নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিলেটের হিলুয়াছড়া চা বাগানে নারী দিবসের অনুষ্ঠান এসেছেন প্রায় দেড় শতাধিক নারী চা শ্রমিক। এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন কেওয়াছড়া চা বাগানের নারী পঞ্চায়েত সদস্য জোনাকি দাস ও দলদলি চা বাগানের শ্রমিক সবিতা রায়। এই চা শ্রমিকরা কেউই জানেন না নারী দিবস কি।অনুষ্ঠানে আগত প্রায় প্রতিটি চা শ্রমিক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন অনুষ্ঠানের অন্যান্য অতিথিদের দিকে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জোনাকি দাস ও সবিতা রায় বললেন, নারী দিবস কি এটাই আমরা জানি না। আজকেই প্রথম জানলাম নারী দিবসের কথা। আমরাতো জানি নারীরা ঘরে কাজ করবে, বাগানে কাজ করবে। অসুখ বিসুখ, ঝড় তুফান যাই আসুক নারীদের কাজ করতেই হয়। নারীদের কষ্ট কেউ বুঝে না।
তাদের কথার সাথে তাল মিলিয়ে অনুষ্ঠানের আরেক বিশেষ অতিথি হিলুয়াছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটি সভাপতি মদন গঞ্জু বলেন, ২০২৫ সালে এসে জানতে পারলাম নারী দিবস বলে কিছু আছে। আমরা বাগানের মানুষ তাই এসব বুঝি না। আপনার মাঝে মাঝে এমন অনুষ্ঠান করলে জানতে পারবো ও আমাদের মা বোনদের সম্মান করতে পারবো।
শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে সিলেট অঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক তথা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (একডো) আয়োজনে নারী দিবসের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন চা শ্রমিকরা।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশের যৌথ সহযোগিতায় হিলুয়াছড়া চা বাগান এই প্রথম বারের মত একডো নারী দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে শোভাযাত্রা শেষে হিলুয়াছড়া চা বাগান মাণ্ডপ প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
একডো’র নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড.তাহমিনা ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ৬ নং ইউপি সদস্য দিলীপ রঞ্জন কুর্মী, নাট্যকার ও নাট্য নির্দেশক হুমায়ুন কবির জুয়েল, সিলেট উইমেনস জার্নালিস্ট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাকিলা ববি, হিলুয়াছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটি সভাপতি মদন গঞ্জু, হিলুয়াছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সজল বুর্নাজি, কেওয়া ছড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত সদস্য জোনাকি দাস ও দলদলি চা-বাগানের শ্রমিক সবিতা রায়।
আলোচনা সভায় হিলুয়াছড়া চা বাগানের শ্রমিক সপন্তি বাড়াইক ও দলদলি চা বাগানের শ্রমিক যমুনা দাস নিজেদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, দুই তিন মাসের বাচ্চা নিয়ে নারী চা-শ্রমিকরা বাগানে কাজ করে। খাবার পানির ব্যবস্থা নাই, শৌচাগারের ব্যবস্থা নাই। ঠিকমত মুজরি পাই না আমরা। তারপরও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা হাজারো অভিযোগ করলেও কেউ শুনে না। তাই নারী দিবসে চা শ্রমিক নারীদের কষ্টের কথা আপনার একটু বিবেচনা করেন।
হিলুয়াছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সজল বুর্নাজি বলেন, নারী দিবস কি জানি না আমরা। তবে আমাদের মা বোনদের জন্য আজকের আয়োজন খুব ভাল লাগছে। তারা অনেক কষ্ট করে। বছরে একটি দিন হলেও যেন আমরা আমাদের মা বোনদের সম্মান দিতে পারি।
প্রধান অতিথি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড.তাহমিনা ইসলাম বলেন, নারীদের আত্মত্যাগ আছে এই দিবসের পিছনে। নারীদের জাগিয়ে দিতেই আজকের এই দিন। ইতিহাস তখনই বদলেছে যখনই নারীর উদ্যোগী হয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু চা শ্রমিক নারীদের সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি। তাই চা শ্রমিক নারীদের নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে। নিজের উপর ঘটে যাওয়া নির্যাতন রোধে প্রতিবাদ করতে হবে।
প্রধান অতিথির সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে ‘আমি নারী আমি অনন্য । আমি আমার এই অন্যান্যতাকে শতধারায় বিকশিত করবো’ এই লাইনগুলো একসাথে বলে শেষ হয় অনুষ্ঠান।