সিলেট বুলেটিন ডেস্ক:
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদসহ প্রশাসনের ৬ কর্মকর্তাকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলার বাদী সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল বাকী চৌধুরীসহ ৫ জন শিক্ষাবিদ। সিলেট খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ট্রাস্টি বোর্ডে প্রশাসনের ৫ কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্তি করায় এই মামলা করা হয়। গত বুধবার সিলেটের সিনিয়র সহকারী জজ সদর আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে প্রশাসনের ৫ কর্মকর্তাকে আগামী ৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছেন। সিলেট খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ হচ্ছে সিলেট অঞ্চলের প্রথম প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রায় ৪০ বছর আগে ১৯৮৬ সালে সাবেক স্বনামধন্য জেলা প্রশাসক ফয়জুল্লাহর সময়ে এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সাল থেকে শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। আর এতে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে এ অঞ্চলের স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ ও গুণিজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে এ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৫ জন ট্রাস্টি রয়েছেন। তারা হলেন- সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও এমসি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল বাকী চৌধুরী, এমসি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এ এ ন এ এ মাহবুব আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জামিল আহমদ চৌধুরী, সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. নজরুল হক চৌধুরী। তারা সিলেটের আলোকিত মানুষ এবং বর্তমান সময়ে প্রবীন শিক্ষাবিদ হিসেবে পরিচিতি। আদালতে তাদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
বিবাদীরা হলেন- জেলা প্রশাসক ও খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রে (রাজস্ব), সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড সিলেট মহানগর সার্কেল ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার শিক্ষা শাখা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। মামলার আবেদনে সিলেট খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ট্রাস্টি বোর্ডের ৫ সদস্য উল্লেখ করেন- স্কুল অ্যান্ড কলেজটি ট্রাস্টি বোর্ডের দ্বারা পরিচালিত হয়। স্কুলটি সুনামের সঙ্গে সিলেটের শিক্ষা প্রসারে ভূমিকা রাখছে। গেল কয়েক বছরে ওই স্কুলের তিনজন ট্রাস্টি নুরুল ইসলাম, সালেহ আহমদ এডভোকেট ও সাংবাদিক আব্দুল ওয়াহেদ খান মৃত্যবরণ করেন। গত ৪ঠা জুন স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ডিসি মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সভাপতিত্বে ট্রাস্টি বোর্ডের ২০০তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার ৪ নম্বর এজেন্ডায় ট্রাস্টি বোর্ডের নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি রাখা হয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে সভার সভাপতি কোনো আলোচনা না করেই সভা শেষ করেন। পরবর্তীতে তিনি নতুন ট্রাস্টি সদস্য হিসেবে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড সিলেট মহানগর সার্কেল ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার শিক্ষা শাখা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে প্রস্তাবনা করেন। ওই প্রস্তাবনায় স্বাক্ষর করার জন্য ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের কাছে প্রেরণ করেন। কিন্তু আলোচনা ছাড়াই টাস্ট্রি বোর্ডে ৫ সদস্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি দেখে হতবাক হন ৫ জন ট্রাস্টি। পরে গত ২৪শে জুন তারা এ ব্যাপারে দ্বিমত জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেন। একই সঙ্গে অতীতে যেভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সে বিষয়টিও তারা পরিষ্কার করেন। কিন্তু সিলেটের স্বনামধন্য ৫ শিক্ষাবিদের এই চিঠিকে অগ্রায্য করে জেলা প্রশাসক গত ৭ই জুলাই ট্রাস্টি বোর্ডের ৫ সদস্য নিয়োগ করেন। এতে সংক্ষুব্ধ হয়েছেন ৫ জন ট্রাস্টি। তারা জেলা প্রশাসকের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বুধবার আদালতে মামলা করেছেন। ৫ ট্রাস্টির আইনজীবী সিলেটের সাবেক জিপি এডভোকেট এরশাদুল হক মানবজমিনকে জানিয়েছেন- আদালতকে সার্বিক বিষয়টি জানিয়ে বর্তমান কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আদালত শুনানি শেষে মামলাটি আমলে নিয়েছেন। নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া ৫ পদের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের আগামী ৫ কার্য দিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছেন। তিনি জানান- নোটিশের জবাব প্রাপ্তির পর আদালত পরবর্তী কার্যক্রম চালাবেন। বলেন, যারা মামলা করেছেন তারা সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তাদের সংক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ সম্পর্কে আদালত অবগত হয়েছেন। জবাবের আলোকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল বাকী চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- এ স্কুল অ্যান্ড কলেজের তিনজন ট্রাস্ট্রির মৃত্যুবরণ করায় নতুন ট্রাস্টি নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে কোথাও কোনো আলোচনা হয়নি। এজেন্ডায় থাকলেও স্কুলের সভাপতি বৈঠকে সেটি উপস্থাপন করেননি। পরবর্র্তীতে আমরা লিখিতভাবে বিষয়টির আপত্তি জানালেও তিনি কিন্তু হঠাৎ করেই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে তার দপ্তরের ৫ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেন। এ নিয়ে আইনি জটিলতা থাকায় আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। তিনি বলেন- জেলা প্রশাসক পদাধিকার বলে সভাপতি। অতীতে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য নিয়োগে অন্যান্য ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা যাদের নাম প্রস্তাব করতেন সেটিই পাস হতো। আর যাদের নিয়োগ দেয়া হতো তারা সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরা থাকতেন। কিন্তু এবার জেলা প্রশাসক কারও সঙ্গে আলোচনা না করে প্রশাসনের ৫ কর্মকর্তাকে নিয়োগ করেছেন। যেটি অতীতে কখনোই হয়নি। এ কারণে তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানান।
সুত্র মানবজমিন।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ নিজাম উদ্দিন, নির্বাহী সম্পাদক : আইয়ুব আলী অফিস ; খান কমপ্লেক্স, সোনারপাড়া, শিবগঞ্জ, সিলেট। যোগাযোগ : প্রকাশক ও সম্পাদক : ০১৭৩৭-৩০৪৭৫১। ই-মেইল : sylhetbuletin@gmail.com
All rights reserved © 2025 sylhet buletin