সিলেট নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন সওদাগরটুলা এলাকায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী মিতুল চন্দ্র দাস (৩৬), সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন—এমন অভিযোগে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষ। অভিযোগ উঠেছে, তিনি গত ৩১ আগস্ট ২০২৩ তারিখে তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট করেন, যা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে বলে স্থানীয় মুসল্লিদের দাবি।
পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হলে সওদাগরটুলাসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি কেবল ফেসবুকজুড়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং বাস্তব জগতেও এর প্রভাব পড়ে। স্থানীয় মুসল্লিরা অভিযোগ করেন, “এই পোস্ট ছিল পরিকল্পিত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা।”
এই উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ১ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার বাদ জুমা, সওদাগরটুলা এলাকায় বিশাল এক প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় মসজিদ থেকে শুরু করে শত শত মানুষ এতে অংশ নেন। সমাবেশে বক্তারা অভিযুক্ত মিতুল চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তারা বলেন, “ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতির বিরুদ্ধে এমন আক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে।”
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী মাহমুদ জানান: “অভিযুক্ত মিতুল চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সকলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাই।”
উত্তেজনাকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সওদাগরটুলা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) কর্তৃপক্ষ জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা সৃষ্টি না হয়।
অভিযোগ ওঠার পর থেকেই অভিযুক্ত মিতুল চন্দ্র দাস নিখোঁজ রয়েছেন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন রাতেই তিনি বাড়ি ত্যাগ করেন এবং এরপর থেকে তিনি পলাতক। তার মোবাইল ফোন বন্ধ, ফেসবুক অ্যাকাউন্টও ডিঅ্যাকটিভ করা হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মিতুল বর্তমানে প্রাণনাশের আশঙ্কায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের মতে, “এই ঘটনার পর মিতুলের পরিবারও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।” অনেকেই বলছেন, বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃতও হতে পারে, যার ফলে সংখ্যালঘু নিরাপত্তা আরো হুমকির মুখে পড়বে। সামাজিক মাধ্যমে দায়বদ্ধতা ও সংবেদনশীলতা
এই ঘটনাটি আরও একবার প্রমাণ করে দিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকলেও, সেটি যেন দায়িত্ব ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে ব্যবহৃত হয়। ধর্ম, সংস্কৃতি ও বিশ্বাস অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। একটি পোস্ট কখনোই শুধু একটি পোস্ট নয়—তা হতে পারে বিশাল উত্তেজনার জন্মদাতা, বিভাজনের উৎস।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে একে অপরের ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান করা সকল নাগরিকের দায়িত্ব। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আবার একইভাবে, কারো একটি ভুল পোস্টকে কেন্দ্র করে প্রাণনাশের হুমকি, হয়রানি বা বিতাড়নের সংস্কৃতি কখনোই সভ্য সমাজের পরিচয় নয়।
সওদাগরটুলার ঘটনাটি আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয়, ধর্মীয় অনুভূতি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মানবিক মূল্যবোধ, সহনশীলতা এবং আইনানুগ পথে সমস্যা সমাধান করাও জরুরি। সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে হলে প্রয়োজন দায়িত্বশীল আচরণ, ন্যায়বিচার এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষা নিশ্চয়তা।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ নিজাম উদ্দিন, নির্বাহী সম্পাদক : আইয়ুব আলী অফিস ; খান কমপ্লেক্স, সোনারপাড়া, শিবগঞ্জ, সিলেট। যোগাযোগ : প্রকাশক ও সম্পাদক : ০১৭৩৭-৩০৪৭৫১। ই-মেইল : sylhetbuletin@gmail.com
All rights reserved © 2025 sylhet buletin