সিলেট বুলেটিন ডেস্ক:
ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ও দেশের বিভিন্ন জেলায় ৩দিন যাবত বিভিন্ন স্থাপনা ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও ভীতির সঞ্চার হয়েছে।উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দুই দিনে তিনটি বিবৃতি দিতে হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও জনগণকে শান্ত হওয়ার জন্য এবং সরকারকে কাজ করতে দিতে আহ্বান জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তবে ঘটনা পুরোপুরি থামানো যায়নি।এর পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কার্যালয়, দলটির কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ পরিবারের সদস্যদের অর্ধশত ম্যুরাল ভাঙা হয়। এসব ঘটনা ঘটেছে ৩৫টির বেশি জেলায়।এমন পরিস্থিতির জন্য শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যমূলক ও উসকানিমূলক বক্তব্যকে দায়ী করে সরকার বিবৃতি দিয়েছে। নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার ভাষণ প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতার মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। যার জেরে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ছয় মাস পূর্তির দিন ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে একদল উশৃঙ্খলা ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ শুরু করেন।
এর আগে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ থেকে ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ ও ‘বুলডোজার মিছিল’-এর ডাক দেওয়া হয়। রাত আটটা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ওই রাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ধানমন্ডি ৫ নম্বরে সুধা সদনে। সেটি শেখ হাসিনার স্বামী প্রয়াত এম এ ওয়াজেদ মিয়ার বাড়ি।এর পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কার্যালয়, দলটির কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের অর্ধশত ম্যুরাল ভাঙা হয়। এসব ঘটনা ঘটেছে ৩৫টির বেশি জেলায়। তবে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে ‘সরকারের বিবৃতিনির্ভর নির্লিপ্ততায়’ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গতকাল এক বিবৃতিতে ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিকে গণতান্ত্রিক উত্তরণ, সুশাসন ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করে এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সরকারের কার্যকর ভূমিকা অপরিহার্য বলে মনে করে টিআইবি।তিন দিন ধরে সংঘটিত এসব ঘটনা বন্ধে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বা নিতে পারেনি। এ নিয়ে নানা স্তরের মানুষের মধ্যে নানা রকম প্রশ্নও তৈরি হয়েছে।যদিও এ ধরনের ঘটনা থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গণমাধ্যমে প্রথম বিবৃতি পাঠান বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে। এতে বলা হয়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় বিবৃতি আসে। তাতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে যে কতিপয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সারা দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করছে। সরকার এ ধরনের কর্মকাণ্ড শক্তভাবে প্রতিহত করবে। সরকার নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রস্তুত। কোনো ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হলে দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাবে।
এ ধরনের হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এক বিবৃতিতে বলেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ন্যায্য হলেও আইনের লঙ্ঘন ন্যায্য নয়।এরপর গতকালও অন্তত জেলায় হামলার, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এদিন বেলা তিনটার দিকে প্রধান উপদেষ্টা আরেকটি বিবৃতি দেন। তাতে তিনি ‘দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশের সব নাগরিককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল হওয়ার’ আহ্বান জানান। বিবৃতিতে শেখ হাসিনার পরিবারের সম্পত্তি ধ্বংস থেকে বিরত থাকা এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি হওয়ায় কিংবা অন্য কোনো অজুহাতে দেশের কোনো নাগরিকের ওপর আক্রমণ না করারও আহ্বান জানান তিনি।
এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে ‘সরকারের বিবৃতিনির্ভর নির্লিপ্ততায়’ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল এক বিবৃতিতে ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিকে গণতান্ত্রিক উত্তরণ, সুশাসন ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করে এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সরকারের কার্যকর ভূমিকা অপরিহার্য বলে মনে করে টিআইবি।দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপিও দেশের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এক বিবৃতিতে বিএনপি বলেছে, সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর দলটি সারা দেশের নেতা-কর্মীদের জরুরি নির্দেশনা দিয়ে বলেছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোনো বিরোধী পক্ষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ম্যুরাল ভাঙচুরসহ কোনো হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে দলীয় নেতা-কর্মীরা যেন কোনোভাবে জড়িত না হন।গণসংহতি আন্দোলনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ক্ষোভ প্রকাশের এ প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে সুগম না করে বরং সেটিকে জটিল করে তুলতে পারে। এ রকম কর্মকাণ্ড সরকারের অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতিতে দিয়েছেন দেশের ২৬ বিশিষ্ট নাগরিক। তারা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনা-পরবর্তী বিবৃতি দিয়ে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।শুক্রবার রাতে গাজীপুরে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী বির মুক্তিযোদ্ধা আকম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা করতে গিয়ে প্রতিরোধের শিকার হয় উশৃঙ্খল ছাত্রজনতা। এলাকাবাসী মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাদের গণপিটুনি দেয়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন।