সিলেট প্রতিনিধি
সিলেটের গোলাপগঞ্জে ওয়ার্ড সভাপতির রোষানলে পড়ে বিএনপির ওয়ার্ড সেক্রেটারী হামলার শীকার হয়েছেন বলে সিলেট প্রেসক্লাব ও সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে। গোলপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনজুর আহমদ একই ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগের সভাপতি আলা উদ্দিন ও তার ছেলে তাজ উদ্দিনের সাথে রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। আওয়ামীলীগের সভাপতি ও তার ছেলে মনজুর আহমদের বাড়িতে শতাধিক লোকজন নিয়ে জোর পূর্বক দখল করতে গেলে তাদের আক্রমনে মনজুর আহমদসহ তার পরিবারের লোকেরা গুরুতর আহত হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রমণকারীরা তাদের বাড়ি ও মুদি দোকান লোটপাট করে ৪৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার মালামাল, নগদ টাকা, সোনা গয়না নিয়ে যায়। একই সাথে ৩৩ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে। পুলিশ মামলা নিলেও আসামীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় নাই। উপরন্তু আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড সভাপতির ছেলে তাজ উদ্দিনের মিথ্যা মামলায় আহত বিএনপির সেক্রেটারী মনজুর ও তার ভাই গুরুতর আহত খলিল কারাগারে রয়েছেন। শনিবার মনজুর আহমদের ভাই জয়নাল আবেদীন সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জয়নাল আবেদীন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মনজুর আহমদের বড় ভাই ফখরুল ইসলাম ও সাদেক আহমদ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার ছোট ভাই মনজুর আলম গোলাপগঞ্জ থানাধীন ১নং বাঘা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। আমাদের ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন ও তাহার ছেলে সন্ত্রাসী তাজ উদ্দিনের সাথে আমার ভাইয়ের রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি আমাদের বাড়ির সীমানার পাশে তাহার ক্ষেতের জমি কিনে। এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ একাধিকবার মাপজোখ করে সীমানা নির্ধারণ করে দিলেও তাজ উদ্দিন এলাকায় প্রভাবশালী ও জনবলে বলিয়ান হওয়ায় এলাকার শালীষ মুরব্বিদের দ্বারা নির্ধারণকৃত সীমানা না মেনে সে আমাদের বাড়ির ১০ ফুট ভিতরে এসে দীর্ঘদিন ধরে জোর পূর্বক দখল করার পায়তারা করে। তাজ উদ্দিনের পিতা আলা উদ্দিন আমাদের ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি। সৈরাচারী সরকারের আমলে আলা উদ্দিন মেম্বার ও তার পূত্ররা আমাদেরকেসহ এলাকার মানুষকে নানা ভাবে নির্যাতন নীপিড়ন করেছে। বর্তমানেও এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তারা এলাকার নিরীহ লোকজনকে নানা ভাবে নির্যাতন করতেছে।
এলাকার তাজ উদ্দিন ও তার পিতা আলা উদ্দিন এক আতংকের নাম। এলাকার ময়মুরব্বীবৃন্দ দ্বারা নির্ধারিত জমির মাপ না মেনে তাজ উদ্দিন ও আলা উদ্দিন আমাদের উপর আক্রমণের পায়তারা করতে থাকে। তারা গ্রামের তাদের গোষ্ঠীর লোকজন দ্বারা জোর পূর্বক জায়গা দখল ও আক্রমণের খবর পেয়ে আমি গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় নিরাপত্তা ও জানমালের হেফাজত চেয়ে এবং তাদের আক্রমণের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে গত ১২/০৭/২০২৫ ইং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করি। গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ আমাদেরকে সার্বিক নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় অভিযোগের খবর পেয়ে তাজ উদ্দিন ও আলা উদ্দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। তারা ঐদিন রাতেই এলাকায় তাদের গোষ্ঠীর লোকজন ও ভাড়া করে সন্ত্রাসী, অস্ত্র মজুদ করে। আমরা তাদের আক্রমণ করার পরিকল্পনা জানতে পেরে ১৩/০৭/২০২৫ ইং সকাল থেকে নিরাপত্তার সাহায্য চেয়ে গোলাপগঞ্জ থানায় একাধিকবার মোবাইলে কল করলেও রহস্য জনক কারণে কল রিসিভ করা হয় নাই। এদিন অর্থাৎ ১৩/০৭/২০২৫ ইং সকাল ১০.৩০টায় প্রায় তাজ উদ্দিন ও আলা উদ্দিন শতাধিক লোকজন ও ভাড়া করা সন্ত্রাসীসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা করে। তারা আমাদের বাড়ির গাছপালা কর্তন করে ও ভাংচুর করিতে থাকে। তাদের আক্রমণে ও কুড়ালের আঘাতে আমার বড় ভাই খলিলুর রহমান, ফখরুল ইসলাম আমার ছোট ভাই আমাদের ওয়ার্ডের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনজুর আহমদ, আমার ভাইয়ের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম,,খালেদা বেগম ও সালমা বেগম গুরুতর আহত হন।
আহাতদের নিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় ওসমানী মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য আসি। আমাদের বাড়িতে ঢুকে শতাদিক সন্ত্রাসীর আক্রমণে আমার বড় ভাই খলিলুর রহমানে মাথায় চাইনিজ কুড়ালের আঘাতে মারাতœক রক্তাক্ত জখম হয়। তাহার মাথায় ১৩টি সেলাই দেওয়া হয়। সন্ত্রাসীদের আক্রমণে খলিলুর রহমানের মুখের ৪টি দাঁত ভেঙ্গে যায়। উপর্যুপুরি আক্রমণে খলিলুর রহমানের বুকে মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হন। তাহার হার্টে রিং লাগানো লাগবে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন।
আমার বড় ভাই ফখরুল ইসলামের মাথায় দারালো দা এর আঘাতে গুরুতর জখম হয়। তাহার মাথায় ৯টি সেলাই দেওয়া হয়। তাহার হাতের ডান হাতে কানি আঙ্গুল সন্ত্রাসীর দায়ের কোপে মারাত্মক ভাবে কেটে যায়। আমার ছোট ভাই মনজুর আহমদ সন্ত্রাসীদের দারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাতœম জখম হয়। তারা মাথায় ১৪টি সেলাই দেওয়া হয়। তাছাড়া মহিলারাও মারাতœক জখমপ্রাপ্ত হয়। সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি আঘাতে আমার ৩ ভাই ও ৩ ভাবি আহত হন। তাদের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন এখনো রয়েছে। তাছাড়া সন্ত্রাসীরা আমাদের বসত ঘরের সোনা-গয়না ও আমার ছোট ভাই মনজুর আহমদের মুদি দোকানের মালামালসহ প্রায় ৪৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লোটপাট করে নিয়ে যায় এবং তাদের তান্ডবে আরো ৩৩ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। যাহা মামলায় উল্লেখ আছে।
ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ১৪/০৭/২০২৫ ইং আমি ৬১জনকে আসামী করে ও অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনকে আসামী করে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় মামলা দায়ের করি। যার নং-১১/১৪৪ তারিখ ১৪/০৭/২০২৫ ইং। মামলা দায়েরের পর ১নং আসামী তাজ উদ্দিন আমাদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করে। গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে অভিযোগটি রেকর্ড করেন নাই। পরবর্তীতে গত ১৬/০৭/২০২৫ ইং আমার মামলার ১নং আসামী তাজ উদ্দিন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত নং-২, সিলেট এ আদালতকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। আদালত অভিযোগটি এফআইআরের নির্দেশ দিলে গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে। যার নং-১৪/১৪৭। তারিখ ঃ ১৮/০৭/২০২৫ ইং।
আমাদের বিরুদ্ধে তাজ উদ্দিনের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার আমার আহতরা চিকিৎসাধীন থাকায় আমার জামিন নিতে পারি নাই। গত ১৪/০৮/২০২৫ ইং আদালতে আতœসমর্পন করে জামিন নিতে গেলে তাজ উদ্দিনের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় আমার আহত ২ ভাই খলিলুর রহমান ও মনজুর আহমদের জামিন না মঞ্জুর করে আদালত কারাগারে প্রেরণ করেন। আমার ভাই খলিলুর রহমানের হার্টে রিং পরানো এখনো বাকি। খলিলুর রহমান ও মনজুর আহমদের অবস্থা গুরুতর। তাদের চিকিৎসা চলমান। কারাগারে তাদের জীবন ও স্বাস্থ্য নিয়ে পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন।
আমাদের বাড়িতে ঘোষণা দিয়ে সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে। আমার নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাই নাই। সন্ত্রাসীদের আক্রমণে আমাদের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ রহস্য জনক কারণে আসামীদের গ্রেপ্তার করে নাই। আসামীরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা আমাদের উপর আবারো আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। মিথ্যা মামলায় জামিন নিতে গিয়ে আমার আহত ২ ভাই কারাগারে। অথচ সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উপরন্তু ১৪/০৮/২০২৫ ইং তাজ উদ্দিন ও আলা রাতের বেলায় গ্রামের মধ্যে তাদের মুদি দোকানের চুরির নাটক করে। গতকাল ১৫/০৮/২০২৫ইং শুক্রবার সকালে ‘আধুনিক টিভি’ ও ‘বাংলা টাইম এন্ড টিউন’ নামে ২টি ফেসবুক লাইভারকে ভাড়া করে সিলেট থেকে নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে চুরির অপবাদ দিয়ে লাইভ করছে। পরে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় তাদের দোকান আমরা চুরি করেছি বলে অভিযোগ দিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি সে রাতে সিলেটে ছিলাম। আমার দুই ভাই জেলে ও দুই ভাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাড়িতে। সেদিন আমার ভাইদের জামিন না মঞ্জুর করে আদালত কারাগারে প্রেরণ করলে আমরা এমনিতেই মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ি। তাছাড়া অতীতে কখনো আমাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা মোকদ্দমা ছিল না।
আমার আক্রমণের শীকার হওয়া সত্ত্বেও সন্ত্রাসীদের মিথ্যা মামলায় আমার গুরুতর আহত দুই ভাই জেলে। সন্ত্রাসীরা এলাকয়ায় প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে। চুরির নাটক সাজিয়ে আমাদের হয়রানী করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এফআইআর ভুক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা আমাদের মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছে। অন্যতায় প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। আমরা আতংকিত ও নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি। আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনের উর্ধ্বধন কর্তৃপক্ষের কাছে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের নিরাপত্তা চাচ্ছি। ভূয়া সংবাদিক পরিচয়ধারী ‘আধুনিক টিভি’ ও ‘বাংলা টাইম এন্ড টিউন’ নামে ২টি ফেসবুক লাইভার। তারা এর আগেও আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা লাইভ করেছে। আধুনিক টিভির মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হামলার অভিযোগে মামলা রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সে এসব মামলায় জেল খেটেছে বলেও জানতে পেরেছি। বাংলা টাইম এন্ড টিউনের আরিয়ান আহমদ একজন মামলা ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে চাঁদাবাজি ও হয়রানী করার কারণে অতীতে ভুক্তভোগীরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে জেনেছি। বর্তমানে এই দুই ফেসবুক লাইভার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আমাদের এলাকায় গিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ভূয়া রিউমার ছড়াচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ নিজাম উদ্দিন, নির্বাহী সম্পাদক : আইয়ুব আলী অফিস ; খান কমপ্লেক্স, সোনারপাড়া, শিবগঞ্জ, সিলেট। যোগাযোগ : প্রকাশক ও সম্পাদক : ০১৭৩৭-৩০৪৭৫১। ই-মেইল : sylhetbuletin@gmail.com
All rights reserved © 2025 sylhet buletin