সিলেট বুলেটিন ডেস্ক;
সিলেটজুড়ে বিরাজ করছে মানবপাচার আতঙ্ক। পরপর দুটি ঘটনার পর কাজের সন্ধানে সিলেটের বাইরে যাওয়া লোকজনের মধ্যে এই আতঙ্ক চেপে ধরেছে। সিলেট থেকে তরুণ ও তরুণীদের কাজের লোভ দেখিয়ে কক্সবাজার নিয়ে পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে পাচারকারীদের হাত থেকে ৬ তরুণ ও ২ তরুণী ফিরে আসার পর এই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
ফিরে আসা অপহৃত পুরুষরা জানিয়েছেন, দালালদের হাত বদলের মাধ্যমে তাদেরকে ইন্দোনেশিয়ায় পাচারের চেষ্টা করা হয়েছিল। আর তরুণীরা জানিয়েছেন, গার্মেন্টসে কাজ দেওয়ার কথা বলে তাদেরকে কক্সবাজারের একটি হোটেলে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল।
চট্টগ্রামের শফিউল্লাহ নামের এক ঠিকাদার রাজমিস্ত্রির কাজ দেওয়ার কথা বলে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের রশিদ আহমদ, মারুফ আহমদ, শাহিন আহমদ, এমাদ উদ্দিন, খালেদ হাসান ও আবদুল জলিলকে কক্সবাজার নিয়ে যান। ১৬ এপ্রিল কক্সবাজার পৌঁছে তারা পরিবারের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন। এরপর থেকে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এতে উদ্বিঘ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
২১ এপ্রিল নিখোঁজদের পরিবারের পক্ষ থেকে কক্সবাজার থানায় জিডি করা হয়। পরদিন ২২ এপ্রিল নিখোঁজ রশিদ আহমদ তার ভাই বাহার উদ্দিনকে ফোন দিয়ে জানান, তাদেরকে টেকনাফের বাহারছড়ার একটি পাহাড়ি এলাকায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। আজ রাতেই তাদেরকে ট্রলারে করে ইন্দোনেশিয়া পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সাথে সাথে বাহার উদ্দিন বিষয়টি জানালে পুলিশ বাহারছড়ার শিলখালির আস্তানা থেকে ওই ৬ জনকে উদ্ধার করে।
অপহৃতরা জানিয়েছেন, বাহারছড়ার একটি আস্তানায় আটকে রাখার পর তারা বুঝতে পারেন তারা পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছেন। তখন তারা ছেড়ে দেওয়ার জন্য কান্নাকাটি শুরু করলে দালাল জানায় সে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা দিয়ে তাদেরকে কিনেছে। এখন তাদেরকে ইন্দোনেশিয়ার একটি গ্রুপের কাছে জনপ্রতি ৪ লাখ টাকা করে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ট্রলারে করে বাহারছড়া ঘাট থেকে তাদেরকে পাচারের আগেই সুযোগ পেয়ে রশিদ আহমদ তার ভাইকে ফোন দেন। এরপর তাদেরকে উদ্ধার করা হয়।
এদিকে, গার্মেন্টসে কাজ দেওয়ার কথা বলে সিলেট থেকে দুই তরুণীকে কক্সবাজার নিয়ে আবাসিক হোটেলে বিক্রি করে দিয়েছিল পাচারকারী চক্র। ১৪ দিন নির্যাতন সহ্য করে ওই দুই তরুণী ফিরেছেন সিলেটে।
ভূক্তভোগী তরুণীরা জানান, তাদের উভয়ের বাড়ি শহরতলীর পীরেরবাজারে। শাহনাজ নামের এক প্রতিবেশি নারী তাদেরকে গার্মেন্টসে কাজ দেওয়ার কথা বলে ৭ এপ্রিল তাদেরকে কক্সবাজারে পাঠান। ডলফিন মোড় থেকে তাদেরকে রিসিভ করেন ওই নারীর ছেলে ইমন। সে তাদেরকে তার বাসায় নিয়ে যায়। পরদিন গার্মেন্টসে নেয়ার নাম করে কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে ইমন তাদেরকে সেখানে রেখে চলে আসে। পরে তাদেরকে হোটেলে আটকে রেখে ১৪ দিন জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করা হয়।
এদিকে, মেয়েদের খোঁজ না পেয়ে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ৯ এপ্রিল শাহপরাণ থানায় জিডি করেন। পুলিশ উদ্ধার তৎপরতা শুরু করলে ওই দুই তরুণীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুক্তি পেয়ে তারা গত বৃহস্পতিবার সিলেট ফিরে আসেন। পরে তাদেরকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অপরহণকারী চক্রের ব্যাপারে পুলিশ সর্তক রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার এএসপি মো. সম্রাট। তিনি বলেন, ‘পরপর দুটি অপহরণের ঘটনা অবশ্যই উদ্বেগের। এই চক্রে সিলেটের কারা জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ নিজাম উদ্দিন, নির্বাহী সম্পাদক : আইয়ুব আলী অফিস ; খান কমপ্লেক্স, সোনারপাড়া, শিবগঞ্জ, সিলেট। যোগাযোগ : প্রকাশক ও সম্পাদক : ০১৭৩৭-৩০৪৭৫১। ই-মেইল : sylhetbuletin@gmail.com
All rights reserved © 2025 sylhet buletin