শিরোনাম
সংসদ নির্বাচন ঘিরে সিলেট-৪ আসনে প্রার্থীদের প্রচানায় সরগম স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে সিলেটে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কৃষক কৃষণী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত ঝিনাইগাতী সীমান্তে ভারতীয় জিরাসহ ইয়াসিন আনোয়ার নামে চোরাচালানকারী আটক   বাঘাইছড়িতে পৌর ২নং ওয়ার্ড বিএনপির ইফতার ও দোয়া মাহফিল সম্পন্ন  তাহিরপুরে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উদযাপন  কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামে প্রবাসীদের গাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার ৪ কুমিল্লায় ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ভারতীয় অবৈধ কিং কোবরা বাজি আটক কিছু কথা বললেন জেলা বিএনপি যুগ্ম-আহবায়কম নিরুজ্জামান দুদু,  অসহায় পরিবারের বাড়িতে হাট বাজার নিয়ে বারহাট্টায় ইউএনও হাজির
বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন

ধর্ষণের ঘটনায় সারাদেশের মানুষ স্তম্ভিত! 

স্টাফ রিপোর্টার / ১১ Time View
Update : সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

 

সাম্প্রতিককালে সারাদেশে ধর্ষণ যেন অপ্রতিরোধ্য অপরাধ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য মতে,গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের আনাচে-কানাচে প্রতিনিয়ত নানা বয়সের শিশুসহ নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। পাশবিক কায়দায় একের পর এক ঘটে যাওয়া ধর্ষণ; যার ভিকটিম বেশিরভাগই শিশু।

কঠোর আইন, নারী অধিকার সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন , নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ, গণমাধ্যমের সংবাদ প্রচার এবং লেখালেখির পরও কোনো কিছুতেই ধর্ষণকারীদের দৌরাত্ম্য কমছে না।

এই মুহূর্তে সারা দেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ , মিছিল ,সভা, সমাবেশ চলছে।এর মধ্যে মাগুরায় আছিয়া নামে ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনাটি ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় সারাদেশের সকল স্তরের মানুষ স্তম্ভিত, বাকরুদ্ধ ও শঙ্কিত। সিলেট বুলেটিনসহ দেশের সকল গণমাধ্যমে ধর্ষণের এই লোমহর্ষক ঘটনাটি সবিস্তারে এসেছে।

বোনের শ্বশুরবাড়িতে ধর্ষণের শিকার শিশুটি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। গত ৩ দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। শনিবার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় তোলপাড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও।

নারীর প্রতি সহিংসতা ও বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও সোচ্চার। সিলেটের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।

বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার পরিসংখ্যান বরাবরই উদ্বেগজনক। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির তথ্য অনুসারে, ২০২০-২৪ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে, বাংলাদেশে কমপক্ষে ১১ হাজার ৭৫৮ জন নারী ও মেয়েশিশু নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৬ হাজার ৩০৫ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

 

আরও আশঙ্কার বিষয়, যাদের ধর্ষণ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৭১ জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে, যা মোট ঘটনার ৫৫ শতাংশেরও বেশি। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৯ জন নারী ও কন্যাশিশুকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে এবং ২০৭ জনকে যৌন সহিংসতার পর হত্যা করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ১১৮ জনই শিশু। এ ছাড়া অন্তত ৫০ জন ভয়াবহ সহিংসতার ট্রমা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন।

 

সংস্থাটি বলছে, নারীর প্রতি সহিংসতার পরিধি কেবল ধর্ষণ নয়, এর বাইরেও বিস্তৃত। এইচআরএসএসের সাম্প্রতিক সময়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের প্রথম দুই মাসের পরিসংখ্যান আতঙ্কিত হওয়ার মতো। এই সময়ে অন্তত ২২৪ জন নারী ও কন্যাশিশু সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ১০৭ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬৬ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। ২৭ জন নারী ও শিশুকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে এবং ২৯ জন যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ১৬ জনই শিশু।

 

এদিকে,যৌতুক-সম্পর্কিত সহিংসতার কারণে মারা গেছেন ছয় জন নারী, আহত হয়েছেন দুই জন। পারিবারিক সহিংসতায় ৫৮ জন নারী প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০ জন আত্মহত্যা করেছেন। অ্যাসিড হামলায় মৃত্যু হয়েছে একজনের।

 

সাম্প্রতিককালের এসব ঘটনায় সমাজকর্মী খুশী কবির বলেছেন, ‘আমরা একটি গভীর সংকটের মুখোমুখি হয়েছি। মূল সমস্যা হলো, আমাদের দেশের দুর্বল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই এবং প্রায়ই দেখা যায় একশ্রেণির মানুষ অপরাধীদের সমর্থন করে। এটি সামগ্রিকভাবে সমাজের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করছে।’

 

ধর্ষণ, নারী-শিশু নির্যাতনসহ সব ধরনের অপরাধ দমন সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। এই ক্ষেত্রে সরকার ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। কোনভাবেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে না। তবে প্রত্যাশার কথা, হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ শিশু ধর্ষণ মামলাটি ১৮০ দিনে মধ্যে শেষ করার জন্য স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছেন।

 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও বলেছেন, ‘সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। নারীরা যেন নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে চলাফেরা ও দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা হবে।’ সরকারের অন্য উপদেষ্টা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে কঠোরতার কথা বলেছেন। এ কথা সত্য যে, অপরাধীদের শাস্তি কালেভদ্রে হয়ে থাকে। তবে তার কোনো ইতিবাচক প্রভাব ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন প্রবণতা হ্রাসের ক্ষেত্রে পড়ে না। এখন দেখার বিষয় উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি কাজের মাধ্যমেই প্রমাণ হয় কি না।

 

পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, ধর্ষণের ব্যাপারটা এখন দুর্বৃত্তের কাছে ডালভাত। প্রয়োগহীন আইনই যেন তাদের বেপরোয়া করছে। ন্যায়বিচারের অভাবেই অপরাধীরা সাহস পায়। অনেক সময় দেখা যায়, দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থা যখন শিথিল থাকে, তখনই ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধের বিস্তার ঘটে। অনেক সময় আইনের ফাঁকফোকর গলে অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার আড়ালে থাকে।

 

 

এছাড়া মানুষে-মানুষে সম্পর্ক কেমন যেন শিথিল হয়ে যাচ্ছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে সামাজিক বন্ধন। খুব কাছের কারও জীবনে ট্র্যাজিক কিছু না ঘটলে কেউ যেন তা অনুভব করে না। সামাজিক ঐক্য ও পারিবারিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় করা দরকার। সমাজের সুরক্ষায় এই বন্ধন নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। আমরা মনে করি, ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে, এসব ঘটনা বারবার ঘটবে। ধর্ষণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হোক, এটা গণমানুষের দাবি।

#সুনির্মল সেন, প্রধান সম্পাদক: অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘সিলেট বুলেটিন ডটকম’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ