খুলনা প্রতিনিধি:
খুলনা, একসময়ের শান্ত নগরী, আজ এক অসহনীয় যানজটের শহর হয়ে উঠেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যা, আর এর মূল কারণগুলির মধ্যে রয়েছে অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, ভাঙা রাস্তাঘাট, অপর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং।
নগরীর ব্যস্ততম এলাকা গল্লামারী মোড়, সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়ক, মজিদ সরণি, পিকচার প্যালেস, শান্তিধাম মোড়, খানজাহান আলী রোড প্রভৃতি এলাকায় প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকে। নির্মাণাধীন গল্লামারী সেতুর দুই পাড়ের দীর্ঘ যানজটের কারণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছেন না। মাঝে মাঝে যানজটের ভয়াবহতা এতটাই তীব্র হয় যে, পাঁচ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। এর মূল কারণ ইজিবাইকের নৈরাজ্য। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে খুলনা শহরে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইজিবাইকের সংখ্যা ৭৯৫৬টি এবং ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত ২০০০টি। তবে সড়কে চলাচলরত ইজিবাইকের সংখ্যা এর তিন থেকে চারগুণ বেশি। এই ইজিবাইক ও রিকশার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।
গল্লামারী মোড়ের বাসিন্দা মো. জব্বার হোসেন বলেন, “মোড়ে সারাদিন যানজট লেগে থাকে। সড়কে কোনো শৃঙ্খলা নেই। অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান না হওয়া, বিশেষ করে ইজিবাইকগুলোর অবাধ চলাচল শহরে অসহনীয় যানজট সৃষ্টি করছে।”
গত ১১ নভেম্বর (সোমবার) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল জানান, “প্রতিদিন শহরে ইজিবাইকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, যা নগরবাসীকে ভোগান্তির মুখে ফেলছে। অল্প দূরত্বে যেতেও সীমাহীন দুর্ভোগ ও সময়ের অপচয় হচ্ছে।”
নগরীর বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে স্পিডব্রেকার নির্মাণও যানজটের আরেকটি প্রধান কারণ। ময়লাপোতা মোড় থেকে সাতরাস্তার দিকে এক জায়গায় পরপর তিনটি স্পিডব্রেকার তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও জোড়াগেট থেকে নতুন রাস্তার দিকে যেতে নূরনগর এলাকায় খুলনা ফায়ার সার্ভিস ও রেডিও অফিসের সামনে দুটি, গোয়ালখালি এলাকায় পরপর তিনটি এবং বিজিবি কার্যালয়ের সামনে দুটি স্পিডব্রেকার নির্মাণ করা হয়েছে, যা যানজট বাড়াচ্ছে।
যানবাহন চলাচল আরও সুশৃঙ্খল করতে ১৯৮৭ সালে খুলনা নগরীর ১৬টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয় সিগন্যাল বাতি। সর্বশেষ ২০০৭ সাল পর্যন্ত সিগন্যালগুলোর মেরামত, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধসহ দেখভাল করেছে সিটি কর্পোরেশন। এরপর গত ১৭ বছরে সংস্কার বা নতুন করে সিগন্যাল বাতি স্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সিগন্যাল বাতি না থাকায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে বেগ পেতে হয় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে। অনেক সময় হাতের ইশারা না মেনেই চলে যানবাহন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা মারুফ রশীদ জানান, “অবৈধ অটোরিকশা ও ইজিবাইক যানজট সৃষ্টির মূল কারণ। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের তিনটি থানার বাইরে থেকেও প্রতিদিন সকালে অন্যান্য থানা থেকে এসব যানবাহন শহরে ঢুকে পড়ছে এবং যানজট সৃষ্টি করছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মেট্রোপলিটনের অন্তর্ভুক্ত অটোরিকশাগুলোর জন্য আলাদা নেমপ্লেট ব্যবস্থা করব। এছাড়া খুলনা শহরের ২৪টি ওয়ার্ডে লিফলেট ও সভা-সমাবেশের মাধ্যমে অটোরিকশাচালকদের সচেতন করতে হবে।
গল্লামারি মোড় এলাকায় অতিরিক্ত যানজটের আরেকটি কারণ হলো সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়ক। এই সড়কটি ১০০ ফিট থাকার কথা থাকলেও খুলনা সিটি কর্পোরেশনকে ৬০ ফিট দেওয়ার কথা বলেও পুরোটা বুঝিয়ে দিচ্ছে না কেডিএ, যার ফলে এই রাস্তায় কাজ করতে পারছে না খুলনা সিটি কর্পোরেশন। সড়কটি ভালো থাকলে গল্লামারি এলাকায় যানজট কিছুটা কমতে পারে বলে জানান মোল্লা মারুফ রশিদ।
খুলনা সড়ক ও জনপদ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ জানান, “গল্লামারি ব্রিজের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হতে এখনও এক বছর সময় লাগবে। কংক্রিটের কাজ শেষ হয়েছে, এখন স্টিলের কাজ গাজীপুরে চলছে।” সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়কটির কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, “সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়ক কেডিএ এর আওতাধীন।”
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের মতে, খুলনা জেলার বিভিন্ন সড়কে ট্রাফিক পুলিশের পদ সংখ্যা ২৬০টি, তবে দায়িত্বরত রয়েছেন ৮০ থেকে ৯০ জন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, “আমরা ইতিমধ্যে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুব শীঘ্রই এটা বাস্তবায়ন হবে। বর্তমানে দায়িত্বরত সকল পুলিশ সদস্যই ট্রেনিংপ্রাপ্ত। এছাড়াও কিছুদিন আগে ট্রাফিক সপ্তাহের মাধ্যমে আমরা চালক ও যাত্রীদের সচেতন করেছি। মাঠ পর্যায়ে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। বারকোড না থাকায় একটি লাইসেন্স ডুপ্লিকেট করে ১০ থেকে ২০টি ইজিবাইক চালানো হচ্ছে। বারকোড চালু হলে অবৈধ ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। খুব শীঘ্রই খুলনা শহরের যানজট নিরসন হবে বলে আমরা আশাবাদী।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ নিজাম উদ্দিন, নির্বাহী সম্পাদক : আইয়ুব আলী অফিস ; খান কমপ্লেক্স, সোনারপাড়া, শিবগঞ্জ, সিলেট। যোগাযোগ : প্রকাশক ও সম্পাদক : ০১৭৩৭-৩০৪৭৫১। ই-মেইল : sylhetbuletin@gmail.com
All rights reserved © 2025 sylhet buletin