সিলেটের হযরত শাহজালাল(র:) উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত দরবেশ ও কামীলে পীর ছিলেন
কামাল খান :: হযরত শাহ জালাল ইয়ামনী (রহঃ) এর জন্ম তুরস্কে ৬৭১হিঃ১২৭১ইং-মৃত্যু;৭৪০ হিঃ ১৩৪১ইং ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত সুফি দরবেশ। হযরত শাহজালাল(র:) ছিলেন উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত দরবেশ ও কামীলে পীর। তিনি ছিলেন ওলিকুলের শিরোমণি। সিলেট অঞ্চলে তাঁর মাধ্যমেই
ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটে। সিলেটের প্রথম মুসলমান শেখ বুরহান উদ্দিনের ওপর রাজা গৌর গোবিন্দের অত্যাচার এবং এর প্রেক্ষিতে হযরত শাহজালাল(র:) ও তাঁর সফরসঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার সিলেট আগমন ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
এ কারনে সিলেট কে ৩৬০ আউলিয়ার নগরী বলা হয়। কেউ কেউ সিলেটকে পূণ্যভূমি অভিধায়ও অভিহিত করেন। আরবের মাটি ও সিলেটের মাটির সাথে মিল কথিত আছে, প্রাচ্য দেশে আসার পূর্বে শাহজালাল(র:) এর মামা মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ কবীর
(রঃ) তাকে এক মুঠো মাটি দিয়ে বলেন, ‘স্বাদে বর্ণে গন্ধে এই মাটির মতো মাটি যেখানে পাবে সেখানে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচার করবে।’ হযরত শাহজালাল(র:)বিশিষ্ট শিষ্য শেখ আলীকে এই
মাটির দায়িত্বে নিয়োগ করেন এবং নির্দেশ দেন যে, যাত্রা পথে বিভিন্ন জনপদের মাটির সাথে যেন এই জনপদের মাটির তুলনা করে তিনি দেখেন। পরে এই শিষ্যের উপাধি হয় চাষণী পীর। সিলেট শহরের গোয়াইপাড়ায় তার মাজার বিদ্যমান। সিলেটের মাটির সাথে আরবের মাটির মিল পাওয়ায় হযরত
শাহজালাল(র:) সিলেটে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। সিলেটে তেল ও গ্যাস পাওয়ায় আরবের মাটি ও সিলেটের মাটির মিল প্রমাণিত হয়েছে। গজার মাছ হযরত শাহজালাল ( রঃ) এর মাজার চত্বরের উত্তর দিকে একটি পুকুর রয়েছে। এ পুকুরে রয়েছে অসংখ্য গজার মাছ। এসব মাছকে
পবিত্র জ্ঞান করে দর্শনার্থীরা ছোট ছোট মাছ খেতে দেয়। পুকুরের পশ্চিম কোণে ছোট মাছ বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। পুকুরে অজুর ব্যবস্থাও আছে।২০০৩ সালের ৪ ডিসেম্বর বিষ প্রয়োগে পুকুরের প্রায় ৭শ’রও বেশী গজার মাছ হত্যা করা হয়। ফলে পুকুরটি গজার মাছ শুন্য হয়ে পড়ে। মরে যাওয়া মাছ গুলোকে মসজিদের পশ্চিম দিকের গোরস্থানে পুঁতে ফেলা হয়। পুকুরটি মাছ শুন্য হয়ে যাওয়ার পর হযরত শাহজালাল(র) এর অপর সফরসঙ্গী মৌলভী বাজারের শাহ মোস্তফা(র:) এর মাজার থেকে ২০০৪ সালের ১১জানুয়ারি ২৪ টি গজার মাছ এনে পুকুরে ছাড়া হয়। বর্তমানে পুকুরের গজার মাছের সংখ্যা কয়েক শ'তে
দাঁড়িয়েছে।।জালালী কবুতর ও নিজাম উদ্দিন আউলিয়াঃ হযরত শাহজালাল(র:) এর আধ্যাত্নিক শক্তির পরিচয় পেয়ে হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (র:)তাকে সাদরে গ্রহণ করেন। প্রীতির নিদর্শন স্বরুপ তিনি তাকে এক জোড়া সুরমা রঙের কবুতর বা জালালী কবুতর উপহার দেন। সিলেট ও এর আশপাশের অঞ্চলে বর্তমানে যে সুরমা রঙের কবুতর দেখা যায় তা ওই কপোত যুগলের বংশধর এবংজালালী কবুতর নামে খ্যাত।সিলেটে জাতী ধর্ম বর্ণনির্বিশেষে কেউই এ কবুতর বধ করে না এবং খায় না। বরং অধিবাসীরা এদের খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে থাকে।শাহজালালের মাজার এলাকায় প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে কবুতর উড়তে দেখা যায়। মাজার কর্তৃপক্ষ এসব কবুতরের খাবার সরবরাহ করে থাকে। জমজমের কূপ ও ঝরণাঃ তাঁরা যে পুকুরের পানি ব্যবহার করেন তাহিন্দুরাও ব্যবহার করুক-এটা শাহজালাল পছন্দ করতেন না। তাই তিনি একটি কূপ খনন করার আদেশ দিলেন এবং প্রার্থনা করলেন আল্লাহ যেন এই কূপটিকে জমজমের কূপটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেন। এরপর তিনি লাঠি দিয়ে মাটির ওপর আঘাত করলেন আর সঙ্গে সঙ্গে এই কূপটির সাথে জমজমের কূপেরমিলন ঘটে গেল। আল্লাহর ক্ষমতার বদৌলতে এই কূপে সোনা ও রুপার রঙের মাছের জন্ম হলে যা আজোএই কূপের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। তারপর এর চারপাশ পাকা করে দেওয়া হলো এবং উত্তর পার্শ্বে দুটি পাথর বসিয়ে দেওয়া হলো-যা থেকে দিনরাত পানিপ্রবাহিত হয়। রোগীরা এই পানি পান করে আরোগ্য লাভ করে।রোজাদারেরা এই পানি দ্বারা ইফতার করে। হযরত শাহজালাল(র:) এর মাজারের পশ্চিম দিকে গেলে ঝরনাটি পাওয়া যায়। ঝরনার পানি বোতল ভর্তি করে বিক্রি করা হয়।ডেকচিঃ মাজারের পূর্ব দিকে
একতলা ঘরের ভেতরে বড় তিনটি ডেকচি রয়েছে। এগুলো ঢাকার মীর মুরাদ দান করেছেন। মীর মুরাদঢাকার হোসেনী দালান তৈরী করেন। যদিও ডেকচি গুলোতে রান্না বান্না হয় না, তবুও কথিত আছে প্রত্যেকটিতে সাতটি গরুর মাংস ও সাত মণ চাল এক সাথে রান্না করা যায়। পূণ্যের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন
দর্শনার্থীরা ডেকচি গুলোতে প্রচুর টাকা পয়সা দান করেন। চিল্লাখানাঃ মাজারের দক্ষিণদিকে গ্রীলঘেরা তারকা খচিত ছোট্ট যে ঘরটি রয়েছে, এটি হযরত শাহজালাল (রঃ) চিল্লাখানা। স্থানটি মাত্র দু’ফুট চওড়া। কথিত আছে যে, হযরত শাহজালাল (রঃ)এই চিল্লাখানায় জীবনের ২৩ টি বছর আরাধনায় কাটিয়েছেন।শাহজালাল (রঃ) ব্যবহৃত দ্রব্যাদিঃ হযরত শাহজালাল(রঃ) কেবল একজন পীর ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন
বীর মোজাহিদ। তার ব্যবহৃত তলোয়ার, খড়ম,প্লেট এবং বাটি দর্শনার্থীদের দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। দরগার দক্ষিণ দিকে দরগাহ মাদ্রাসা বিল্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে একটি প্রবেশ পথ রয়েছে। এই পথ দিয়ে অগ্রসর হওয়ার পর বাঁ দিকের বাড়িটি মুফতি নাজিমুদ্দিন আহমদের।এই বাড়িতে হযরত শাহজালাল (রঃ) তলোয়ার ও খড়ম সংরক্ষিত আছে। প্লেট ও বাটি সংরক্ষিত আছে দরগাহ’র মোতওয়াল্লির বাড়িতে।এগুলো দেখতে প্রতিদিন উৎসুক মানুষের ভীড় জমে। শায়িত আছেন যারাঃ মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানী, সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য সিরাজুন্নেসা চৌধুরী, তার স্বামী আব্দুর রশীদ চৌধুরী,বিচারপতি আব্দুস সোবহান, হাফিজ মাওলানা আকবর আলী,এড.শহীদ আলী,বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা: জমসেদ বক্ত, আল
ইসলাহ’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মৌলভী নূরুল হক, সাবেক কূটনীতিক কায়সার রশীদ চৌধুরী এবং কবিআফজাল চৌধুরী সহ অসংখ্য গুনী জ্ঞানী লোক দরগাহ কবরস্থানে শায়িত আছেন। দরগাহ গোরস্থানে কয়েক হাজার লোকের মাজার রয়েছে। কোন রেজিস্টার মেনটেইন।না হওয়ায় এ ব্যাপারে সঠিক কোন তথ্য জানা যায়নি। দরগাহ মসজিদঃ বাংলার সুলতান আবু মুজাফ্ফর ইউসুফ শাহের মন্ত্রী মজলিশে আতার আমলে ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে দরগাহ চত্বরে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে বাহরাম খাঁ ফৌজদারের সময় এটি পুননির্মিত হয়। বর্তমানে এটি সিলেট শহরের একটি অন্যতম মসজিদ। শাহজালাল (রঃ) সিলেট আগমনঃ হযরত শাহজালাল(র:) আরবের ইয়েমেনের।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ নিজাম উদ্দিন, নির্বাহী সম্পাদক : আইয়ুব আলী অফিস ; খান কমপ্লেক্স, সোনারপাড়া, শিবগঞ্জ, সিলেট। যোগাযোগ : প্রকাশক ও সম্পাদক : ০১৭৩৭-৩০৪৭৫১। ই-মেইল : sylhetbuletin@gmail.com
All rights reserved © 2025 sylhet buletin