শিরোনাম
চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন সিলেটে ভাই হয়ে বোনের কাছে বিশ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি, শংকিত প্রবাসী পরিবার ! পীরগঞ্জে স্কুল শিক্ষকের রাজস্বীক বিদায় ছাতকে ভারতীয় চিনি সহ এক চোরাকারবারি গ্রেফতার  মধ্যনগর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক”অমল”গ্রেফতার শাল্লায় বজ্রপাতে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে  গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি সীমান্তে এস আই রাকিবের তত্বাবধানে বেপরোয়া চোরাচালান বানিজ্য একাধিক মামলার আসামি শুটার হান্নান কারাগারে সিলেটে পরিবেশগত কারণে কোয়ারির ইজারা স্থগিত দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার  সীমান্ত এলাকা থেকে ১১টি ভারতীয় গরু আটক
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫০ অপরাহ্ন

সাভারে চিকিৎসকের পরিবর্তে ওয়ার্ড বয়ের চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার / ৩৫ Time View
Update : শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫

সিলেট বুলেটিন ডেস্ক:

ঢাকার সাভারে দালাল চক্রের মাধ্যমে ভর্তি হয়ে একটি প্রাইভেট হাসপাতালের অবহেলায় চিকিৎসকের পরিবর্তে অদক্ষ ওয়ার্ড বয় ও নার্সের ভুল চিকিৎসায় হাফিজুর রহমান (২৪) নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিচারের দাবি জানিয়েছেন রোগীর আত্মীয়-স্বজন ও সাভারবাসী।

 

নিহত হাফিজুর রহমান আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় চাকুরী করেন। তিনি মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার গোপালপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মোতালেবের ছেলে।

 

জানা যায়, শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাত ৯ টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আশুলিয়া গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে প্রথমে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। বাম হাত ভেঙে যাওয়ায় এবং সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) রেফার্ড করেন। গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর দূর সম্পর্কের আত্মীয় পরিচয়দানকারী আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার সুজন নামে এক দালাল চক্রের সদস্য ও তার সহযোগীরা মিলে জোরপূর্বক সেখান থেকে নিটোরে না পাঠিয়ে সাভারের সিটি ল্যাব হাসপাতালে কৌশলে ভর্তি করান। ওই হাসপাতাল থেকে জানানো হয় দ্রুত বাম হাতের অস্ত্রোপচার করাতে হবে, অস্ত্রোপচার বাবত ৬০ হাজার টাকা ধরা হয়, সে হিসেবেই টেস্ট রিপোর্ট বাবদ ৬ হাজার টাকা দিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন হাফিজুর রহমান।

 

শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাত ১১ টায় কোন ধরনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই সিটি ল্যাব হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার ইনচার্জ রিপন (২৮), ওয়ার্ড বয় জেলিন (২৩) ও অদক্ষ নার্স সেবিকা সরকার চিকিৎসা শুরু করেন। এসময় রোগীর অপারেশনের পূর্বেই একটি স্যালাইন, ৪ টি ব্যথানাশক ইনজেকশন ও অপারেশন ছাড়াই হাতে প্লাস্টার করে বিছানায় দেওয়া হয়। এর আধা ঘন্টা পর প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয় রোগীর। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে রোগীর কোন সমস্যা হবে না বলে জানায় তারা। এরপর কিছুক্ষণ ছটফট করে মারা যান হাফিজুর রহমান। তবে রোগী জীবিত আছে এই মর্মে তড়িঘড়ি করে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতেই ক্ষোভে ফেটে ওঠেন স্বজনরা। ভুল চিকিৎসায় হাফিজুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে জড়িতদের বিচারের দাবি জানান তারা।

 

মৃত হাফিজুর রহমানের স্ত্রী মালা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামীকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে মেরে ফেলেছে, মৃত্যুর পর রুমের লাইট বন্ধ করে আমাদেরকে বের করে দিয়েছে। ব্যথার ইনজেকশন দেওয়ার পর কয়েকবার বলেছি, আমার স্বামীর ব্যথা হচ্ছে, কিন্তু তারা কোনও কর্ণপাতই করেনি। আমার স্বামী মারা যাবার পর হাসপাতাল থেকে ডাক্তার পরিচয় দেওয়া রিপনসহ তার সহযোগীরা পালিয়ে গেছে। এই ঘটনার বিচার চাই।’

 

সিটি ল্যাব হাসপাতালের অভিযুক্ত নার্স সেবিকা সরকার জানান, আমাদের সেলস অফিসার সুজনের মাধ্যমে হাফিজুর রহমান ভর্তি হন। তার হাতে অপারেশন হওয়ার কথা ছিল, এর আগেই প্রয়োজনীয় ইনজেকশন দেওয়ার পরপর তিনি মারা গেছেন।

 

কোন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তিনি ভর্তি হয়েছেন এবং অপারেশন হওয়ার কথা ছিল এমন প্রশ্নে ওই নার্স প্রথমে তথ্য গোপন করেন পরে তিনি জানান, রাতে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিল না, আমাদের ওটি ইনচার্জ রিপন ডাক্তারি কায়দায় চিকিৎসা শুরু করেছেন এবং আমি ও ওয়ার্ড বয় জেলিন তার পরামর্শ মত স্যালাইন ও ব্যথার ইনজেকশন পুশ করেছি। এক পর্যায়ে বেশি ব্যথা শুরু হলে আমরা তাকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেই। চিকিৎসার অবহেলায় হাফিজুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

 

নার্স সেবিকা সরকার আক্ষেপ করে বলেন, পরিস্থিতি খারাপ দেখে আমাকে ও হাসপাতালের আয়া বাদে সবাই পালিয়েছে।

 

এ সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলে বীথি (২৭) নামে এক নারী অভিযোগ করে বলেন, গত ৮ দিন আগে আমার স্বামী সিটি ল্যাব হাসপাতালে আমাকে ভর্তি করান, আমার স্বামী গাড়ির ড্রাইভার, বর্তমানে ট্রিপে আছে। ৪ দিন আগে আমাকে জানানো হয় ৩২ হাজার টাকা বিল হয়েছে। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আমার কাছে টাকা নেই আমার স্বামী আসলে দিব জানালে তারা আমার চিকিৎসা বন্ধ করে হাসপাতালের বেড থেকে ওই হাসপাতালের পরিত্যক্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি রুমে আমাকে আটকে রাখেন। পরবর্তীতে পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

 

এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোতাছিম বিল্লাহ জানান, লাশ উদ্ধার করে প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে, পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে সেবিকা সরকারকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

 

এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা জানান, প্রাইভেট হাসপাতালে এক রোগী মারা গেছে খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। নিহতের পরিবার থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার সিটি ল্যাব হাসপাতালের অভিযুক্ত চিকিৎসক পরিচয়দাতা ওটি ইনচার্জ ও ওয়ার্ড বয় জেলিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়ন।

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ