ফের গোয়াইনঘাটে বালু লুটের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে নেপথ্যে প্রভাবশালী মহল!
বিশেষ প্রতিবেদক:: তার অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওমর ফারুক-এর মাধ্যমে ইউএনও গোপনে বালু লুটের টাকার ভাগ পাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। শুধু বালু লুটই নয়, আহারকান্দি সেতু দিয়ে দেদারসে প্রবেশ করছে ভারতীয় গরু, চা পাতা, কসমেটিকস, সুপারি ও ইয়াবার চালান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পিয়াইন নদীর পূর্ব দিক থেকে পশ্চিমে ছাতকের দিকে শত শত বালুভর্তি নৌকা চলাচল করছে। নদীর হাজিপুর, আহারকান্দি, ঢালারপাড় ও হাদারপাড়ের ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে এই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। যদিও বর্তমানে জেলা প্রশাসন বালু উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে, তবু রাতের বেলায় মেশিন লাগিয়ে বালু লুটের মহোৎসব চলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই বালু লুটের সঙ্গে জড়িত একটি চাঁদাবাজ চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহেদ আহমদ। তার সঙ্গে লুনির কামরুল, খয়রুল ও সিটি আমির উদ্দিনও এই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া, রুস্তমপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন এবং তোয়াকুল ইউপি চেয়ারম্যান খালেদ আহমদও এই অবৈধ বালু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা প্রতিদিন প্রায় ৪০ লাখ টাকার বালু লুট করে এবং সেই টাকা এসিল্যান্ডের মাধ্যমে ইউএনও পর্যন্ত পৌঁছায় বলে স্থানীয়রা জানান।
সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দিনার জানান, গোয়াইনঘাট উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শাহেদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে তারা তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন।
রুস্তমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন শিহাব বলেন, “হাদারপাড় নদী এলাকায় বৈধ বালু ইজারাদার রয়েছেন। এর বাইরে কেউ বালু উত্তোলন করলে সেটাকে লুট বলা যায়। তবে ইজারা দিয়েও বালু উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করা কতটুকু যৌক্তিক, তা প্রশাসনের পরিষ্কার করা উচিত।”
গোয়াইনঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওমর ফারুক বলেন, “আমরা নিয়মিত অভিযান চালানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু বালু লুটেরাদের থামানো যাচ্ছে না। খুব শিগগিরই এই সমস্যা সমাধানে আমরা একটি বৈঠকে বসব।”
গোয়াইনঘাটে শুধু বালু নয়, চোরাচালান, মাদক ও জুয়ার সমস্যাও গুরুতর। একটি স্থানীয় চক্র ভারত থেকে ইয়াবা এনে আহারকান্দি উত্তরপাড়ের বাজারে বিক্রি করছে। এই চক্রটি ভারতীয় অনলাইন জুয়ার বোর্ডও পরিচালনা করছে, যার কারণে এলাকার যুবকরা নেশা ও জুয়ায় আসক্ত হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় পর্ণগ্রামের রাখালের ছেলে লক্ষণ, উত্তর লাবু গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে সেলিম, পর্ণগ্রামের বনকবিরাজের ছেলে কানু এবং আহারকান্দির সেলুন ব্যবসায়ী রিপু ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় বিট পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব মাদক কারবারিরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও, তোয়াকুল সীমান্তে গরু ও সোনা চোরাচালান বেড়ে গেছে। অভিযোগ আছে, তোয়াকুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খালেদ আহমদের লোকজন এই চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত এবং তিনি তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে খালেদ আহমদ বলেন, “আমি বা আমার কোনো লোক এসবের সঙ্গে জড়িত নই। প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।”
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, “বালু উত্তোলন বন্ধে আমরা এসিল্যান্ডের সঙ্গে নিয়মিত অভিযানে যাচ্ছি। চোরাচালান, মাদক ও জুয়া বন্ধে তথ্য পেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।”
সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮) বিজিবি-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক বলেন, “সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে কাজ করছে। যাদের আটক করা হয়, তাদের বেশিরভাগই শ্রমিক। মূল হোতারা দূর থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ নিজাম উদ্দিন, নির্বাহী সম্পাদক : আইয়ুব আলী অফিস ; খান কমপ্লেক্স, সোনারপাড়া, শিবগঞ্জ, সিলেট। যোগাযোগ : প্রকাশক ও সম্পাদক : ০১৭৩৭-৩০৪৭৫১। ই-মেইল : sylhetbuletin@gmail.com
All rights reserved © 2025 sylhet buletin