বিশেষ প্রতিবেদক:
রাতের আঁধারে ও দিনদুপুরে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট সাদাপাথর থেকে কয়েক’শ কোটি টাকার পাথর লুট করে নিয়ে গেছে পাথরখেকোরা। সেদিকে খেয়াল নেই কোম্পানীগঞ্জ বাসীর! উল্টো তারা পাথর লুট কেলঙ্কারি আড়ালে নিতে বৈধ বালু মহালের ইজারা নিয়ে আন্দোলনে ব্যস্ত!
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, শুধু তারা কোম্পানীগঞ্জের বাসিন্দা না, আমরাও কোম্পানীগঞ্জের বাসিন্দা। আমরা সাদা পাথর নিয়ে আন্দোলন করেছি, এখনও করে যাচ্ছি। কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর লুট করা হচ্ছে, সেদিকে আন্দোলনকারীদের কোনো খেয়াল নেই। ক’দিন পরপর ধলাই ব্রীজ বাঁচাও নাম করে আন্দোলনে নামে ওরা। এটা হতে পারে তাদের ধান্দা আর না হয় সাদা পাথর লুটের ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা? ফেসবুকে দেখেছি, আন্দোলনকারিদের বেশিরভাগই অতীতে দূর্নীতির সাথে জড়িত।
এদিকে, স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনের নিরব ভূমিকা, স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মদদে পাথরখেকোরা সাদা পাথরকে আজ বিরান ভূমিতে পরিনত করেছে! বিষয়টি নিয়ে কোম্পানীগঞ্জের সবাই নীরব থাকলেও পাথর লুটের ঘটনায় উপজেলা বিএনপি কোনো প্রতিবাদ করেনি বরং ধলাই ব্রীজ রক্ষার্থে আন্দোলনে নেমেছে তারা।
বৈধ বালু মহালের ইজারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকারের রাজস্ব দিয়ে তারা ডিসি এবং এসিল্যান্ড কর্তৃক নির্ধারিত সিমানার মধ্যে বালু উত্তোলন করছেন তাও ইজারার শর্তের সব নিয়মকানুন মেনে! ধলাই ব্রীজের নিচ তাদের সিমানায় পড়ে না, সেখান থেকে বালু উত্তোলনও হচ্ছে না। স্থানীয় একদল প্রভাবশালীরা এটা নিয়ে প্রশাসন ও মিডিয়ায় উল্টোপাল্টো তথ্য দিচ্ছে। তারা স্থানীয় থানা, এসিল্যান্ড, ডিসি অফিসে অভিযোগ করেছিলো। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো প্রমান পাননি! তারা অযথা এসব আন্দোলন করে বৈধ ইজারাদারদের কাজে ব্যাঘাথ সৃষ্টি করছে বলে তাদের দাবি।
শনিবার (৯ আগস্ট) বিকেলে ধলাই সেতু রক্ষা কমিটির উদ্যোগে এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদ তীরবর্তী ধলাই সেতুর পূর্বপাড়ে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বালুখেকোদের হাত থেকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই সেতু রক্ষায় সভা ও বিক্ষোভ মিছিলট অনুষ্ঠিত হয়।
পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ধলাই সেতু রক্ষা কমিটির আহবায়ক মো. আলমগীর আলমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মাস্টার মো. নিজাম উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী মো. সাহাব উদ্দিন, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শওকত আলী বাবুল, সহসভাপতি নজির আহমদ, সহ সভাপতি শুকুর আলী, সাধারণ সম্পাদক মো. আলী আকবর, সহসাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম মেম্বার, জুয়েল আহমদ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক আজির উদ্দিন, শ্রমিকদলের সভাপতি আবুল বাশার বাদশা, পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের সভাপতি ফখরুল ইসলাম, উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের সভাপতি আলী আহমদ, বজলু মিয়া, আব্দুল্লাহ আল হেলাল, তাজ উদ্দিন, কুতুব উদ্দিন, এলাইছ আহমদ, সুলেমান তালুকদার, জয়নাল আবেদীন, এডভোকেট মখদ্দছ আলী, তেরা মিয়া, মাসুক মিয়া, সুনা মিয়া, মানিক মিয়া, ছাত্রদলের সদস্য সচিব ইকবাল হোেসন প্রমুখ।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিযোগ বলেন, বারকি নৌকা দিয়ে পাথর লুট হলেও মূলত সেটি সিলেট বিএনপি’র পাথরখেকো এক সিন্ডিকেটের সদস্যরা নেপথ্যে কাজ করেছেন। এরা প্রভাবশালী, হামলা মামলার ভয়ে এদের বিরুদ্ধে কেউই কথা বলে না।
সাদা পাথরে গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে এখান থেকে চলছে পাথর লুটের মহোৎসব। দিনের চেয়ে রাতে আঁধারে দিগুণ গতিতে পাথর লুট করা হচ্ছে। প্রায় এক এক সপ্তাহ ধরে এই এলাকায় কয়েক হাজার ইঞ্জিন নৌকা ও বারকি নৌকা দিয়ে পাথর লুট করা হয়। অন্তত ৪শ’ থেকে ৫শ’ কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে। অদৃশ্য কারনে প্রশাসনের নীরবতার সাদাপাথর লুট হচ্ছে। পাথর লুটের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও তাতে কোনো টনক নড়ছে না কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশসহ স্থানীয় বিএনপি নেতাদের!