শিরোনাম
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ ক্যাম্পে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে সেনাবাহিনীর মতবিনিময় সভা   দোয়ারাবাজারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কারাদন্ড ৪ জনকে  ছাতকে নোয়ারাই -জোড়াপানি-নরসিংপুর সড়কের  মৌলা ব্রীজ ভেঙ্গে পড়ায় দুর্ভোগে হাজার-হাজার মানুষ  তেঁতুলিয়ায় অবৈধ ভাবে সার মজুদ,কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ফিরে গেলেন কৃষি অফিসের কর্তারা কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তের ওপার ভারতের একটি গাছের ডালে ঝুলছে বাংলাদেশী যুবকের লাশ  বিএনপির অফিস ভাংচুরের ঘটনায় ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে তালায় জাতীয় নাগরিক পার্টির মতবিনিময় সভা কানাইঘাটের আলোচিত জামায়াত নেতা হাফিজ শিহাব হত্যায় ৪ আসামির ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর প্রধান উপদেষ্টা ভিআইপি ফ্লাইটে বড় সিদ্ধান্ত নিল  শেরপুর জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় ৬টি পুলিশ ফাঁড়ির প্রস্তাবনা
শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন

কানাইঘাটের আলোচিত জামায়াত নেতা হাফিজ শিহাব হত্যায় ৪ আসামির ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

স্টাফ রিপোর্টার / ২২ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টার:

সিলেট কানাইঘাটের আলোচিত জামায়াত নেতা হাফিজ শিহাব উদ্দিন হত্যা মামলায় ৪ আসামির ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে ৪ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে সকালে জেল হাজত থেকে আসামিদের আদালতে আনা হয়। রিমান্ড মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদী পক্ষের আইনজীবী মাসুক আহমদ চৌধুরী ও সোলেমান আলী। আসামি পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আব্দুল মুকিত জাহাঙ্গীর।

 

রিমান্ডের আসামিরা হচ্ছেন কামাল আহমদ, সেলিম আহমদ,নাহিদ আহমদ ও আতাউল ইসলাম। এর মধ্যে কামাল আহমদ এজহারভ‚ক্ত আসামি। অন্য আসামীদের সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতারের পর মামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ পেয়ে আসামি করা হয়। গ্রেফতারকৃত এ মামলার প্রধান আসামী শিব্বির আহমদ ইতিমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে হত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার স্বীকারোক্তি প্রদান করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজীব রহমান আসামীদের ৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে সিলেট-৫ নং আমলী আদালত,কানাইঘাটের মাননীয় বিচারক ১ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। নিহত শিহাব কানাইঘাট উপজেলার ৯নং রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের খালোপার পশ্চিম মহল্লা গ্রামের বাসিন্ধা মৃত মজু মিয়ার ছেলে। পূর্বশত্রæতার জের ধরে নিজ গ্রামে ধারালো চাকু দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। গত ২৭ মে মঙ্গলবার রাত অনুমান ১০ টা দিকে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় ২৮ মে কানাইঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন নিহত শিহাবের স্ত্রী হেপী বেগম। কানাইঘাট থানার মামলা নং-০৯, ধারা, ১৪৩/৩০২/১৪১/৩৪ পেনাল কোড।

 

শিহাবের স্ত্রী হেপি বেগম তার দায়ের করা এজাহারে তার স্বামীর হত্যাকারী হিসাবে খালোপার গ্রামের ইসলাম উদ্দিন বগলাইয়ের চার ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, জামাল আহমদ, কামাল আহমদ ও যুবলীগ নেতা শিব্বির আহমদ এবং মৃত আনফর আলীর ছেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর রহমানসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে। মামলার এক সপ্তাহ পর পুলিশ হত্যা ঘটনার মূলনায়ক যুবলীগ নেতা শিব্বির আহমদকে মাদারিপুর জেলা থেকে তার ভাই কামাল আহমদকে টিলাগড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। বাকি আসামীরা এখনো পালাতক রয়েছেন। ঘাতক শিব্বির বলছে, কয়েকদিন আগে খালোপার গ্রামে রশিদ নামের তাদের এক চাচাতো ভাই কাতার খুন হন। এই খুনের ঘটনায় শিহাবের কিছু স্বজন মামলার আসামী হলে শিহাব আহমদ নাকি তাদের ছাড়িয়ে আনতে তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। অপরদিকে সে সময় প্রবাসী রশিদের খুনিদের বাড়িতে আগুন দিয়ে জালিয়ে দেওয়া হয়। উক্ত ঘর পুড়ানোর ঘটনায় একটি মামলা হলে সেই মামলা তদবির করছিলেন শিহাব আর এতেই শিহাবের উপর ক্ষিপ্ত হয় খুনিরা। ঘটনার দিন রাতে শিহাব যেখানে দাড়িয়ে ছিলেন সেখানে তিনি ৩/৪ জন অজ্ঞতনামা মুখোশপরা লোক নিয়ে দাড়ানো ছিলেন শিব্বিরের উপর হামলা করার জন্য। স্থানীয় ধাক্কার বাজারে নিজের মোটর সাইকেল রেখে শিব্বির গ্রামের মাঝের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় শিহাব তার উপর হামলার চেষ্টা করলে ঐ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার স্থানীয় গ্রামের এক চানাচুর বিক্রেতার মাথার উপরের ঝুড়িতে থাকা চাকু নিয়ে তিনি শিহাবকে একাধিক আঘাত করে পালিয়ে যান। পরদিন শুনতে পান শিহাব মারা গেছে। গ্রেফতারকৃত আসামী একই গ্রামের সেলিম মিয়াগংদের সাথে শিহাবের পূর্ব বিরোধ চলে আসছিলো। এই সেলিম শিব্বিরদের আত্মীয় হওয়ার কারণে সেলিমই এজাহার নামীয় আসামীদের দিয়ে শিহাবকে খুন করিয়েছে, এমন তথ ্যপ্রমান পুলিশ তদন্তে পেয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামী সেলিম, নাহিদ, আতাউল, শিব্বির এলাকায় একত্রে চলাফেরা করতো, এমনকি তারা এলাকায় নানা রকম অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলো বলে পুলিশ তদন্তে সত্যতা পেয়েছে। গ্রেফতারকৃত সেলিমই বলেছে ঘটনার সময় কারা কারা উপস্তিত ছিলো।

 

আমাদের অনুসন্ধানকালে স্থানীয় অনেক নিজের নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলছেন, নিহত শিহাবকে আরো কিছু ভিন্ন কারণে হত্যা করা হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমল থেকে শিহাব ঘাতকদের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে বাধা হয়ে দাড়িয়ে ছিলো। কয়েক মাস আগে স্থানীয় জামেয়া ইসলামীয়া ইউসুফিয়া মাদ্রাসার সামন থেকে একটি মটর সাইকেল চুরি হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। সে সময় শিহাব স্থানীয় ধাক্কার বাজারে শিব্বিরকে বলে যে, চুরি হওয়া মটর সাইকেলটি তাদের কর্মগ্যাং নামের চক্রটি চুরি করেছে। এনিয়ে শিহাবের সাথে খুনি শিব্বির তার ভাই শহিদুলের কথাকাঠা কাঠি হয়। এ সময় উপস্তিত সকলের সামনেই শিহাবকে খুনের হুমকি দেয় কর্মগ্যাং লিডার শাব্বির আহমদ। বিষয়টি শিহাব ঘাতকদের পিতাকেও জানিয়ে ছিলেন। যার ফলে আরো ক্ষিপ্ত হয় কর্মগ্যাং চক্রের লিডার শাব্বির ওতার সহযোগীরা। তারা শিহাবকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করতে থাকে। গত বছর সুরমা নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের বাধা হয়ে দাড়িয়ে ছিলেন এই শিহাব। সে সময় খুনিরা খালোপার নদী থেকে বালু উত্তোলনের কন্ট্রাক্ট নিয়ে ছিলেন। কিন্তু শিহাবের প্রতিবাদের কারণে ব্যর্থ হয়ে ছিলেন। এদিকে কানাইঘাট বোরহান উদ্দিন রোড দিয়ে সম্প্রতি সময়ে সকল চোরাচালানের প্রতিটি গরু-মহিষের গাড়ি থেকে নিয়মিত চাঁদা নিতো শিব্বির চক্র। বিষয়টি গ্রামের ভাবমুর্তি নষ্ট করে বলে শিব্বিরের পিতাকে অবহিত করেন নিহত শিহাব। এঘটনায় বাজারে গিয়ে শিব্বিরকে গালিগালাজ করতে থাকে শিব্বির ও তার ভাইয়েরা। অপরদিকে গত ১৭ মার্চ খালোপার গ্রামে শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে কাতার প্রবাসী রশিদ আহমদ (২৮) খুন হন। নিহত রশিদ শিহাবের ঘাতকদের আত্মীয়ও একই গোষ্টির লোক ছিলেন। খুনের ঘটনার জেরে গ্রামের উত্তেজিত কিছু লোকজনকে নিয়ে শিব্বিরগং হামলাকারী খুনী সাজু, রাজুদের বসত ঘর আগুনে পুড়িয়ে দিয়। এ ঘটনার পর থেকে নাকি শিহাব রশিদের খুনিদের বাঁচাতে চেষ্টা করছিলেন। তিনি নাকি আদালতে দৌড়ঝাপ করছিলেন, এমনটাই ধারণা করে শিহাবের উপর আরো ক্ষিপ্ত হয় খুনিরা। শিহাব খুনের ঘটনার দিন বিকালে স্থানীয় ধাক্কার বাজারে শিহাবের সাথে ঘাতকদের বিভিন্ন বিষয়ে তর্কবিতর্ক হয়। এ ঘটনায় শিহাবের বড় ভাইকে বিষয়টি অবগত করে শিব্বিরের বড় ভাই যুবলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম। শিহাবের বড় ভাই শহিদুলকে আশ্বস্থ করেছিলেন সুষ্ট বিচার করে দেওয়ার। কিন্তু সেই দিন সন্ধ্যার পর শিব্বিরসহ তার কয়েক সহযোগী গোপাপগঞ্জ উপজেলার পরগণা বাজারে তার এক বন্ধুর বাড়িতে বসে পরিকল্পনা করে রাস্তায় শিহাব আহমদের উপর হামলার। কিন্তু ভাগ্য সেখান থেকে শিহাবকে নিরাপদ রাখলেও নিজগ্রামের নির্মম ভাবে হামলার স্বীকার হয়ে খুন হতে হয় তরুন তিন সন্তানের জনক শিহাবকে। ঐদিন শিহাব নিজগ্রাম থেকে রাজাগঞ্জ বাজার পর্যন্ত এসেছিলেন এবং একটি বিকাশের দোকান দোকান থেকে টাকা উত্তোলন করে নিজের গ্রামে ফিরে যান। কে জানতো নিজ গ্রামেই খুন হতে হবে ব্যবসায়ী শিহাব আহমদকে। তবে শিহাব খুনের ঘটনায় এলাকায় কর্মগ্যাং নিয়ে আতংক দেখা দিয়েছে।

 

 


এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ