অপরাধ প্রতিবেদকঃ
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ২নং পশ্চিম জাফলং ইউপির হাজীপুর প্রতাপপুর বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা দিয়ে দেদারসে আসছে ভারতীয় চোরাই পণ্য।আর এই চোরাচালানের নেপথ্যে কাজ করছেন থানার এসআই উৎসব ও এসআই তরিকুল।
জানা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার ১১নং মধ্য জাফলং ইউপি’র রাধানগর বাজার হয়ে রাধানগর টু গোয়াইনঘাট রাস্তা দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে এই সব চোরাচালানের পণ্য সামগ্রী।।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় , সীমান্ত থেকে দেশের ভিতর চোরাচালান পণ্য ঢুকলেও এমন ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের ভুমিকা রহস্যজনক!
ভারত সীমান্তের প্রতিটি ইউনিয়নের বিট অফিসারদের সাথে রয়েছে চোরাকারবারিদের সু-সম্পর্ক ।এসব বিট অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিস্তর।যার কারনে রাতের আঁধারে সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে আসা অবৈধ পণ্য ডি আই পিকাপ কাবারভেন গাড়ি দিয়ে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন স্থানে।
প্রায়-প্রতি দিন সন্ধ্যা হলেই ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালানীদের অবাধ বিচরন সবার চোখে দৃশ্যমান হয়।
স্থানীয় নাগরিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সীমান্তে এলাকার গ্রামের মেঠোপথ গুলো চোরাচালানকারীরা নিরাপদ রোড় হিসাবে ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
এসব চোরাচালানী চক্র এলাকায় প্রভাবশালী এবং বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়াতে স্থানীয় এলাকার লোকজন ভয়ে তাদেরকে কিছু বলতে সাহস পায়না।
গত ৫ আগষ্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের জেরে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে কিছুদিন বন্ধ ছিল সীমান্তের চোরাচালান।
ইদানিং কিছুদিন থেকে আবারও চোরাচালান তৎপরতা শুরু হয়েছে। চলছে নতুন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লাইনম্যান সিন্ডিকেট নিয়োগের তৎপরতা।
মাঝেমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে চিনি ভর্তি গাড়ী, ভারতীয় গরুসহ ডি-আই, পিক-আপ গাড়ী আটকের সংবাদ পাওয়া যায়।কিন্তু আটককৃত গরুর ক্রয়কৃত রশিদ নিয়ে থানায় গেলেও বৈধতা পায় না রশিদটি, ক্রেতা ইজারদার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের দায়সারা উত্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সীমান্তে এলাকা ভিত্তিক একাধিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন করে নিয়োগ দেওয়া হয় লাইনম্যান, হাজিপুর প্রতাপপুর বিট অফিসার এস আই তরিকুল ইসলামকে, মধ্য জাফলং রাধানগর পুলিশ চেকপোষ্টের দায়িত্বে এস আই উৎসব, তাদের লাইনম্যান হচ্ছে কামাল, যুবদল নেতা কামরুল, যুবদল নেতা জসিম, যুবদল নেতা খাইরুল।
এই সব লাইনম্যানরা এক /একটি করে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। সেই সিন্ডিকেটের কোনো সদস্য বিজিবির গতিবিধি বা অবস্থান লক্ষ্য করে থাকেন। এমন কাজে তৎপর রয়েছেন চোরাচালানী চক্রের একটি অংশ ।
বিজিবি এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় টহলে গেলেই তারা সীমান্তে গিয়ে মাদক,ভারতীয় গরু,মহিষ, চিনি, কসমিটিকস, কিটসহ বিভিন্ন আমদানী নিষিদ্ধ পন্য নিয়ে আসে। মাজে মধ্যে সেই গরু,চিনি সহ অন্যান্য পন্য আনতে গিয়ে ভারতীয় খাসিয়াদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে একের পর এক বাংলাদেশি নাগরিক।বিনিময়ে মাদক ও গরু ব্যবসায়ীদের ওই সিন্ডিকেটকে গরু প্রতি কমিশন দিতে হয়।বিজিবি, ডিবি পুলিশ, থানা পুলিশের, নাম ভাঙ্গিয়ে সেই টাকা তুলে থাকেন কথিত লাইনম্যান কামাল, কামরুল, জসিম,খাইরুল গরু,মহিষ,চিনি,পিয়াজ,অস্ত্র, মাদক, বিভিন্ন ব্রান্ডের মোটরসাইকেল।
চোরাই পথে আসা এসকল পণ্যের সরকারি কোন বৈধতা না থাকলেও মধ্য জাফলংয়ের রাধানগর পুলিশ চেকপোস্টের স্থানীয় থানা পুলিশের এস আই উৎসব ও হাজীপুর, প্রতাবপুর এলাকার বিট অফিসার এস আই তরিকুল নিজেদের ফোর্স ও স্থানীয় লাইনম্যান নিয়োগ দিয়ে চোরাইপথে আসা ভারতীয় পণ্যের উপর দৈনিক লাখ লাখ টাকার চাঁদা আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা ব্যক্তিদেরকে আব্দুল্লাহ, কামরুল, জসিম, খাইরুল তারা সকলের পরিচয় পুলিশ কিংবা বিজিবির লাইনম্যান হিসাবে।
প্রতিমাসে চোরাচালানের এই লাইনম্যান আবার রদবদল করে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি, সার্কেল এসপি, বিট অফিসার, জেলা উত্তর ডিবির নিয়োগপ্রাপ্ত ওসি ও বিজিবির বিভিন্ন ক্যাম্প কামান্ডাররা। যার ফলে রেঞ্জ ডিআইজি, বা জেলার এসপি কোন নির্দেশ বা আদেশ কার্যকর হচ্ছেনা গোয়াইনঘাট থানা এলাকায়।
এদিকে,সিলেট রেঞ্জে ডিআইজি মাসিক অপরাধ পর্যালোচনায় সভায় এসব সীমান্তের চোরাচালান বন্ধ করতে জেলার এসপিদের কঠিন নির্দেশনা দিয়ে ছিলেন।কিন্তু কোন নির্দেশনাই আমলে নেননি গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ ও এবং বিট অফিসার এস আই উৎসব , এস তরিকুল।
তবে তাদের চোরাচালান বন্ধের বদলে পাল্টেছে চোরাচালান সচল রাখারা নিত্য নতুন কৌশল। পূর্বে প্রতি মাসে সীমান্তের ঘাট অলিখিত ইজারা দেওয়া হতো মাসিক লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে।কিন্তু এখন চলছে কমিশনের খেলা।
সরেজমিন গোয়াইনঘাট এলাকায় অনুসন্ধানে গেলে , নতুন করে উঠে আসে চোরাচালান ও চোরাকারবারীদের নতুন নিয়ন্ত্রকদের নাম।এদের বেশীর ভাগই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির পরিচয়দানকারী রাজনৈতিক লেবাসধারী সুবিধাভোগী।আগে এসব চোরাচালানের লাইন নিয়ন্ত্রণ করতো স্থানীয় আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ও শ্রমিকলীগের নেতারা।
গত ৫ আগষ্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের জেরে সষ শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরে এসব লাইন বর্তমানে নিয়ন্ত্রন করছেন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, ও শ্রমিকদলের নাম ব্যাবহারকারী কতিপয় কিছু লেবাসধারী পাতি নেতা।
সীমান্তের দায়িত্বে থাকা বিজিবির সামন দিয়ে এসব চোরাচালানের পন্য দেশে প্রবেশ করলেও টাকার কাছে সকলেই ম্যানেজ হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন।
এসব বিষয়ে জানতে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।এ ব্যপারে জানতে বিট অফিসার এস আই উৎসব এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে পাওয়া যায়নি। এ ব্যপারে এস আই তরিকুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব বিষয়ে অস্বীকার করেন।
গোয়াইনঘাট সীমান্ত চোরাচালান বন্ধে আশু পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।