সিলেট বুলেটিন ডেস্ক:
সিলেট সীমান্তে বেড়েছে হত্যা। ভারতীয় খাসিয়াদের হাতে প্রায় প্রতিমাসেই একাধিক বাংলাদেশি নাগরিক প্রাণ হারাচ্ছেন। বেশিরভাগ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে ভারত সীমান্তের ভেতরে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চোরকারবারের বিরোধ নিয়েই ঘটছে এসব হত্যাকান্ড। দু’দেশের চোরকারবারী সিন্ডিকেটের মধ্যে গ্রুপিং ও লেনদেন সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব নিয়েই ঘটছে এসব মর্মান্তিক ঘটনা
ভারতের ভেতরে হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ায় এসব ঘটনায় বাংলাদেশে কোন মামলাও হয় না। অনাকাঙ্খিত এসব ঘটনা বন্ধে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো ও চোরাচালান বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
সীমান্ত সূত্র জানায়, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাটের চোরাকারবারীরা সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়াদের নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা ভারত থেকে গরু, মহিষ, শাড়ী, থান কাপড়, কসমেটিক্স, গরম মসলা, চিনি, কমলা, আপেল ও সুপারিসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য ও পশু নিয়ে আসে। আর বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয় শিং মাছ ও রসুন।
অবৈধ এই কারাবারের লেনদেন হয়ে থাকে হুন্ডির মাধ্যমে। অনেক সময় লেনদেন নিয়ে দুই দেশের সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। টাকা দিয়ে পণ্য না দেওয়া, কিংবা পণ্য এনে মূল্য পরিশোধ না করা নিয়ে দুই দেশের চোরাকারবারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এছাড়া এক গ্রুপের পাওনা টাকা না দিয়ে অন্য গ্রুপের কাছ থেকে পণ্য আনা নিয়েও দেখা দেয় বিরোধ। এসব বিরোধের জের ধরে ঘটে হত্যাকান্ড।
সূত্র আরও জানায়, যখন দুই দেশের চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয় তখন বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারীদের আটক করে ভারতীয় খাসিয়ারা। কখনো মারধর করে আবার কখনো গুলি করে হত্যা করে তাদেরকে। আর বাংলাদেশিরা কৌশলে ভারতীয় চোরাকারবারীদের ডেকে এনে আটক করে মুক্তিপণ আদায় করে। এছাড়া চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করেও খাসিয়াদের হাতে প্রাণ হারাণ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিরা।
সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারত গিয়ে সর্বশেষ গত ৬ মার্চ প্রাণ হারান কানাইঘাট উপজেলার মঙ্গলপুর গ্রামের মশাহিদ আলীর ছেলে শাহেদ মিয়া। ভারত থেকে চিনি আনতে গিয়ে খাসিয়াদের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। সিলেট জেলা ছাড়াও বিভাগের অন্য তিন জেলার সীমান্তেও ঘটছে প্রাণহানীর ঘটনা।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ সীমান্তের বাউসারী এলাকা থেকে রাজিব সরকার নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়দের দাবি, চোরাচালানের দ্বন্দ্বের জেরে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন রাজিব। ২৬ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে ভারতীয় নাগরিকরা কুপিয়ে খুন করে দশটিকি ইউনিয়নের নয়াবস্তি গ্রামের আহাদ মিয়াকে।
৮ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মাছিমপুর সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হন গামারিতলা গ্রামের সাইদুল ইসলাম। চিনি আনতে গিয়ে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হন তিনি। ৬ জানুয়ারি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বড় কেয়ারা সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় নাগরিকরা পিটিয়ে হত্যা করে পশ্চিম ডুলনা গ্রামের জহুর আলীকে।
সূত্র জানায়, ২০২৪ সালে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন সীমান্তে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৮ বাংলাদেশি। কিন্তু চলতি বছরের প্রায় আড়াই মাসে বিএসএফ ও ভারতীয় খাসিয়াদের হাতে মারা গেছেন ৫ জন।
বিজিবি ৪৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. নাজমুল হক জানান, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর কিছু লোক পেশা হিসেবে চোরাচালান বেছে নিয়েছে। জনসচেতনতার পাশাপাশি অভিযান চালিয়েও তাদেরকে এই পথ থেকে ফেরানো যাচ্ছে না। চোরাকারবারীরা অবৈধভাবে ভারত গিয়ে অনেক সময় খাসিয়াদের সাথে দ্বন্দ্ব জড়ায়। তখন খাসিয়াদের হাতে প্রাণ হারাতে হচ্ছে তাদেরকে
সিলেট সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে ভারতে যেসব লোক প্রাণ হারিয়েছেন তাদের প্রায় সকলই চোরাচালানের সাথে জড়িত। চোরাচালানের লেনদেন ও চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এসব ঘটনা ঘটছে। জনসচেতনতা ছাড়া শুধু অভিযান করে চোরাচালান বন্ধ সম্ভব নয়। এজন্য সামাজিক প্রতিরোধও প্রয়োজন।