স্টাফ রির্পোটার:
সিলেটের জৈন্তাপুরে সন্ত্রাসীদের ভয়ে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ব্যবসী খন্দকার রেজাউল করিম। তিনি উপজেলার গৌরিশংকর গ্রামের মৃত খন্দকার রমজান আলীর ছেলে। স্থানীয় কতিপয় সন্ত্রাসীদের ভয়ে নিজের বাড়িতে যেতে পারছেন না প্রায় ২০ দিন থেকে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে বন্ধ রয়েছে তার পরিবারের ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা। তিনি ন্যায় বিচারের আশায় প্রশাসনসহ আদালতে বারান্ধায় ঘুরছেন দীর্ঘ দিন থেকে। স্থানীয় জবর দখলকারীরা রেজাউল করিমের বসতবাড়ির জায়গা-জমি গ্রাস করে নিতে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে উল্টো তাকেই হয়রানী করে যাচ্ছে। এমন অভিযোগ স্থানীয় কয়েকজনের। তবে তারা পুলিশ ও স্থানীয় এসব সন্ত্রাসীদের ভয়ে তাদের নাম প্রকাশ করতে অপারগতা স্বীকার করেছেন। স্থানীয়রা আরো জানান, এসব সন্ত্রাসীরা এতোই প্রভাবশালী রেজাউল করিমকে তার নিজের বাড়িতে গৃহবন্ধি করে রাখে। খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকসহ থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন রকম আইনি ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। কারণ এসব সন্ত্রাসী পরিবারে সদস্য নাকি আবার পুলিশের লোক।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়,জৈন্তাপুর উপজেলার গৌরিশংকর ও কমলাবাড়ী গ্রামের বাসিন্ধা মৃত সুরুজ আলী ছেলে বশির উদ্দিন, মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে ইসমাইল আলী, আব্দুল জলিলের ছেলে মাসুম আহমদ, ইসমাইল আলীর ছেলে রাকিবুল ইসলাম, মৃত আব্দুল খালিকের ছেলে নজরুল ইসলাম, মৃত ওবায়দুল্লাহ ছেলে কাজী খলিল উল্লাহ, মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে শহিদ মিয়া, আব্দুল-জলিলের ছেলে আলা উদ্দিন, সাইফুুল ইসলামের ছেলে নাঈম আহমদ, আব্দুল জলিলের ছেলে সিরাজ উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী মুন্সীর ছেলে আবুল কাশেম, মছদ্দর আলী ফেলুর ছেলে জসীম উদ্দিন, আবুল কাশেমের ছেলে কামরুল ইসলাম, আব্দুল করিমের ছেলে কামিল আহমদ, আতিকুর রহমানের ছেলে শাহাদত হোসেন, আবুল হাশেমের ছেলে আব্দুল কাদির ময়না, আব্দুস সামাদের ছেলে মাসুক আহমদ, আবুল কাশেমের স্ত্রী লাইলী বেগমসহ আরো অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জনের একটি সঙ্গবদ্ধ একটি চক্র দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের বসত বাড়ির জমি জবর দখল করে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। এনিয়ে রেজাউল করিমের উপর একাধিকবার হামলা-মামলার ঘটনা ঘটে। তবে প্রতিটি মামলায়ই রেজাউল করিমের পক্ষে রায় প্রদান করেন আদালত।
বিভিন্ন মামলার কাগজপত্র, অভিযোগনামা, শালিসনামা ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সিলেট জেলার, জৈন্তাপুর থানার, গৌরীশংকর মৌজার, জে, এল নং ১৭, এস এ দাগ নং ৫৯, বি, এস দাগ নং ৩৩৬, পরিমান ০.৮৬ একর ভরাট রকম ভ‚মি। বি.এস দাগ ৩৯৭জমি পরিমান ০.১৭ একর পুকুর পার রকম ভুমি রেজাউলের পিতা মৃত খন্দকার রমজান আলী দীর্ঘ ৬০/৭০ বৎসর যাবৎ ভোগ ব্যবহার করা অবস্থায় তিনি মারা গেলে রেজাউল করিম সহ তার শরীকানগণ শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোগদখল করে আসছিলেন। কিন্তু উল্লেখিত কতিপয় ব্যক্তিদের সাথে হঠাৎ করে বিরোধ দেখা দিলে রেজাউল করিম বাদী হয়ে সহকারী জজ আদালত জৈন্তাপুর কোর্টে স্বত্ব মোকদ্দমা নং ২৩৩/২০১৭ইং দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে মাননীয় আদালত রেজাউলের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে রেজাউলের পক্ষেই রায় ডিক্রি প্রদান করেন। এসব সন্ত্রাসীরা কখনো গ্রামের মসজিদের নামে, কখনো গ্রামের কবরস্থানের নামে, কখনো ব্যক্তি মালিকানা দাবী করে উক্ত জমি জবর দখল করে নিতে রেজাউল করিম ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর সুপরিকল্পিত হয়ে বে-আইনী ভাবে সন্ত্রাসী কায়দায় ইসমাইল আলী, বশির উদ্দিন, খলিলুল্লাহ, আলা উদ্দিন, মাসুম আহমদ গংদের নেতৃত্বে রামদা, গাসিদা, সুলফি, লাঠি, রড সাবল, কোদাল ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রেজাউলের বসত বাড়িতে একাধিকবার হামলা ও ভাংচুর করে। এছাড়া রেজাউলের লাগানো ছোট-ছোট প্রায় ১০০০ টি নানা প্রজাতির গাছের চারা কেটে ফেলে। এতে তিনি প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ক্ষকির সম্মুখিন হন। যদিও রেজাউল করিম থানা পুলিশের কথায় একাধিকবার শালিস বিচার বৈঠক বসেন। এ ফাঁকে বিবাদীরা তাকে বিভিন্ন রকম হয়রানি করতে আদালত এবং থানায় একাধিক মামলা-মোকদ্দমা দায়ের করে। পরে আদালতে বিবাদীরা তাদের পক্ষের জমির কোন কাগজপত্র উপস্থাপন করতে না পারায় কাগজপত্র যাচাই করে একাধিক বার রেজাউলের পক্ষে আদালত মামলার রায় প্রদান করেন। এরকম একটি স্বত্ত¡ মামলা দায়ের করেন আব্দুস সামাদের বড় ভাই আব্দুল হাই গং। যাহা জৈন্তাপুর সহকারী জজ আদালত মামলা নং-২৫১/২০২১৭ ইং। আদালত উক্ত মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে মামলাটি মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় আব্দুল হাই গংদের মামলাটি নথিজাত করেন। এছাড়া উক্ত জমি নিয়ে রেজাউল করিম নিজে বাদী হয়ে সিলেট জৈন্তাপুর সহকারী জজ আদালতে একটি স্বত্ব মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং-২৩৩/১৭ইং। উক্ত মামলায় আদালত কাগজপত্র যাচাই করে রেজাউল করিমের পক্ষে রায় প্রদান করেন। সিলেট ল্যান্ডসার্ভে ট্রাইব্যুনালে আরেকটি মামলা করেন রেজাউল করিম। যাহারা মামলা নং-১৬৩৮/২০২১ ইং। উক্ত মামলায়ও আদালত রেজাউলের পক্ষে রায় প্রদান করেন। এনিয়ে স্থানীয় ভাবে একাধিকবার বিচার-সালিশ বৈঠক বসেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ২০১৮ সালে বিবাদীগণের সাথে একটি আপোষনামা সম্পাদন হয়। সেখানে জৈন্তাপুর উপজেলার গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্তিত ছিলেন। শালিসে বিবাদীরা জমির মালিকানার পক্ষে তাদের কোন কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তাহারা তাদের ভ‚ল স্বীকার করে অঙ্গিকার করে। রেজাউলের সাথে তারা আর কোন রকম বিরোধে জড়াবেনা এবং তার মালিকানা জমি জবর দখলের চেষ্টা করবেনা বলে অঙ্গিকারও করেন। এরপর মসজিদের সীমানার অযুহাত দিয়ে বিবাদীগণ আবারও রেজাউলের সাথে বিরোধে জড়ায়। অথচ ঐ মসজিদের পুকুরের ভুমি রেজাউল করিমের পিতা মৃত খন্দকার রমজান আলীর দান করা। এনিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জমি মাপঝুক করার পর মসজিদের সিমানা নির্ধারণ করেন। বিগত ৬/৭/২০২৪ইং নিজপাট ইউনিয়ন অফিসে ১নং ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে উপজেলার ৪নং দরবস্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ৫নং ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ৬নং চিকনাগুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ উপজেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্তিতে আরেকটি সালিশ বৈঠক হয়। সেখানেও বিচারকরা সকল কাগজপত্র পর্যালোচনা করে রেজাউল করিমকে জমির প্রকৃত মালিক হিসাবে তার পক্ষে এক তরফা রায় প্রদান করেন। এ সময় বিবাদীদের মধ্যে ইসমাইল আলীগং তাদের সকল ভুল স্বীকার করে অন্যায় ভাবে ও লোভে পড়ে রেজাউলসহ তার পরিবারকে হয়রানি করেছেন বলে জানান। ভবিষ্যতে এহেন কাজ আর করবেনা বলে অঙ্গিকার করেন। এ সময় একটি আপোষনামা সম্পাদন করা হয়। এরপর উল্লেখিত ব্যক্তিরা নানামুখি অত্যাচারে রেজাউল করিম দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। সন্ত্রাসীদের ভয়ে তিনি বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বাধ্য হয়ে বিষয়টি নিয়ে তিনি গত ৮/৫/২০২৫ ইং। তারিখে জৈন্তাপুর উপজেলার এ্যসিল্যান্ড বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়া সিলেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং ৩২/২০২৫ ইং। মামলাটি এখন তদন্তাধিন রয়েছে।
এ বিষয়ে রেজাউল করিমের স্ত্রী রুবিনা খন্দকার বলেন, আমার স্বামী গত ২০ দিন থেকে বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। জানিনা উনি কোথায় আছেন? আমি সন্তানাধি নিয়ে আতংকে দিন পার করছি। প্রতিদিনই এলাকার সন্ত্রাসীরা আমার বসত বাড়িতে এসে ভাংচুর, জবর দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের প্রায় ১ হাজারটি গাছের চারা কেঠে ফেলেছে।
এ ব্যাপারে রেজাউল করিমের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আপনারা সরেজমিন গিয়ে যা পেয়েছেন। তাই লিখেন। আমি প্রাণের ভয়ে এখন বাড়ি ছাড়া, আমাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আমি একজন ব্যবসায়ী, সিলেট চেম্বার অব কর্মাসের একজন সদস্য। আমি প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার কামনা করি। রেজাউল করিম আরো জানান, আমি নিরোপায় হয়ে গত ১৮/৫/২০২৫ ইং সিলেট জেলা পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করে আমার উপর হামলা-মামলার বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে বলে আসছি। দেখা যাক তিনি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
এবিষয়ে জৈন্তাপুর থানার ওসি বক্তব্য নিতে থানায় গিয়ে তাকে পাওয়া না গেলে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।