নাজমুল ইসলাম চৌধুরী:
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা ইউনিয়নের মৃত হান্নান মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া (২৪)। তিন বছর আগে বিয়ে করে সংসার শুরু করেছিলেন তিনি। বিয়ের পর শশুরবাড়ি গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের নিজ করনসী গ্রামে বসবাস শুরু হয় তার। সংসারের দ্বায়ে ২০২২ সালের শুরুর দিকে জীবিকার খোঁজে দিন মুজুরের কাজে নামেন সুমন।কিন্তু হঠাৎ এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় থেমে যায় তার স্বাভাবিক জীবন। কাজের সময় অসাবধানতায় বাঁশের গোড়ার স্তুপ তার কোমরে পড়ে, ছিঁড়ে যায় মেরুদন্ড ও মাঝার রগ। এরপর থেকে তিনি আর হাঁটতে পারেন না। টানা তিন বছর স্ত্রীকে নিয়ে খেয়ে-না-খেয়ে শয্যাশায়ী জীবন কাটাতে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে পচন ধরতে থাকে।
গত কিছুদিন আগে স্থানীয় দৈনিক যায়যায় দিন পত্রিকার সাংবাদিক মো. হারুন রশিদ তার ফেসবুক পেজ মায়ার টিভি থেকে সুমনের অসুস্থতার একটি লাইভ করেন। লাইভটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। দেশ ও প্রবাস থেকে মাত্র কয়েকদিনে সুমনের বিকাশ ও নগদ বিভিন্ন মাধ্যমে জমা পড়ে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। আরও অনেক ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাসও মেলে।
খবর পেয়ে ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়নাল আবেদীন দেখতে ও সহায়তা করতে নিজেই ছুটে যান সুমনের বাড়িতে। কুঁড়েঘরে খাটে শুয়ে থাকা অসুস্থ সুমন ইউএনওকে দেখে আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়েন। উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও শারীরিক কারণে পারেননি।এসময় ইউএনওর মানবিকতায় অভিভূত হয়ে পড়েন পরিবার ও এলাকাবাসী।
ওসমানীনগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক হারুন রশিদ বলেন, সুমন অত্যন্ত দরিদ্র। তার নিজের ভিটেবাড়ি নেই। বিয়ের পর থেকেই শশুরবাড়িতে বসবাস করছে। জীবিকার তাগিদে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি ছিল সত্যিই মর্মান্তিক। তার অসুস্থতা ও পরিবারের করুণ অবস্থা দেখে আমি লাইভ করি। মানুষ যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে,তা সত্যিই অভিভূত হওয়ার মতো। ৩০ আগস্ট শনিবার দুপুরে সুমনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করার কথা রয়েছে ঢাকা মেডিকেলে। পরিবার ও প্রতিবেশীরা আশা করছেন মানুষের সহযোগিতা ও ইউএনওর আন্তরিকতায় সুমন নতুন জীবন ফিরে পাবেন।
সুমনের পরিবার ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন,ইউএনও জয়নাল আবেদীন যেভাবে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, এবং সাংবাদিক হারুন রশিদের প্রচারের কারনে দেশ বিদেশ থেকে অনেক বিত্তবানরা সহযোগিতার হাত বড়িয়ে দিয়েছেন, তাদের সহযোগিতায় ও সুচিকিৎসায় সুমন নতুন জীবনে ফিরবে।সুমনের চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন সকলেই পাশে থাকেন, সেই অনুরোধও জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন,একজন অসহায় যুবকের কষ্টঘেরা জীবনের গল্প এখন মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতায়। ইউএনও বলেন, সাংবাদিকভাইদের প্রচারণার কারনে এবং সকলের সহযোগীতা ও উন্নত চিকিৎসায় সুমন ফিরবে স্বাবাবিক জীবনে এমনটাই প্রত্যাশা।