স্টাফ রিপোর্টার:
পতিত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একসময় যুক্তরাজ্য কানেকশন অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। লন্ডন কানেকশনে আওয়ামী লীগে রাজনীতি ভাগ্য নির্ধারণ হতো অনেকের। বিশেষ করে সিলেট আওয়ামী লীগ রাজনীতি ছিল সেই রোডে। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময় সিলেটের আনেক নেতার ত্যাগ-তীতিক্ষার কবর রচনা হয়েছিল লন্ডন কানেকশনে।
সময় বদলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখন আস্তাকূঁড়ে। একই ধারায় চলতে শুরু করেছে বিএনপির রাজনীতি। ক্রমশ শক্তিধর হয়ে উঠছে লন্ডন কানেকশন। সেখানকার নেতারা দলের মানুষের চেয়ে কাছে টেনে নিচ্ছেন ডেভিলদের নির্বিঘ্নে। সেই কাছের মানুষগুলো ছিলো বিগত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, প্রভাবশালী নেতাদের সাথে ফটোসেশন করে দেশের মাঠিতে লুটেছে বীরদর্পে। নিমিষে কাছে ভিড়ে যাচ্ছে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ক্ষমতাধর বিএনপি নেতাদের বগলে।
তেমনি একজন যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ডেভিল শামীম আহমদ। সিলেটের বিয়ানীবাজার বাসিন্দা হলেও তার বাসা নগরীর সুবিধবাজারে। এখন বসবাস করছেন যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে। এখন তিনি যুক্তরাজ্য বিএনপির কতিপয় নেতার কাছের লোক। তাই আওয়ামী লীগের আপনজনদের সুরক্ষায় তৎপর হয়ে উঠেছেন দেশে। সেই ক্ষমতা জাহির করতে যেয়ে লন্ডনের কিছু শীর্ষ নেতাদের বামে ডানে ঘেঁষে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। এছাড়া দেশের ক্ষমতাসীন এন্ট্রীম সরকারে কিছু প্রভাবশালীদের সাথেও সম্পর্ক গড়ে দেশে ও বিদেশে লবিং বাণিজ্য শুরু করেছেন তিনি। এতে তাকে নিয়ে লন্ডন ও সিলেটে চলছে সমালোচনার ঝড়।
যুক্তরাজ্য ও সিলেটের স্থানীয় বিএনপি সূত্র বলছে, বিগত আওয়ামী লীগের এই ডেভিল কীভাবে লন্ডন বিএনপির নেতাদের প্রিয়ভাজন হয়ে উঠলো রাতারাতি। অথচ তার পরিচয়, পরিচিতি, সেই সময়ের তৎপরতা অজানা নয় যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতাদের। সম্প্রতি পতিত আওয়ামী লীগের শিক্ষা মন্ত্রী দিপু মনি, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম মান্নান ও বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর সাথে শামীমের একাধিক ঘনিষ্ট মুহুর্তের ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এছাড়া যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে তার সখ্যতাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফান্ডিং এর ঘটনা ছিলে ওপেন সিক্রেট। যুক্তরাজ্য বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র নেতা জানান, শামীম আগে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপিসহ নেতাদের সাথে গভীর সর্ম্পকে জড়িয়ে ছিল। বিভিন্ন ফায়দা নিয়েছে দেশে-বিদেশে।
তিনি আরো বলেন, পট পরিবর্তনের পর এখন সে যুক্তরাজ্য বিএনপির একাধিক নেতাদের সাথে প্রকাশ্যে ঘুরছে। এনিয়ে আপত্তি তুলেও কাজ হয়নি। বরং সেই খরব চলে যায় তার কানে। এনিয়ে অনেকের সাথে রাগ অভিমান করে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তবে নেতারা এখন তাকে আশেপাশে না রেখে একান্তে ডেকে নিয়ে সম্পর্ক বহাল রাখছেন।
সূত্র বলছে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগের সিলেটি নেতাদের স্বার্থ রক্ষার মিডিয়া হয়ে উঠছেন শামীম। তার মাধ্যমে ওই নেতাদের বিভিন্ন লবিং বাণিজ্য করছেন বিএনপি নেতারা। বিশেষ করে ওই নেতাদের সিলেট বলয়ের নেতাকর্মীদের মামলা মোকদ্দমা থেকে রক্ষাসহ পূর্ণবাসনে ভূমিকা রাখছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির কতিপয় শীর্ষ নেতা। সিলেট মহানগরীর সুবিদবাজার এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, শামীমের বাসা রয়েছে আমাদের পাড়ায়। আওয়ামী লীগের সরকারের সময় দেশে আসলে তার বাসায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভিড় থাকতো। এছাড়া প্রশাসনের কর্মকর্তারাও আড্ডায় জড়ো হতেন। এখন ওই শামীম বিএনপির লোক হয়ে গেল রাতারাতি।
লন্ডন যুবদলের একজন সিনিয়র নেতা জানান, সত্য বললে বিএনপির নেতাদের বদ নজরে পড়ে যাবো আমি। আমরা এখন দূরে চলে যাচ্ছি। অর্থের বলে ডেভিলরা এখন আামাদের নেতাদের কাছের লোক হয়ে উঠছে। ডেভিলরা আমাদের নেতাদের ক্ষমতা দিয়ে তাদের অনুসারীদের প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে দেশে মনোবলী করার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রবাসী রাজনীতিকরা সেই বিষয়টি অনুধাবন না করলেও দেশের বিএনপির রাজনীতিকদের কাছে বিষয়টি চরম কষ্টের। দেশের রাজনীতিকরা দুর্যোগে, সঙ্কটে দলের পাশেই থাকে। প্রবাসী রাজনীতিকদের সেকেন্ড হোম রয়েছে, যেমন ছিলো প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাদের। সু-সময়ে ঘি মাখন খেয়েছে, এখন নিরাপদে চলে এসেছে যুক্তরাজ্যে।
তাই সময় থাকতে আওয়ামী লীগের প্রবাসী ডেভিলরে ব্যাপারে সাবধান হওয়া জরুরী। এসব অভিযোগ নিয়ে শামীমের যুক্তরাজ্যের নাম্বারে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেনি।