কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চরগোরকমন্ডল এলাকায় ধরলার তীব্র ভাঙনে অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়িসহ শতশত বিঘার ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ওই এলাকায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে মুজিব কেল্লার ভবনসহ প্রায় পাঁচশতাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘর, ভিটামাটিসহ শতশত বিঘা ফসলি জমি ও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ধরলার তীব্র ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে টেকসই তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
শুক্রবার (১১ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায় ধরলার তীব্র ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই আগাম ঘর-বাড়ি অন্য এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন।
শেষ সম্বল ঘর-বাড়ি ও ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কায় চরম দুর্দিন পার করছেন চরগোরকমন্ডল গ্রামের বাসিন্দা আলা-বকস (৬৫)। ধরলার তীব্র ভাঙনে ধরলা নদী বাড়ীর কাছে এসে পড়েছে। তাই আগ্রাসী ধরলার ভাঙনে ঘর-বাড়ি রক্ষা করতে ইতোমধ্যে অন্য জায়গায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।
এদিকে বাড়ি-ঘর নতুন জায়গায় নতুন করে তোলার টাকার অভাবে চরম দুচিন্তায় দিন পার করছেন আলা-বকস।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আলা-বসক জানান, কি কই বাহে, ৬৫ বছর বয়সে কমপক্ষে পাঁচ বার বাড়ী-ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বাড়ী ঘর জমি জমা হারিয়ে পথে বসেছি। আমার নিজস্ব জমি না থাকায় গত চার বছর ধরে মানুষের জমিদের ঘরবাড়ি করে স্ত্রীসহ অতিকষ্টে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। কিন্তু ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস ধরলার তীব্র ভাঙন একেবারে বাড়ীর কাছেই চলে এসেছে। এখন আমার শ্যালকের জমিতে বসবাস করার জন্য ঘরবাড়ি সড়ানোর কাজ শুরু করেছি। কিন্তু টাকার অভাবে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
একই এলাকায় জহুরুল ইসলাম (৩৫) ও তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম জানান, নদী ভাঙতে ভাঙতে একেবারে আমাদের বাড়ি থেকে নদীর দুরত্ব ২০ গজ। যে কোন মুহূর্তে আমাদের বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছি তারা আরও জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে ধরলার ভাঙন ঠেকাতে না পারলে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চর গোরকমন্ডল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আয়াজ উদ্দিন জানান, চর গোরকমন্ডল এলাকার গত বর্ষায় ধরলার তীব্র ভাঙনে ৩০টি পরিবার ও হাফ কিলোমিটার সড়কসহ শতশত ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সে সময় কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর ৫ থেকে ৬ হাজার জিওব্যাগ দিয়েছেন। কিন্তু ভাঙন ঠেকানো যায়নি।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে হুমকির মুজিব কেল্লার ভবন, স্কুল, মাদ্রাসাসহ ওই এলাকার ৫০০ পরিবার। বর্ষার আগে ধরলার ভাঙন রোধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাছেন আলী জানান, ‘আমি ভাঙন এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছে। দুই এক দিনের মধ্যে ভাঙন রোধের জন্য কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী বরাবরে আবেদন জানানো হবে’।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, ‘চর-গোরকমন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর তীব্র ভাঙন ঠেকাতে গত বছর ৭ হাজার জিওব্যাগ ফেলানো হয়েছে। আপাতত আমাদের কাছে এই মুহূর্তে জিওব্যাগ নেই। চরগোরকমন্ডলে প্রচুর পরিমাণে জিওব্যাগ লাগবে। জিওব্যাগের বরাদ্দ আসলেই সেখানে জিওব্যাগ দেয়া হবে।।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ নিজাম উদ্দিন, নির্বাহী সম্পাদক : আইয়ুব আলী অফিস ; খান কমপ্লেক্স, সোনারপাড়া, শিবগঞ্জ, সিলেট। যোগাযোগ : প্রকাশক ও সম্পাদক : ০১৭৩৭-৩০৪৭৫১। ই-মেইল : sylhetbuletin@gmail.com
All rights reserved © 2025 sylhet buletin