হবে না। টাকা দিয়ে সবকিছুই ম্যানেজ করে নেবো। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫ টায় এ প্রতিবেদককে অরবিন্দু’র বলা এমন তথ্য নিশ্চিত করেন তার এক সহকর্মী।
জানাগেছে, গেল বছরের জুলাইয়ে ছাত্র জনতার উপর হামলায় ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে অরবিন্দু দাসের উপর। গেল বছরের ৪ ডিসেম্বর বিস্ফোরক আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার বাদি নগরের তোপখানার ছিদ্দেক মিয়ার ছেলে রাশেদ আহমদ। মামলায় উল্লেখ করা হয়, গেল জুলাই আন্দোলনে অরবিন্দু দাসসহ অপরাপর আসামীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে আন্দোলন কারীদের উপর গুলি বর্ষণ করে। মামলায় আসামী করা হয় ৯০ জনকে। অরবিন্দু দাস এই মামলার ৪৪ নং আসামী
অরবিন্দু দাসের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার বারালি। তিনি বর্তমানে নগরীর বাগবাড়ি নরসিংহ টিলায় বাস করছেন। তার পিতার নাম গোপাল চন্দ্র দাস। চাকুরীর ১৫ বছরের মধ্যেই সিলেট ও ঢাকায় করেছেন নিজের বাড়ি। সিলেট নগরে রয়েছে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সের পদে থেকে এতোসব অর্জন অরবিন্দু দাসের। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেশ দাপট ছিল এই নার্সের। স্টাফ নার্সের পদে থেকেও নিয়ন্ত্রণ করতেন স্টোর বিভাগ। অপকর্ম উদ্যোক্তাদের তিনি ছিলেন অন্যতম। ফলে যখন-তখন স্টোর রুম থেকে সরকারি ঔষধ পাচার হতো নিশ্চিদ্র ভাবে। সেই সময়ে ঔষধ পাচার চক্রের অন্যতম ছিলেন এই অরবিন্দু দাস। তখন থেকেই হাতে ধরা দিতে থাকে কাড়ি কাড়ি টাকা। এখন কোটি কোটি টাকা অরবিন্দু দাসের। তবে গেল বছরের ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শঙ্কায় আছেন তিনি। নিজের অপকর্ম ঢাকা দিতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন অন্যত্র বদলির। সুযোগ বোঝে নিজের পরিবারকেও পাঠিয়ে দিয়েছেন রাজধানীতে। সেখানে থাকছেন স্ত্রী সন্তান। সন্তানরা লেখাপড়া করছেন ঢাকাতেই। অথচ নার্সের চাকুরী দিয়েই সন্তানদের লেখাপড়াসহ সবকিছু বহন করছেন একা মাত্র এক ব্যক্তি। বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও অসম্ভবকে সম্ভব করাই অরবিন্দু দাসের কাজ। সেটি তিনি করেও চলছেন। কিন্তু এবার আর সিলেট থাকতে ইচ্ছুক নন তিনি। যতো দ্রুত সম্ভব চাকুরী বদলীর আবেদন করে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন এই সিনিয়র স্টাফ নার্স। হাসপাতালের অন্তত ৩ থেকে ৪ জন নার্স জানিয়েছেন, আরবিন্দু আগে নিজেই বদলী বাণিজ্য করতেন। বদলী বাণিজ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে ভালো সখ্যতা রয়েছে অরবিন্দুর। ফলে বিগত দিনে বদলী বাণিজ্য থেকে তার ইনকাম ছিল বেশ উল্লেখযোগ্য। আবার হয়রানী মূলক বদলীও করিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে শেখ হাসিনার মেয়াদকালীন অরবিন্দু ছিলেন, ওসমানীর নার্সদের মধ্যে এক মূর্তিমান আতঙ্ক।
বদলীর আবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী-অরবিন্দু দাস সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরীতে যোগদান করেন ২০১০ সালে ৭ অক্টোবর। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি বদলীর আবেদন করেন গেল বছরের ২১ নভেম্বর। বদলীর কারণ হিসেবে অরবিন্দু উল্লেখ করেন, লেখাপড়ার কারণে নিজের সন্তানরা রাজধানীতে অবস্তান করছেন এবং নিজের স্ত্রীও রয়েছেন সন্তানদের সাথে। এ অবস্তায় সিলেট থেকে নিয়মিত ঢাকায় যাওয়া-আসা খুবই কষ্টকর বলে তিনি আবেদন পত্রে উল্লেখ করেন। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে মানসিক বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনকারী অরবিন্দু দাস রাজধানীর জাতীয় মাসনিক স্বাস্থ্য ইন্সিটিটিউটে বদলী হতে চান বলে আবেদন পত্রে উল্লেখ করেন।
এদিকে অরবিন্দু দাসের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে বের হয়ে আসে সিলেট শহরে তাঁর একাধিক প্রতিষ্ঠানের কথা। এর কোনটিতে তিনি একক আবার কোনটিতে তিনি পার্টনার হিসেবে রয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে সিলেটের মেন্দিবাগস্থ হোটেল গ্র্যান্ড সুরমার তিনি পরিচালক। জিন্দাবাজারে রয়েছে পার্টনারশিপ আরও একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের নাম দ্যা লাক্সারি রেস্টুরেন্ট। একটি রিসোর্ট রয়েছে অরবিন্দু দাসের। তাছাড়া আখালিয়ায় ফ্রেন্ডস আই হসপিটালেও মালিকানা অরবিন্দু দাসের। নিজের জন্য কেনা বসতভিটাসহ আরও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে হাসপাতালের একটি সুত্র দাবি করেছে। ওই সুত্র অনুযায়ী অরবিন্দু দাস এখন নিজের অপকর্ম গা ঢাকা দিতেই বদলীর প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সহকর্মীদের বলেছেন, প্রয়োজনে ২০ লাখ টাকা খরচ করেও তিনি সিলেট থেকে বদলী হতে চান। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে নার্সিং মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর মহা পরিচালকের অফিসে কর্মরত একাধিক ব্যক্তির সাথে তিনি যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ নিজাম উদ্দিন, নির্বাহী সম্পাদক : আইয়ুব আলী অফিস ; খান কমপ্লেক্স, সোনারপাড়া, শিবগঞ্জ, সিলেট। যোগাযোগ : প্রকাশক ও সম্পাদক : ০১৭৩৭-৩০৪৭৫১। ই-মেইল : sylhetbuletin@gmail.com
All rights reserved © 2025 sylhet buletin