স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার অফিসে মঙ্গলবার বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বৈঠকে আরিফুল হক চৌধুরী ও ডিসি শের মাহবুব মুরা।
গত ২ জুলাই নগরের কোর্ট পয়েন্টে এক সমাবেশে সিলেট জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী।
এই সমাবেশ থেকে ডিসির প্রত্যাহার দাবি করে ‘৫ জুলাইয়ের পর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আর কোন আলোচনা হবে না’ বলে মন্তব্য করেছিলেন আরিফ।
তবে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক টেবিলেই আলোচনায় বসেন আরিফুল হক চৌধুরী ও ডিসি শের মাহবুব মুরাদ।
পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি ইস্যুতে মঙ্গলবার বিকেলে বৈঠক ডাকেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী। বৈঠকে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতা, রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী ও ডিসি শের মাহবুব মুরাদ। বিভাগীয় কমিশনারের দুই পাশে মুখোমুখিই বসা ছিলেন তারা। তবে বৈঠকে তাদের মধ্যে কোন কথা হয়নি বলে জানা গেছে।
তবে বৈঠকে নিজের বক্তব্যে জেলা প্রশাসনের কঠোর সমালোচনা করেন আরিফ। উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য জেলা প্রশাসনকে দায়ী করে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘জেলা প্রশাসন সিলেটের মানুষের পালস না বুঝে অনেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। অনেক সময় আলোচনার মাধ্যমে অনেক বড় বড় সমস্যারও সমাধান করা যায়। কিন্তু জেলা প্রশাসন এই উদ্যোগ না নিয়ে ভুল করেছে।’
এরআগে ২ জুলাই কোর্ট পয়েন্টের সমাবেশে জেলা প্রশাসকের প্রত্যাহার দাবি করে আরিফুল হক বলেছিলেন- ‘আজকে শুধু বলে গেলাম। ৫ তারিখের পরে কিন্তু তুমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আর কোন আলোচনা হবে না। এই জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করা না হলে ৫ তারিখের পরে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।’
সেদিন আরফিুল হক আরও বলেছিলেন- ‘এই জেলা প্রশাসক বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রত করার জন্য কাজ করছেন। জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে দাড় করাচ্ছেন। আর না হলে এসব কাজ (স্টোন ক্রাশার মিল ও কিছু স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান) করার আগে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে বসতেন। তাদের পরামর্শ নিতেন’।
মঙ্গলবার বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বৈঠকে কর্মবিরতি কর্মসূচী থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন পরিবহন-মালিক শ্রমিকরা। বিভাগীয় কমিশনারও তাদের দাবিগুলো বিবেচনার আশ্বাস দেন।
এসময় বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী বলেন, মানুষের জন্য আইন মানুষের জন্যই সবকিছু। মানুষ ছাড়া কোনো পরিবেশ নেই। সুতরাং আমরা সিলেটবাসীর কল্যাণে সবটুকু আমরা করবো।
পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারাদেশে যদি পাথর উত্তোলন করা যায় তাহলে সিলেটে কেন উত্তোলন করা যাবেনা? আমরা সবগুলো সিদ্ধান্ত রিভিউ করবো। প্রয়োজনে নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালতও আছেন। সরকার মানুষের জন্য। মানুষ না থাকলে সরকার থেকে কি হবে বা সরকার কার জন্য থাকবে?
তিনি পাথর সংশ্লিষ্ট মালিক শ্রমিক ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ এবং সিলেট জেলা পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দকে আশ্বাস দেন যে, তাদের সব দাবিদাওয়া সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠাবেন এবং এসব নিয়ে দুইদিন পর আবার ছোটো পরিসরে বসে বিস্তারিত আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত হবে।
এরআগে ছয় দফা দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। অবশ্যও বেলা ১ টায় ধর্মঘট আপাতত স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দবিগুলো হলো- তাদের ৬ দফা দাবিগুলো হলো সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ এর ৩৬ ধারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান ২৫ বছর, সিএনজি ও ইমা লেগুনা এর ক্ষেত্রে ১৫ বছর ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করার প্রজ্ঞাপন বাতিল করা, সিলেটের সকল পাথর কোয়ারীর ইজারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও সনাতন পদ্ধতিতে বালু মহাল এবং পাথর কোয়ারী খুলে দেওয়া, বিআরটিএ কর্তৃক সকল গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বাতিল ও গণ পরিবহন ও পণ্য পরিবহনের উপর আরোপিত বার্ধিত টেক্স প্রত্যাহার করা, সিলেটের সকল ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করন বন্ধ, বিদ্যুৎ মিটার ফেরত ও ভাংচুরকৃত মিলের ক্ষতিপূরণ এবং গাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া পাথর ও বালুর ক্ষতি পূরণ দেওয়া, সিলেটের পরিবহণ মালিক-শ্রমিক ও ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে অবিলম্বে সিলেট থেকে প্রত্যাহার করা ও সড়কে বালু ও পাথরবাহী গাড়িসহ সকল ধরনের পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের হয়রানী বন্ধ করা।