নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল ইউনিয়নের পাইকরাজ গ্রামের বাসিন্দা বিলাল উদ্দিন মেম্বার ওরফে মেকানিক বিলাল ও তার চাচা রুহুল আমিন ওরফে বোরকা রুহুলের রাজত্বে অতিষ্ঠ তোয়াকুল এলাকার বাসিন্দারা ।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আওয়ামী-যুবলীগের দাপট খাটিয়ে অবৈধ সকল ধরনের ভারতীয় পণ্যের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে গেছেন রুহুল আমিন ওরফে বোরকা রুহুল ।
৫ই আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও থেমে নেই বিগত সরকারের দোসর রুহুল আমিনের কর্মকাণ্ড ।
বর্তমানে তারা খোলস পাল্টে বিএনপি’র লোক হিসেবে নিজেকে দাবি করে রুহুল আমিন স্থানীয় কিছু বিএনপি র পাতি নেতাদের ম্যানেজ করে বর্তমানে বিএনপির লোক হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন ।আর এই রুহুল আমিনের বদৌলতে তার ভাতিজা তোয়াকুল ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার বেলাল উদ্দিন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তোয়াকুল বাজার পশুর হাটের ইজারা আনেন ।
আর এরই ফলশ্রুতিতে চাচা-ভাতিজা মিলে দিচ্ছেন ভারতীয় অবৈধ গরুর বৈধতা ।বিলাল মেম্বার পেশায় একজন মোটর মেকানিক তিনি প্রথমে স্থানীয় বাজারে একটি মোটরসাইকেলের ওয়ার্কশপে কাজ করতেন, এলাকায় মোটর মেকানিক হিসেবেই তার পরিচিতি রয়েছে এলাকায় কারো মোটরসাইকেল পানির পাম্প ইত্যাদি নষ্ট হলে তা ঠিক করতেন বিলাল উদ্দিন।
তার চাচা রুহুল আমিন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দাপট দেখিয়ে যুবলীগের নেতা হিসাবে তোয়াকুল এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন আছেন।এরই জেরে টানা দুইবার বিলাল উদ্দিন তোয়াকুল ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন ।
ইউপি সদস্য নির্বাচিত হবার পর থেকেই আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি বিলাল উদ্দিন মেম্বারকে । রুহুলের মাধ্যমে নিজের নামে তোয়াকুল পশুর হাটের ইজারা এনে শুরু করেন অবৈধভাবে সরকারের শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা ভারতীয় গরু/ মহিষের ব্যবসা।
স্থানীয় সূত্র ও সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, বিলাল উদ্দিন মেম্বার ও তার চাচা রুহুল আমিন তোয়াকুল বাজার পশুরহাটের ইজারাকৃত রশিদ ছাঁপিয়ে তার মাধ্যমে অবৈধ ভারতীয় গরু মহিষের বৈধতা দিয়ে যাচ্ছেন । এখানে চাচা-ভাতিজা মিলে কায়েম করেছেন তাসের রাজত্ব ।
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন , রুহুল ও বিলাল মেম্বার এর কারণে ভারতীয় অবৈধ গরুর আগ্রাসনে তাদের নিজের বাড়ির দু’চারটে দেশীয় গরুও তারা তোয়াকুল বাজারে বিক্রি করতে পারছেন না ।কারণ তাদের পালিত গরুর দামের তুলনায় কম দামে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে অবৈধপথে আসা ভারতীয় গরু ।
সূত্র মতে জানা গেছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ইজারাকৃত তোয়াকুলবাজার পশুর হাটের রশিদ দিয়ে নিয়মমাফিক প্রতিটি গরু / মহিষ থেকে ৫০০/- টাকা দিয়ে সঠিকভাবে শুল্ক আদায় করছেন ঠিকই আবার এই রশিদ দেখিয়ে অলিখিতভাবে ভারতীয় প্রতিটি অবৈধ গরু মহিষ থেকে আদায় করছেন ১৫’শ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত ।
জানা গেছে, সম্প্রতি দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে বর্তমানে বন্ধ আছে গোয়াইনঘাট উপজেলার হাদারপারের পশুর হাট ।আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রম-রমা অবৈধ ভারতীয় গরু মহিষের চালান দেদারছে আসছে তোয়াকুল বাজার পশুর হাটে যেখানে আগে সপ্তাহে একদিন তোয়াকুল বাজার পশুর হাট বসতো, সেখানে বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার বসছে এই পশুর হাট ।
চোরা চালানের মাধ্যমে আনা গরু / মহিষের বিশাল বাণিজ্যের কারণে বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন পশুর হাটটি পরিচালনা করছেন বিলাল উদ্দিন মেম্বার ও তার চাচা রুহুল আমিন ।
বিগত কয়েকদিনের অনুসন্ধানে গরুর মালিকের কাছ থেকে জানা যায়, ইজারাকৃত রশিদের মাধ্যমে প্রতিটি গরু কিংবা মহিষ বাবত পাঁচশত টাকা লিখা থাকলেও অলিখিতভাবে পশুর ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতিটি গরু / মহিষ ছোট-বড় আকার ভেদে ১ হাজার থেকে ১৫’শ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে ।আর রাস্তায় পুলিশি ঝামেলায় পড়বেনা এই কথা বলে রুহুল আমিন পুলিশের নামে গাড়ি প্রতি ১৫’শ থেকে ২
হাজার টাকা পর্যন্ত রাখছেন ।যার একাধিক ভিডিও চিত্র সিলেট বুলেটিন নিউজ পোর্টালের কাছে সংরক্ষিত আছে ।
এ ব্যাপারে ফোনে জানতে চাইলে তোয়াকুল ইউনিয়নের পাইকরাজ গ্রামের বাসিন্দা ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার বিল্লাল উদ্দিনে
এ প্রতিবেদককে বলেন, ” আমি বাজারের ইজারা এনেছি গরু কোনটা ভারত থেকে আসলো আর কোনটা বাংলাদেশের সেটা দেখার দায়িত্ব আমার নয়।আমার বাজারে ভারতীয় আর দেশী দেখার সময় নেই, আমরা রশিদ দিয়ে গরু বিক্রি করি ।”
তার কাছে ভারতীয় গরুর কানে হলুদ রঙ্গের ট্যাগ ঝোলানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ” আপনি আমাকে বলে দেন যে ভারতীয় গরুর কানে ফুটো করে আমি কোন রঙের ট্যাগ ঝুলিয়ে দিলে আপনি খুশি হবেন ।আর এসব নিউজ করে কোন লাভ হবে না কারণ থানা পুলিশ আমাদের ম্যানেজ করা আছে ।”
এ ব্যাপারে জানতে বিলাল উদ্দিন মেম্বার এর চাচা রুহুল আমিনের সাথে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভারতীয় গরুর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন,
আপনি আমার ভাই এসব নিয়ে নিউজ করে কি করবেন ,আমার এলাকায় আপনার দাওয়াত রইলো একদিন আসবেন নতুবা আমি আপনাদের অফিসে এসে একসঙ্গে চা খাব ।আমি এখন একটি মিটিংয়ে আছি পরে আবার কথা বলবো।”
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার সালুটিকর তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন আপনারা একদিন আসেন ।পুলিশের নামে চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই আপনারা আসলে আমরা আপনাদের সাথে নিয়ে গরুর গাড়ি আটক করবো।
উক্ত বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ,”আমি নতুন এসেছি এজন্য বিষয়টি অবগত নই । আপনি যেহেতু বলছেন আমি খোঁজ নিয়ে অবশ্যই এর ব্যাবস্থা নেব ।”
উল্লেখ্য গত ২৮ শে জানুয়ারি মঙ্গলবার এসএমপির জালালাবাদ থানা পুলিশের অভিযানে তোয়াকুল বাজার থেকে আসা মিনি পিক আপ ভর্তি পাঁচটি ভারতীয় গরুসহ একজনকে বাদাঘাট থেকে আটক করে জালালাবাদ থানা পুলিশের একটি টিম ।