নিজস্ব প্রতিবেদক:
পোস্ট মাস্টারের চাকুরী হারান, স্থানীয় এমপি ইমরান আহমেদের আশীর্বাদে হয়ে যান চেয়ারম্যান,হয়ে যান কোটিপতি
ছিলেন সামান্য পোস্ট মাস্টার (বিপি এম)। গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল বাজারের পোস্ট মাস্টারের চাকুরী করতেন, সেখান থেকে দূর্নীতির দায়ে চাকুরী হারান তিনি। পরিবারের পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় নির্বাচনে হয়ে যান চেয়ারম্যান। খোলে যায় ভাগ্যের চাকা, সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাত করে রাতা-রাতি হয়ে যান কোটিপতি। যোগদেন স্থানীয় রাজনীতিতে টাকার জোরে পেয়ে যান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ।
প্রথমবার আওয়ামীলীগের পরিচয়ে স্থানীয় এমপি ইমরান আহমেদের আশীর্বাদে পোষ্ট হওয়ায় উন্নয়নের আশায় মানুষ থাকে ভোট দেয়। সেই নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ৩৪ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন তিনি । তার পুর্ণ মেয়াদে জনগন দুর্বিশহ হয়ে উঠে। নির্বাচনে অংশগ্রহন করেও পরাজিত হন প্রতিদ্বদ্ধী প্রার্থীর সাথে। ৩য় মেয়াদে চেয়ারম্যান হবার পর আওয়ামী পেশীশক্তির জোরে বিদ্রোহী আওযামীলীগ প্রার্থী সামসুদ্দীন আহমদকে দল থেকে বহিষ্কার করান। স্হানীয় সাংসদ ইমরান আহমেদ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা নাসির উদ্দিন থাঁনকে ও গোলাপ মিয়াকে ম্যানেজ করে ভোট কেন্দ্র দখল করে তৃতীয়বার নির্বাচিত হন। এবার আর বসে থাকেন নি লোকমান। নিজের আখের গোছাতে নেমে পড়েন। রাতা রাতি কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক হয়ে যান। পৈত্রিক জুপড়ি ঘরকে ভেঙ্গে গড়ে তুলেন বহুতল ভবন ।
দলীয় প্রভাবে এলাকায় প্রভাব বিস্তার শুরুকরেন ভারতীয় চোরাচালান ও লুটপাটে। আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে এলাকার লোকজন বিভিন্ন কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলার ৮নং তোয়াকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লোকমান কথা। বেশ-ভ‚ষায় দেখতে দরবেশের মতো হলেও এহেন কোনো অপরাধমূলক নেই যাহা লোকমান চেয়ারম্যান করতে পারেন না বা করেননি। বিগত নির্বাচনে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ ব্যবহার করে নৌকার প্রতীক নিয়ে কেন্দ্র দখল করে দ্বিতীয় বারের মতো চেয়ারম্যান হন লোকমান।
এমপির সাথে ছিল তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বিশেষ করে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা নাসির উদ্দিন খানের সাঁথে সখ্যতা থাকায় কেউ মুখ খুলতেন না । বিশেষ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাপ মিযার সান্নিদ্ধে এসে বনে যান টাকার কুমির। আত্মীয় সজনদের সম্পত্তি আত্বস্বাত করে ভোগ দখলে নিচ্ছেন বলে জানা যায।
সূত্র আরও জানায়, গ্রাম্য শালিশে হতো। ধর্ষন মামলা, বিচ্ছেদ মামলার অভিযুক্তদের আইনের কাছে সোপর্দ না করে শালিশে ঘুষ লেনদেন করে বিচার শেষ করে দিতেন চেয়ারম্যান লোকমান । দলীয় প্রভাবের কারণে পুলিশ চলত তার হুকুমে ।
৫ই আগস্টের আগ পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন সমীহ করে চলতে হত। সেই সুযোগে এলাকার চোরচালান লাইনের স্ব-ঘোষিত গডফাদার হয়ে উঠেন লোকমান। নিজের চোরাচালান ব্যবসার প্রসার ঘটাতে স্থানীয় তোয়াকুল বাজারের গরুর হাট জবর দখল করে নিয়ে আজ অবদি
নির্বিঘ্নে ভারতীয় চোরাই গরুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারত থেকে চোরাই গরু তোয়াকুল বাজারে প্রবেশ করা মাত্র বৈধতা পেয়ে যায় দেশীয় খামারী গরু হিসাবে।
বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সকল দোসর দেশ ছেড়ে পালালেও তিনি রয়েছেন বহাল। বিগত দিনে যারা নৌকা প্রতীক নিয়ে জোরপুর্বক কেন্দ্র দখল করে জনপ্রতিনিধি হয়েছিলেন তাদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এবং অনেকেই হারিয়েছেন চেয়ারম্যানের সিংহাসন। কিন্তু এতোকিছুর পরও চেয়ারম্যান লোকমান স্ব-পদে বহাল থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা তসরূপ করে যাচ্ছেন। তার বিরোদ্ধে কথা বলার সাহস নেই স্থানীয় লোকজনের। এই লোকমানদের নেতৃত্বেই গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবলীগের সদস্য তাজ উদ্দিন সহ স্থানীয় সন্ত্রাসীরা ছাত্র-জনতার উপর হামলা করে। এদের অনেকেই ছাত্র-জনতার মামলায় এখন পলাতক রয়েছে। কিন্তু লোকমান চেয়ারম্যান কি করে এখনো নিজের ক্ষমতা ধরে রেখেছেন তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।