সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে অভিনব কায়দায় চলছে প্রতারণা চুরির নেপথ্যে নারী চোরচক্র পপি সিন্ডিকেট!
সিলেটের শীর্ষ দুই মহিলা ছিনতাইকারী পপি ও সুমি দীর্ঘদিনের দাগী নারী মোবাইলফোন চোরেরসর্দার পপিচক্র পুলিশকে টাকা দিয়ে চোরদের হাসপাতালে প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে। আর এই চোর চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করছে বাইরের একটি চক্র
কাইয়ুম উল্লাস: প্রতিদিনিই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কারো না কারো মোবাইলফোন ও টাকা পয়সা চুরি করছে নারী চোর চক্র। শুধু তা-ই নয়, এই নারী প্রতারক চক্র অভিনব কৌশলে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে মিশে এসব চুরি ও প্রতারণার ঘটনা ঘটাচ্ছে।
আবার প্রতিদিন চোর ধরা পড়ে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে হইচই হচ্ছে, পুলিশের হাতে চোর তুলে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই চোরের প্রবেশ ঠেকাতে পারছে না ওসমানী মেডিকেল ক্যাম্পের পুলিশ। অভিযোগ আছে, সিলেটের দীর্ঘদিনের দাগী নারী মোবাইলফোন চোরের সর্দার পপি চক্রপুলিশকে টাকা দিয়ে মহিলা চোরদের হাসপাতালে প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে।
আর এই চোর চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করছে বাইরের একটি রাজনৈতিক পাতিনেতা চক্র। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের মোবাইল চোরদের সর্দার হচ্ছে উপশহর তেররতনের পপি ও তার সঙ্গীয় সুমি।এদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করে অন্তত ১৫ জন মহিলা মোবাইলফোন চোর।
পপি ও সুমি কয়েকবার মোবাইলফোন চুরির সময় হাতেনাতে জনতার হাতে ধরা পড়েছে।জনতা তাকে পুলিশে তুলে দিলেও পরে একটি দালাল চক্র এসব মামলা আপোষ করে তাকে জেলহাজত থেকে বের করে আনে।পপি এসব মোবাইল চোরদের নগরীর বাগবাড়ি, নবাবরোড ও বেতের বাজারের কলোনীতে রাখতো। এখন স্থান বদলিয়ে সে
উপশহরের তেররতন এলাকার একটি কলোনীতে বসবাস করে।ওসমানী হাসপাতালে মোবাইল চুরি করতে হলে পপিকে ভাগ দিতে হয় ছেঁচড়া কিছু পাতি নেতাকে। দালালের হাত ধরে এসব পাতি নেতার কাছে টাকা ধরিয়ে দিলে তারা পুলিশকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ।
অভিযোগ ওঠেছে,একটা টাকার ভাগ যায়। আনসারদের একজন সদস্যও পপিদের টাকার ভাগ পান। তারপর পপির মোবাইলফোন চোরেরা ওসমানী হাসপাতালে চুরির প্রবেশাধিকার পায়।পপির কাছ থেকে ওসমানী হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্য দেবাশীষ এক সোর্সের মাধ্যমে টাকা নেন।
তারপর পপির সদস্যরা রোগীর আত্মীয়-স্বজন সেজে হাসপাতালে ঢুকে পড়ে। পপির অধীনে কিছু ছেলেরাও মোবাইল চুরি করে। আবার বাইরের এক পাতি নেতার শেল্টারে কিছু উঠতি ছিঁচকে ছেলেরাও ওসমানী হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের মোবাইলফোন চুরি করছে।
এই চোরদের পিসিপিআর ও তালিকা ক্যাম্প পুলিশের হাতে থাকলেও তাদেরকে স্থায়ীভাবে আটকাতে পারছে না পুলিশ। বাইরের পাতি নেতা তাদের পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিচ্ছে। আবার টাকা দিয়ে প্রবেশ করতে দিচ্ছে।হাসপাতাল ঘুরে জানা গেল, যেখানে ভিড় আছে, সেখানেই রোগীর স্বজন সেজে ঠেলাধাক্কা করছে মোবাইলফোন চোরেরা।
সকালে আউটডোরে রোগীর চাপ বেশি থাকে, সেখানে দুই তিনজন দলবদ্ধভাবে টার্গেট করে রোগী বা তারস্বজনের মোবাইলফোন চুরি করে। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য ও আশপাশের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, যার মোবাইল চুরি করবে,তাকে চোর নারী দুজন সামন- পিছন হয়ে দাঁড়াবে।
একজন ধাক্কা মারে, আরেকজন মোবাইল চুরি করে সটকে পড়ে। সকালে আউডডোরে টিকিটের সিরিয়াল লাইনে চোরেরা প্রবেশ করে। এদিকে, ভোর রাত হলে রোগীর স্বজন সেজে প্রথমে টার্গেট করা রোগীর স্বজন কোনো মহিলার সাথে চোর মহিলা ভাব বা খাতির জন্মাবে। সে কোনো রোগীর স্বজন।দাবি করে, টার্গেট ব্যক্তির পাশে শুয়ে পড়বে। ভোর হলে ওই ব্যক্তি দেখবেন তার মোবাইল ও টাকা চুরি হয়ে গেছে।
পাশে যে মহিলা শুয়ে ছিল, সে আর ওখানে নেই। তারমানে ওই মহিলাই নিয়ে গেছে টাকা ও মোবাইলফোন।এরকম ঘটনা প্রতি ভোরেই দেখা যাচ্ছে এমএজি ওসমানী।হাসপাতালে। আবার অনেক সময় ভোর রাতে চুরি করতে।
গিয়ে ধরাও পড়ছে নারী ও উঠতি যুবকেরা। পরে জনতা।চোরকে হাসপাতালের পুলিশে তুলে দিলে পুলিশ বলছে, পাবলিক বাদি হয়ে মামলা করতে হবে। পাবলিক বাদি হতেনা চাইলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রোগীর স্বজন বলেন, আমরা একজন রোগী নিয়ে ওসমানী হাসপাতালে ছিলাম। ঘটনার দিন চারতলায় মোবাইলফোন চোরকে পুলিশে তুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বলে আমরা কেউ বাদি হতে, না হলে তাকে ছেড়ে দিবে।।খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেলো,
ওসমানী হাসপাতালে কিছু নারী প্রতারক আছে, যারা কোনো অজানা রোগীর আত্মীয় সেজে ওয়ার্ডে ঘুরাফেরা করে। এক পর্যায়ে তারা সরল মহিলাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। তিন চার দিন সেবা যত্নে পাশে থেকে বিশ্বাস তৈরি করবে। তারপর একদিন বলবে, তার স্বামীর অপারেশন করাতে হবে।
টাকা আরও লাগবে। সোনার চেইন সে বিক্রি করতে চায়। এই বলে।নকল সোনার চেইন দিয়েও টাকা নিয়ে যাচ্ছে প্রতারক মহিলারা। আর কখনো মোবাইলফোন ও টাকা চুরি করে পালিয়ে যাচ্ছে।
সাইফুল নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে প্রতারক নারী তাদের টাকা পয়সা চুরি করে।নিয়ে গেছে। এখন তারা হাসপাতালের চিকিৎসার টাকা মিলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাসপাতালের সূত্র আরও জানায়,লিফটে মোবাইলফোন চোর চক্রের সদস্য থাকে।এসময় ভিড়, চাপাচাপি করে অসতর্ক মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে মোবাইল ও টাকা চুরি করছে পপি চক্র।